❝কুরআনপ্রেমী এক মেয়ে এবং ফেরেশতাদের কান্না…❞

❝কুরআনপ্রেমী এক মেয়ে এবং ফেরেশতাদের কান্না…❞

উপসাগরের পার্শ্ববর্তী কোন এক দেশে, একটি দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে একটি মেয়ে পড়তো। মেয়েটি কুরআন কারীমকে খুবই ভালোবাসতো। সারাক্ষণই কুরআন কারীম তিলাওয়াত করতো। তার ভ্যানিটি ব্যাগে সবসময় একটা ছোট কুরআন কারীম থাকতো। 

 

সুযোগ পেলেই তিলাওয়াত করতো। বাসে বসে কুরআন তিলাওয়াত করতো। গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠেও কুরআন তিলাওয়াতে বসতো। তার তিলাওয়াতও ছিলো খুবই মিষ্টি-মধুর। পাষাণ হৃদয় ব্যক্তির মনটাও ভিজে উঠতো তিলাওয়াত শুনে। তার তিলাওয়াতে অভূতপূর্ব এক আকর্ষণ ছিলো। এভাবে দিন কাটছিলো। 

 

একবার মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়লো। অবস্থা ক্রমশঃ অবনতির দিকে যাচ্ছিলো। দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলো। কয়েকদিন পর মেয়েটা ইন্তিকাল করলো। দুঃখিনী মা শোকে পাথর হয়ে গেলেন। কিছুতেই সোনার টুকরো মেয়ের কথা ভুলতে পারছিলেন না। সুযোগ পেলেই মেয়ের কামরায় গিয়ে বসে থাকতেন। মেয়ের এটা-ওটা নাড়াচাড়া করে মেয়ের ছোঁয়া পেতে চাইতেন । ঘ্রাণ পেতে চাইতেন।

 

একদিন রাতে নিজের কামরায় ঘুমিয়ে আছেন। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো। নিশি রাতেই মেয়ের কথা মনে হলো। উঠে মেয়ের কামরার দিকে গেলেন। কাছাকাছি যাওয়ার পর শুনলেন, কামরার ভেতর থেকে কিছু একটার আওয়াজ আসছে। কান্নার মিহি আওয়াজ। করুণ সুর। একজন দুজন নয়, অনেকের। মা ভয় পেয়ে গেলেন। কামরায় প্রবেশ করলেন না। 

 

সকালে ঘটনাটা পরিবারের সবাইকে বললেন। কেউ বিশ্বাস করলো না। সবাই সেই কামরায় গেলো। সেখানে কিছুই পেলো না। শ্বশুর বললেন– বৌমা এটা তোমার মনের ভুল।

 

পরের রাতেও একই ঘটনা। স্বামীকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তাকেও কামরার কাছে নিয়ে শোনালেন। স্বামীও অবাক। পরদিন সকালে স্বামী-স্ত্রী মেয়ের কামরায় তন্নতন্ন করে খুঁজেও কিছু পেলো না। স্বামী পাড়ার মসজিদে গেলেন। ইমাম সাহেবকে বিষয়টা খুলে বললেন। সব কথা শুনে ইমাম সাহেব বললেন, আজ আমি আপনাদের সাথে থাকবো। যাচাই করে দেখবো, বিষয়টা আসলে কী?

 

সবাই চুপচাপ আরেক কামরায় বসে আছেন। আজ কী ঘটে দেখার জন্য। রাত যখন একটা বাজলো, তখনই সেই করুণ, মিহি আর অপূর্ব কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো। এমন সুর যে সবার কান্না পেয়ে গেলো। গা শিউরে উঠলো। রোম খাড়া হয়ে গেলো এই অপার্থিব আওয়াজ শুনে।

 

ইমাম সাহেব কেঁদে ফেললেন। তিনি বললেন: আল্লাহু আকবার! এটাতো ফেরেশতাদের কান্নার আওয়াজ। ফেরেশতারা প্রতি রাতে এই সময়, মেয়েটার তিলাওয়াত শুনতে আসতো। মেয়েটা বোধহয় প্রতি রাতেই এই সময়ে তিলাওয়াত করতো। আর ফেরেশতারা তন্ময় হয়ে শুনতো। এখন সেই তিলাওয়াত শুনতে না পেয়ে ফেরেশতারা প্রতিদিন তার শোকে কাঁদতে আসে। সুবহানাল্লাহ…!!!

 

— [কিতাবঃ গল্পের ক্যানভাসে আঁকা জীবন, মুহাম্মাদ Atik Ullah]

Leave a Comment