৭ টি পদ্ধতিতে শয়তান বান্দাকে আক্রমণ করতে আসে, যখনই বান্দা কোন নেক কাজ শুরু করে।

আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু কে?

 

শয়তান আমাদের নাম্বার ওয়ান শত্রু। যদি একটু মনোযোগ দিয়ে কুরআনে/হাদিসের শয়তান সম্পর্কে আয়াতগুলো পড়ি, মনে হবে শয়তান লিটারেলি আমাদের রক্তের পেছনে পড়ে আছে! শয়তান আমাদের আত্মা ছিঁড়ে ফেলার জন্য সব রকমের প্রস্তুতি নিয়ে বসে, অথচ তার মুখের কথা খুব মিষ্টি! 

 

এই শয়তান নিয়ে যত বেশি সচেতনতা দরকার, সেগুলো বাদ দিয়ে আমরা কেউ কেউ শয়তান নিয়ে ফাজলামি করি, আর কেউ কেউ নিজের দায়িত্ব এড়ানোর জন্য সব দোষ শয়তানকে দেই! অথচ শয়তান কিন্তু কিয়ামতের দিন আমাদের কারো দায়িত্ব নেবে না। 

 

আল্লাহর মুমিন বান্দাদের অন্তরে শয়তানের কোন প্রবেশাধিকার থাকে না। সে শুধু মিষ্টি কথায় ভোলানোর চেষ্টাটুকু করতে পারে, কিন্তু শয়তানের কোন ক্ষমতা নেই আমাদেরকে দিয়ে খারাপ কাজ করিয়ে নেয়ার। সেই দায়িত্ব পুরোপুরি আমাদের নিজেদের।

 

🔸কীভাবে শয়তানের মোকাবেলা করব?

 

৭ টি পদ্ধতিতে শয়তান বান্দাকে আক্রমণ করতে আসে, যখনই বান্দা কোন নেক কাজ শুরু করে। ইমাম গাজ্জালী (রহ.) চমৎকারভাবে এই ৭ টি পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন, এবং এগুলোর প্র্যাক্টিকাল সমাধান-ও দিয়েছেন আলহামদুল্লিলাহ: 

 

বান্দা যখন কোন নেক কাজ শুরু করতে যায়, শয়তান বান্দার কাছে এসে এই সাত ধরণের কথা বলার চেষ্টা করে,

 

🔴 ১/ প্রথমেই শয়তান বলবে, “তোমার এই নেক আমল করার প্রয়োজন নেই! কি সুন্দর মাত্রই নামাজ পড়ে এসেছ, আবার ঐদিন সাদাকাও করেছো… এখন ফেসবুক নিয়ে বসলেই হবে …”

 

এর বিপরীতে বান্দার রেসপন্স: “আমি তো জানি না কোন আমলের উসিলায় আমার জন্য জান্নাতের দরজা খুলবে, তাই আমার সব আমলেরই দরকার!”

 

🔴২/ এরপর শয়তান বলবে,  “আচ্ছা তোমার নেক আমলের দরকার, কিন্তু এখনই করার কি দরকার ! একটু পরে গিয়ে কর! তোমার তো সময় আছে!” Shaytan loves us procrastinating good deeds! এমনকি শয়তান হয়তো এখনই আপনাকে বলছে যে,‌ “আরে এত বড় পোস্ট, এখন-ই পড়ার কোন দরকার নাই, পরে পড়ো! পরে করো…”

 

এর বিপরীতে বান্দার রেসপন্স: “আমার “পরে” বলতে কিছু নেই। কেউআমাকে ১০০% গ্যারান্টি দিতে পারবে যে, আগামী পাঁচ মিনিট-ও আমি বেঁচে থাকব? মালিকুল মাউত যে মুহূর্তে আসবে, আমার কিয়ামত শুরু হয়ে যাবে। আমার কাছে “একটু পরে” বলে কিছু নেই!” 

 

🔴 ৩/ এই পর্যায়ে এসে শয়তান যখন দেখছে বান্দাকে নেক আমল করা থেকে থামানো যাচ্ছে না, সে চাইবে নেক আমলের কোয়ালিটি যেন খারাপ হয়। শয়তান বলা শুরু করবে, “তাড়াতাড়ি করো! তাড়াহুড়ো করে কোনোমত কাজটা করো, তোমার সংসারের এইটা পড়ে আছে, ঐটা আছে, রান্না আছে, কোর্সের পরীক্ষা আছে, জলদি জলদি করো ….” 

 

এর বিপরীতে বান্দার রেসপন্স: “ছোট্ট সামান্য আমল আমার ধীরে সুস্থে সুন্দরভাবে করাটা, অনেক অনেক আমল তাড়াহুড়া করে খারাপ ভাবে করার থেকে উত্তম! Quality over quantity! আল্লাহ ভালবাসেন অল্প আমল যেটা কোয়ালিটি, ইখলাস এবং নিয়মিত করা হয়! অতএব আমার কোন তাড়া নেই।”

 

🔴৪/ শয়তান এখন আমাদের নিয়তে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করবে। সে বলবে, “wow দেখো! সবাই দেখছে তুমি যে এত তাকওয়াবান মহাপুরুষ হয়ে গেছো! সবাই দেখছে তুমি কি পর্দাটাই না করছো, দাওয়াহ দিচ্ছো … ..”

 

এর বিপরীতে বান্দার রেসপন্স: “সবার দেখা না দেখার সাথে আমার কি যায় আসে? এরা কেউ কি কিয়ামতের দিন আমাকে সাহায্য করতে আসবে? কেউ কি বলবে যে, “এই যে আমার নেক আমল গুলো তোমাকে দিয়ে দিচ্ছি! তুমি এইসব নিয়ে জান্নাতে চলে যাও!” মা-বাবাই যেখানে সন্তানকে চিনবে না কিয়ামতের দিন, সেখানে মানুষের আমাকে দেখা দিয়ে আমি কি করবো? আল্লাহ আমাকে দেখছেন এটাই যথেষ্ট!”

 

🔴 ৫/ শয়তান নিয়ত নষ্ট করতে না পারলে এবার চেষ্টা করবেন বান্দার অন্তরে অহংকার ঢুকিয়ে দিতে। কারণ একবার সরিষার দানা পরিমাণ অহংকারও যদি ঢুকে যায়, এই বান্দার জন্য জান্নাতে প্রবেশ করা ভয়ঙ্কর কঠিন হয়ে যাবে। শয়তান বলবে, “তুমি এই সমস্ত বেদ্বীন মানুষদের থেকে কতই না ভালো! তোমার গৌরবে মাটিতে পা পরবেনা, সবার উচিত তোমাকে মাথায় তুলে রাখা…”

 

এর বিপরীতে বান্দা বলবে, “নেক আমলের তৌফিক আল্লাহর তরফ থেকে আসা উপহার! আল্লাহ আমাকে সুস্থ স্বাভাবিক শরীর, মগজ, এবং অন্তর না দিলে, আমার পক্ষে এক পা-ও আগানো সম্ভব না। তিনি দয়া করে আমাকে এই তাওফিক দিচ্ছেন। (অহংকার থেকে আত্মশুদ্ধির বিস্তারিত পোস্ট কমেন্টে)”

 

🔴 ৬/ এবার শয়তান বলবে, “.. হয়তো এখন মানুষ কি ভাবছে, সেটা নিয়ে তোমার মাথা ব্যাথা নেই, কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে গিয়ে মানুষ তোমার নেক আমল গুলো দেখে তোমাকে সবাই প্রচুর বাহবা দিবে! সবার প্রশংসা শুনতে তোমার কতই না ভালো লাগবে…” মানে শয়তান এখানেও হাল ছাড়বে না আপনার কাজটা আল্লাহর জন্য করার জায়গা থেকে সরিয়ে, মানুষের জন্য করতে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে … কারণ, নিয়ত খারাপ হয়ে গেলে আমল বিনষ্ট হবার আশঙ্কা!

 

এর বিপরীতে বান্দার রেসপন্স, “ভবিষ্যতে মানুষ আমার ব্যাপারে জানা দিয়ে কি যায় আসে? এরা কেউই কিয়ামতের দিন আমাকে বাঁচাতে আসবে না, বরং উল্টা আমাকে পারলে আক্রমণ করবে!  আমি কি মানুষের বাহবা পাওয়ার জন্য বেঁচে আছি? মানুষের জানা না জানা দিয়ে আমার কিছুই যায় আসে না বরং আল্লাহ রব্বুল আলামীন আদৌ আমাকে কবুল করলেন কিনা, ভালবাসলেন কিনা সেটা নিয়েই আমার সবচেয়ে বড় চিন্তা!”

 

🔴 ৭/ শেষ পর্যন্ত শয়তান যখন নিয়ত খারাপ করতে পারল না, অন্তরে অহংকার-ও ঢুকাতে পারল না, তখন সে পরের ভালো কাজটা করতে যাওয়ার সময় আবারও বান্দাকে বলবে, “আরে তুমি তো মাত্রই একটা ভালো কাজ করলে, এখন তো তোমার আরেকটা নেক আমলের দরকার নাই, বিরতি নাও …”

 

তখন বান্দার রেসপন্স হবে: “আমি একজন আল্লাহর দাস। আমার ক্যারিয়ার হচ্ছে: আমাতুল্লাহ/ আব্দুল্লাহ হওয়া, আমার প্রমোশন শেষ হবে জান্নাত পেয়ে, যদি আল্লাহ কবুল করেন। আমাকে পৃথিবীতে যে কাজ করতে পাঠানো হয়েছে, সেটা তো থামাতে পারিনা। I am a servant of Allah and I keep on serving …”

 

শয়তান প্রচন্ড ধৈর্যশীল, সে কখনো থামবে না! 

এই চক্র চলতে থাকবে কিয়ামত দিবসের আগ পর্যন্ত, এবং আলহামদুলিল্লাহ বিশ্বাসীরাও শয়তানকে এভাবেই ঘোরাতে থাকবে। শয়তান এবং শয়তানের বাহিনীদেরকে পরাজিত করতে থাকবে মুমিনরাও ইনশাআল্লাহ, কিয়ামত দিবসের আগ পর্যন্ত।

 

“নিশ্চয় আমার প্রকৃত বান্দাদের উপর তোমার(শয়তানের) কোন ক্ষমতা নেই, তবে পথভ্রষ্টরা ছাড়া যারা তোমাকে অনুসরণ করেছে’ 

(সূরা আল-হিজর: ৪২)

 

___এই সাতটি পদ্ধতি এবং কৌশল গুলো ইমাম গাজ্জালী (রহ) এর কাজ থেকে নেয়া

©SSA

Leave a Comment