নিজের পছন্দের মেয়েটিকে পটাতে নানা রকমের কৌশল অবলম্বন করে ছেলেরা। অবশেষে সেই পছন্দের মেয়েটি হয়তোবা পটেও যায়। প্রেম, ভালোবাসা এমনকি শারীরিক সম্পর্কও গড়ে ওঠে তাদের মধ্যে। এরপর পরিণতি কারও সুখের হয়; কারও বা দুঃখের। কিন্তু এমন এক অপরাধী রয়েছেন।
যিনি কোনো মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে বা তার যৌন লালসা মেটাতে সেই মেয়েটির সাথে প্রেম করার চেষ্টা করে না। বরং ওই মেয়েটির বাবা-মা অথবা অন্য কোনো অভিভাবকের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে। এরপর তাদের মাধ্যমেই ওই মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্কে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ফেলে।
অবাক করা বিষয় হলো- সংশ্লিষ্ট অভিভাবকেরাই ওই মেয়েটির সাথে সেই অপরাধীর শারীরিক সম্পর্কের ব্যবস্থা করে দিতেন। তবে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীর বাবা-মা নিজের মেয়ের সাথে এমনটা করতে দিতে চাননি। নিজের মেয়ের ক্ষতি করতে রাজি হননি বাবা-মা। আর সে কারণেই তাদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ওই অপরাধী। শুধু তাই নয়, বাবা-মাকে হত্যার পর ওই ১৪ বছর বয়সী কিশোরীকে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায় সেই অপরাধী।
অনেক দিন পালিয়ে থাকার পর অবশেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) গোপালগঞ্জ জেলা ইউনিটের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে সেই ভয়ংকর অপরাধী। গ্রেপ্তারকৃতের নাম- আশরাফুল মোল্লা (৩৮)। নড়াইল জেলার থানা এলাকা থেকে গত ২২ এপ্রিল তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিও দিয়েছেন তিনি।
আদালতে প্রদান করা সেই জবানবন্দি ও মামলা সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে ।
পুলিশ সূত্রে খবর, ৮ ই এপ্রিল মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার মতে, নিহত মোয়াজ্জেম সরদার (৫০) এবং মাকসুদা বেগম (৪৫) ৫ এপ্রিল রাতে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়েছেন। তার জামাতা এমরান সরদার (৩০) বাদী হয়ে কালকিনি থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পরে ৮ এপ্রিল নিখোঁজ দম্পতির লাশ স্থানীয়রা তাদের বাড়ি থেকে প্রায় আড়াইশ গজ দূরের একটি নির্জন জায়গায় খুঁজে পেয়েছিল। খবর পাওয়ার পরে কালকিনি পুলিশ লাশের তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে এবং মৃত কারণের সন্ধানের জন্য ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেছে।
মামলাটি পিবিআই গোপালগঞ্জ তার নিজস্ব উদ্যোগে গ্রহণ করে এসআই (এন) আল আমিন শেখের হাতে সোপর্দ করে। পরে এসআই (এন) মো। আল আমিন শেখ তার সহযোগী বাহিনী নিয়ে ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এই মামলার প্রধান আসামি ৩৮ বছর বয়সী আশরাফুল মোল্লাকে গ্রেপ্তার করে।
‘মেয়েকে ধর্ষণের জন্য পিতামাতাকে হত্যা করা’: মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে ২ March শে মার্চ অভিযুক্ত মোয়াজ্জেম সরদার কৃষক কাজ করতে ফরিদপুর কৃষ্ণ (শ্রমিক) হাট থেকে আশরাফুল মোল্লা ও ভোলাराव নামে দুই শ্রমিককে বাড়িতে এনেছিলেন।
নিহত মোয়াজ্জেম সরদার তাদের মেয়ে আনতানুর (১৪) ও নুসরত (৬)) নিয়ে বাড়িতে বাস করতেন। মোয়াজ্জেম সরদার বাড়িতে কাজ করতে যাওয়ার পর থেকে অভিযুক্ত আশরাফুল মোল্লার তাদের মেয়ে আন্তানুরের প্রতি তার দৃষ্টি ছিল।
অভিযুক্ত আশরাফুল মোল্লা যখনই অতিরিক্ত সময়ে সুযোগ পেতেন তখন আন্তানুর (১৪) এর সাথে কথা বলতেন এবং তার সাথে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করতেন।
বিষয়টি মোয়াজ্জেম সরদারের চোখে; তারপরে অভিযুক্ত আশরাফুল মোল্লা নিজেই তার পছন্দ সম্পর্কে আন্তনুরকে অবহিত করেন। মোয়াজ্জেম ইচ্ছাকৃতভাবে আশরাফুলকে তার মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আন্তনুরের সাথে কথা বলতে নিষেধ করেছিল।
তবে বিকৃত আশরাফুল মোল্লা আন্তানুরের প্রতি তার যৌন লালসা মেটাবার সুযোগের সন্ধান করতে থাকে এবং মনে মনে পরিকল্পনা করেছিল যে সে রাতে আন্তানুরের বাবা-মাকে মেরে ফেলবে এবং সেই রাতে তাকে আন্তানুরের বাড়িতে প্রবেশের ব্যবস্থা করবে।
পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, আশরাফুল মোল্লা তার আগের পরিকল্পনা অনুসারে মোয়াজ্জেম সরদারকে প্রথমে ৫ এপ্রিল রাতে নিজ শহর থেকে প্রায় আড়াইশ গজ দূরের নির্জন জায়গায় ডেকে নিয়ে গলায় তোয়ালে জড়িয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে একই কৌশলটি ব্যবহার করে তিনি স্ত্রী মাকসুদা বেগমকে একই জায়গায় ডেকে একই তোয়ালে দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। রাতের কয়েক মিনিট পরে আশরাফুল মোল্লা ঘরে ঢুকে নাবালিকা আন্তানুরকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়।
‘আশরাফুল ভুয়া পরিচয় দিয়েছে’: আশরাফুল মোল্লাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে পিবিআইয়ের গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোঃ আবুল কালাম আজাদ দৈনিক আমাদের সময়কে বলেছিল, ‘গ্রেপ্তার আসামি আশরাফুল মোল্লা (৩ 36) এরই মধ্যে বিভিন্ন মহিলার সাথে যৌন সম্পর্কের প্রলোভন দেখিয়েছে। সেনা গোয়েন্দা সংস্থার ভুয়া পরিচয়ের আওতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অভিভাবকরা।
তিনি আরও বলেন, আশরাফুল মোল্লার বিরুদ্ধে যশোর, নড়াইল ও রাজশাহীতে ৫ টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
‘দ্বিতীয় স্ত্রীর বাড়িতে অন্য মহিলার ধর্ষণ’: ভয়াবহ অপরাধী আদালতে বিবৃতিতে বলেছিল যে তার প্রথম স্ত্রী তাকে রেখে গেছে। তারপরে তিনি দ্বিতীয়বার বিয়ে করলেন। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীর বাড়ি যশোরে ছিল।
আশরাফুল যশোরের শ্বশুরবাড়ির এলাকার এক কলেজ ছাত্রের সাথে পরিচয় হয়। মেয়েটির সাথে তার শারীরিক সম্পর্কও ছিল।
পরে আশরাফুলের আগের সমস্ত অপকর্ম সম্পর্কে জানার পরে ওই কলেজে অধ্যয়নরত মেয়েটিও তার বিরুদ্ধে যশোর আদালতে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেছিল। এছাড়াও খুলনা দামুরিয়া শাহজানপুর এলাকায় এক মহিলা ভুল বোঝে এবং তার মেয়ের সাথে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে।
তারপরে তিনি ওই কিশোরীর সাথে সহবাস করেন এবং সেখান থেকে পালিয়ে যান। এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে সমস্ত মামলা দায়ের করা হয়েছে। নড়াইল ও রাজশাহীর দুটি মামলায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আশরাফুল এমনকি কারাগারেও কাজ করেছেন। তিনি জেল থেকে মুক্তি পেয়ে আবার একই রকম অপরাধে জড়িত।
‘২৫ জন মহিলার সাথে শারীরিক সম্পর্ক’: তদন্তের সাথে জড়িত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছিলেন যে, আশরাফুল মোল্লা সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার ভুয়া সদস্য হয়ে পোস্ট করে অনেক মেয়ের বাবা-মায়ের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। তখন আমি তাদের মেয়েকে বিবাহ করার প্রস্তাব দেব। প্রমাণ হিসাবে তিনি মেয়েদের পিতামাতাকে সেনাবাহিনীর ইউনিফর্মে তৈরি কিছু ছবি দেখান।
ফলস্বরূপ, অনেক বাবা-মা সহজেই রাজি হন। তখন সেই মেয়েটির সাথে তার শারীরিক সম্পর্কের জন্য একটি সুযোগ তৈরি হয়েছিল।
অনেক ক্ষেত্রেই মেয়েটির মা-বাবার বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে কেবিন ছাড়াই ইসলামিক উপায়ে বিয়ে করার ভান করে আশরাফুল তার যৌন আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে পালিয়ে গেছেন।
পরে মেয়েটির পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য জনসাধারণের বিব্রত হওয়ার ভয়ে থানায় যান বা কোনও অভিযোগ করেননি। তবে আশরাফুলের নামে বিভিন্ন থানায় বিভিন্ন মামলা হয়েছে।
পিবিআই গোপালগঞ্জ জেলা উপ-পরিদর্শক এসআই মো। আল-আমিন শেখ ডেইলি আমাদের সময়কে বলেছিল, “গ্রেপ্তার আসামি আশরাফুল মোল্লা (৩৮) শুক্রবার আদালতে ১৬৪ ধারায় একটি বিবৃতি দিয়েছে।” তার বিরুদ্ধে আরও বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।