স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদে ভূমিকা ছিল সন্দেহে মা-মেয়েকে গলা কেটে হত্যা

গাজীপুর আলোচিত মা-মেয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার গাজীপুরের কালীগঞ্জের আজমতপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার সালদিয়া গ্রামের ছাত্তার খানের ছেলে জাহিদুল ইসলাম খান (২১) এবং একই এলাকার মনির হোসেনের ছেলে মো. মহিউদ্দিন ওরফে বাবু (৩৫)।

শনিবার সকালে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ-জিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) মো. জাকির হাসান।

তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে ফেরদৌসী (৩০) ও তার শিশু কন্যা তাসমিয়ার (৫) লাশ নগরীর দেশীপাড়া বিমান বাহিনীর টেক এলাকা থেকে গলাকাটা অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে জাকির হাসান বলেন, দুই সন্তানের জননী ফেরদৌসী। সন্তানের সুখের জন্য প্রথম স্বামীকে ছেড়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সংসারের সচ্ছলতার জন্য চাকরি করেন একটি বীমা কোম্পানিতে।

নিজের ভাতিজির সংসারের সুখের কথা চিন্তা করে অনেক দেন-দরবার করে একই প্রতিষ্ঠানে ভাতিজি লিমাকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন ফেরদৌসী। এ চাকরি পাইয়ে দেওয়াটাই তার জন্য কাল হলো।

জিএমপির এই কর্মকর্তা জানান, চাকরি পাওয়ার পর লিমা তার স্বামীর সঙ্গে বিয়েবিচ্ছেদ ঘটান। আর স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের এ ঘটনায় ইন্ধন দিয়েছেন ফেরদৌসী এমন সন্দেহে নগরীর দেশীপাড়া এলাকায় মা ফেরদৌসী ও তার শিশু কন্যাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়।

তিনি আরও জানান, নিহত ফেরদৌসী গার্ডিয়ান ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করতেন। প্রতিষ্ঠানে তার সুনাম থাকায় তিনি গ্রেপ্তার আসামি বাবুর স্ত্রী লিমাকে একই কোম্পানিতে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন।

জাকির হাসান বলেন, চাকরি পাওয়ার পর বাবুর সঙ্গে লিমার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এ ঘটনায় বাবু ফেরদৌসীকে দায়ী মনে করেন। এ কারণে প্রতিশোধ নিতে তিনি ফেরদৌসীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। আর এ কাজে তার সহযোগী হিসেবে ফেরদৌসীর পূর্বপরিচিত ও বীমা গ্রহীতা জাহিদুল ইসলাম খানকে বেছে নেন।

তিনি বলেন, ঘটনার দিন গত ২৪ নভেম্বর বিকেলে জাহিদুল ইসলাম ফেরদৌসীকে ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে নতুন একজনকে দিয়ে আরও একটি বীমা করিয়ে দেবে এই কথা বলে গাজীপুর মহানগরীর সদর থানাধীন দেশীপাড়া এলাকায় আসতে বলেন। পরে ফেরদৌসী ওই দিন সন্ধ্যার পরে নির্দিষ্ট জায়গায় জাহিদুলের সঙ্গে দেখা করতে যায়। এ সময় তার সঙ্গে পাঁচ বছর বয়সী শিশু তাসমিয়া ছিল।

জিএমপির এই কর্মকর্তা জানান, ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর ফেরদৌসী কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই জাহিদুল ও বাবু উভয়ে তার গলায় ছুরি দিয়ে পৃথকভাবে দুটি আঘাত করেন। এতে ফেরদৌসী মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

এ সময় সঙ্গে থাকা মেয়ে তাসমিয়া ঘটনা দেখে ফেলায় এবং কান্নাকাটি শুরু করলে জাহিদুল শিশু তাসমিয়ার গলায় ছুরি দিয়ে আঘাত করেন এবং একটি মোটরসাইকেলে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।

এ ব্যাপারে নিহতের ভাই ইজ্জত আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

জাকির হাসান জানান, এই হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কালীগঞ্জ উপজেলার সালদিয়া নিজ বাড়ি থেকে প্রথমে জাহিদুলকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় জাহিদুলের হাতে কাটা দাগ দেখতে পাওয়া যায়।

জাহিদুল ঘটনা স্বীকার করেন এবং তার সহযোগী বাবুর নাম প্রকাশ করেন। পরে বাবুকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে করা হয়।

দুজনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কালীগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালিয়া এলাকায় একটি পুকুর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি ছোরা এবং পালিয়ে যাওয়ার কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। শনিবার গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।

Leave a Comment