সংসদে বিতর্ক, জিয়ার কবর নিয়ে

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক এবার গড়াল জাতীয় সংসদে। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়নের আলোচনায় বিএনপির সদস্যদের সঙ্গে এ বিষয়ে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর বিতর্ক হয়।

একটি বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে এ বিতর্কের সূত্রপাত করেন বিএনপিদলীয় সাংসদ হারুনুর রশীদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে মন্ত্রী ও সাংসদেরা বলছেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধাই নন, তিনি পাকিস্তানের দোসর। হারুন আরও বলেন, জিয়াউর রহমান জেড ফোর্সের কমান্ডার ছিলেন। প্রথম, তৃতীয় ও অষ্টম ব্যাটালিয়নে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। সরাসরি মাঠে যুদ্ধ করেছেন। স্বাধীনতার সময় যে সেক্টর কমান্ডাররা বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধে করেছেন, তাঁদের মধ্যে জেড ফোর্সের ২৮৭ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। এই সেক্টরের দুজন বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি পেয়েছেন।

এ বক্তব্যের জবাবে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, জিয়াউর রহমান যত দিন ক্ষমতায় ছিলেন, বাংলার বাণীর কোনো কপি আর্কাইভে রাখা হয়নি। বহু তথ্য–উপাত্ত তারা সরিয়েছে। কে এম খালিদ বলেন, ‌‘সংসদ ভবন নিয়ে লুই কানের যে নকশা, সেখানে কোথায় রয়েছে যে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের লাশ দাফন করতে হবে? সেখানে লাশ আছে কি না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বেগম জিয়া স্বামী মনে করে কাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান? তাঁরই উচিত এ প্রশ্ন করা, ওনার স্বামীর লাশ সেখানে আছে কি না? বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে নির্ণয় করা উচিত। আপনারা দলের নেতা ভেবে কাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন? ওখানে কি কারও মৃতদেহ আছে? নাকি অন্য কারও মৃতদেহ আছে?’

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা (বিএনপি) নিরপেক্ষ একটা কমিটি করেন। সরকার সহযোগিতা করবে। সত্য উদ্‌ঘাটনে ভয়ের কী আছে? আপনাদের দলের নেত্রীকে বলেন, যদিও তিনি সাজাপ্রাপ্ত। প্রধানমন্ত্রীর অনুকম্পা নিয়ে, সাজা স্থগিত নিয়ে বসবাস করছেন। আইনের সুযোগ থাকলে তাঁর নেতৃত্বে কমিটি করেন।’

পরে এই বিলের সংশোধনীর আলোচনায় অংশ নিয়ে হারুন বলেন, ‘পরনিন্দা, বিষোদ্‌গার ভালো নয়। সংসদের লবিতে পবিত্র কোরআনের আয়াত লেখা আছে, “তোমরা জানা সত্ত্বেও সত্য গোপন করিও না এবং সত্যের সঙ্গে মিথ্যা মিশ্রিত করিও না”।’ তিনি আরও বলেন, ১৯৭৯ সালে সংসদ ছিল, সে সংসদে আওয়ামী লীগের ৩৯ জন ছিলেন। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জিয়াউর রহমানের জানাজায় তাঁরা উপস্থিত ছিলেন। সংসদে শোকপ্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল। জিয়াউর রহমানের লাশের পোস্টমর্টেম হয়েছে, সামরিক ট্রাইব্যুনালে বিচারও হয়েছে। এগুলো সত্য ঘটনা। অহেতুক কথা বলে সময় নষ্ট করার দরকার নেই। তাঁর এ বক্তব্যের সময় সরকারি দলের অনেক সদস্য হইচই করে প্রতিবাদ জানান।

বিএনপি থেকে সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ রুমিন ফারহানা বলেন, আফ্রিকান একটা প্রবাদ আছে, সিংহ যদি ইতিহাস লেখতে পারত, তাহলে প্রতিটি বিজয়গাথা শিকারির হতো না। সিংহেরও বিজয়গাথা থাকত। মুশকিল হলো, সব সময় ইতিহাস লেখে জয়ীরা। তিনি আরও বলেন, এত বড় সংসদে মাত্র দু–তিনটা বিরোধী কণ্ঠ শোনা যায়। সে সময়ও সরকারি দলের সাংসদেরা অসহিষ্ণু আচরণ করেন। তিনি বলেন, আর্কাইভ করতে হলে স্বীকার করতে হবে জিয়াউর রহমান ছিলেন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা, বীর উত্তম, সেক্টর কমান্ডার। সরকারের ব্যর্থতা, ভোট চুরি, গণতন্ত্রহীনতা, লুটপাট থেকে মানুষের দৃষ্টিকে অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য এই বিতর্ক করা হচ্ছে।

রুমিনের বক্তব্যের সময়ও সরকারি দলের সাংসদেরা প্রতিবাদ করেন।

এসব বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে রুমিনের দিকে ইঙ্গিত করে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, জন্মের পর মুখে কিছু মধু দেওয়া হয়। কারও কারও মুখে মনে হয় পিতা-মাতা দিতে ভুলে গেছেন। অত্যন্ত একজন বক্তার ব্যাপারে তিনি এটা নিশ্চিত করেই বলতে পারেন। তিনি বলেন, মৃত্যুর ৪০ বছর পর সঠিক ইতিহাস বেরিয়ে এলে সমস্যা কোথায়। জিয়াউর রহমানের লাশ আছে কি নেই, প্রমাণ করতে সমস্যা কী।

আইন প্রণয়ন কার্যাবলি শেষে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে সরকারি দলের সাংসদ শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের লাশ নেই, সেটা ৪০ বছর আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি ১৯৮১ সালের ২০ জুন জাতীয় সংসদে বলেছিলেন জিয়ার লাশের ছবি প্রকাশ করতে। কিন্তু তা করতে পারেনি। স্পিকারকে উদ্দেশ করে শেখ সেলিম বলেন, ‘ওখানে যে বাক্সটা আছে, তা সরিয়ে লুই কানের নকশা বাস্তবায়ন করেন।’

Leave a Comment