শাবান মাসের করণীয়

।।এটি শাবান মাস।।

শাবান মাস নিজেদেরকে গোছানোর মাস। ভেঙে সাজিয়ে নেওয়ার মাস।

দুনিয়াবী কতশত ফাহেশা কাজের জন্য প্রস্তুতি নেই আমরা। ক্রিকেট মাঠে গড়ানোর আগে নেট প্র‍্যাকটিস, ফুটবল উপভোগ্য করার আগে বিহাইন্ড দ্য ক্যামেরায় কত রকমের ট্যাকটিস।  জাগতিক বিষয়াদিতে মনোযোগ আর গোলযোগ করার প্রবণতা যেন বেড়েই চলেছে। কবিতা আবৃতির মঞ্চে দাঁড়ানোর আগে আয়নার সামনে কতবার যে অনুশীলন করা হয়েছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। নিজেকে ফিটফাট রাখতে সকালের সোনা রোদে কয়েকশবার লেফট-রাইট করা হয়েছে তা-ও গোনা হয়নি কোনদিন।
.
শুনেছি ক্রিকেটার কপিল দেব নাকি কোনদিন ইঞ্জুরিতে পড়েননি। একবার তার স্ত্রীকে কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন, “আমি কোনদিন শেষ রাতে বিছানা হাতরিয়ে তাকে খুঁজে পাইনি।”
উনি বোঝাতে চেয়েছেন – তার স্বামী সে সময় জগিং-এ বের হত, প্র‍্যাক্টিস করত, ক্রিকেট ম্যাচের জন্য ফিট হত।”
.
এই যে উসাইন বৌল্ট, মিখাইল ফেলপ্স, মেসি-রোনাল্ডো, ফেদেরারদের দুনিয়াবী জয়জয়কার – খোঁজ নিয়ে দেখুন এদের এই ভেল্কিবাজির পিছনে অদেখা সময়গুলি কত ত্যাগের, কত ডেডিকেশানের। নিজেকে একদিনে এখানে আনতে পারেনি এরা। প্রতিটি সিজনের জন্য কসরত, শারীরিক পরিশ্রম, কঠোর প্রচেষ্টায় তারা প্রস্তুত হয়েছে দিনকে দিন।
এ গেল দুনিয়াদারদের গপ্প, দৌরাত্ন আর লম্ফঝম্প।
.
ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যা বলতে চাচ্ছিলাম, এবার সে আলাপেই যাই –
ঈমানদার আর দ্বীনদারদের জন্য সূবর্ণ সুযোগ এসে গেছে আল’হামদুলিল্লাহ। এসেছে শাবান। পবিত্রতম মাস। ফদ্বিলতের মাস। আসন্ন রমাদ্বানে গুনাহর জংগল পোড়ানোর জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে ফিট হওয়ার মাস। ঈমানদারদের নেট প্র‍্যাক্টিসের মাস, অনুশীলনের মাস। রমাদ্বানের সিয়াম আর ক্বিয়ামের জন্য নিজেকে একদম ফিট করে আল্লাহর জন্য রেডী হওয়ার মাস। বিহাইন্ড দ্য ক্যামেরার মাস।
.
উম্মুল মু’মিনীন আইশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ‎ﷺ যখন (নফল) সিয়াম রাখতে শুরু করতেন তখন আমরা বলতাম, তিনি সিয়াম রাখা আর বাদ দিবেন না। আবার যখন সিয়াম বাদ দিতেন তখন আমরা বলতাম, তিনি আর সিয়াম করবেন না। তবে তাঁকে রমাদ্বান ছাড়া পরিপূর্ণভাবে অন্যকোন মাসে সিয়াম রাখতে দেখিনি এবং শাবান মাসের চেয়ে অন্য কোন মাসে এত বেশি সিয়াম রাখতে দেখিনি।” [১]
.
উসামা বিন যায়েদ (রা.) রাসূল ‎ﷺ কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে শাবান মাসে যে পরিমান সিয়াম পালন করতে দেখি অন্য মাসে তা দেখি না। এর কারণ কী? তিনি ‎ﷺ বললেন, “রজব এবং রমাদ্বানের মধ্যবর্তী এ মাসটি সম্পর্কে মানুষ উদাসীন থাকে অথচ এটি এতো গুরুত্বপূর্ণ মাস যে, এ মাসে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে মানুষের আমলসমূহ উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি চাই সিয়াম অবস্থায় আমার আমল উঠানো হোক।”[২]
.
এই হল শাবান মাসের সিয়ামের গুরুত্ব নিয়ে দু’টি হাদীস।
তাহলে আমাদের করণীয় কি?

১। আজকে শুক্রবার। আগামীকাল শনিবার। শনিবার রাতে সাহরী খেয়ে রবিবারে সিয়াম, এভাবে টানা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ইন শা আল্লাহ্‌। মাঝখানে শুক্রবার ও শনিবার বিরতি দিয়ে আবার আগামী সপ্তাহে রবি থেকে বৃহঃ এভাবে দ্বিতীয় সপ্তাহেও চলতে পারে ইন শা আল্লাহ!

২। কারো যদি বিশেষ কোন কারণে গত রমাদ্বানের সিয়াম ছুটে যায় তবে সে তা শাবান মাসে কাযা করে নিতে পারে। যেমন, আবু সালামা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রা.) কে বলতে শুনেছি, “আমার রমাদ্বানের কিছু সিয়াম বাকি থাকত। সেগুলো আমি শাবান ছাড়া কাযা করতে পারতাম না”।[৩]
.
৩। শাবানের প্রথমদিকে শুরু করলে মাসের শেষ পর্যন্ত এই নিয়মে সিয়াম রাখা যেতে পারে। কিন্তু প্রথমে শুরু না করলে শেষের দিকে আর সিয়াম পালনের দরকার নেই। কেননা আবু হুরায়রা (রা.) হতে বণির্ত, রাসূল ‎ﷺ বলেছেন: “শাবান মাস অধের্ক হয় গেলে তোমরা রোযা রাখিও না।”[৪]
(তবে অভ্যাসগত সাপ্তাহিক সিয়াম ও ফরজ সিয়ামের কাযা আদায়, এই হাদীসের আওতাভূক্ত নয়, সেগুলি চলতে থাকবে বি-ইযনিল্লাহ)
.
৪। শাবানের সিয়াম হোক আমাদের নেট প্র‍্যাক্টিস – যেন সামনের মাসে কোনরকম ইঞ্জুরি ছাড়াই বরকতময় ত্রিশটা সিয়াম পালন করতে পারি। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে আর-রাইয়ান দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বাল!
.
৫। এমনও হতে পারে এ বছরের রমাদ্বান পর্যন্ত আমার হায়াত নেই, তার আগেই হয়তঃ আমাকে রবের ডাকে সাড়া দিয়ে অনন্তকালের পথ পাড়ি দিতে হবে। সেক্ষেত্রে শাবানের এই সিয়াম পালন আমার নাজাতের কারণ হতে পারে । একবেলা না খেয়ে থাকা আর কিছু আহকাম মেনে নিয়ে যদি নাজাত পেয়ে যাই, কাঙ্ক্ষিত জান্নাত করি কামাই – সেটাই বা কম কীসের?
.
৬। যদি কেউ শাবান মাসে যাকাত দিতে চান সেটাও উত্তম হবে ইন শা আল্লাহ। যাকাতের হক্বদারেরা যাকাতের টাকা পেয়ে রমাদ্বান মাসে নিশ্চিন্তে আমল করতে পারবে। গুনাহ মাফের মাসে তাদের পরিশ্রম হউক শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য।

২য় অংশ

.
শাইখ আহমাদ উল্লাহ (হাফিজাহুল্লাহ) তিন লাইনে খুব চমৎকার সামারি টেনেছেন। তিনি বলেছেন,
– রজব, বীজ বপনের
– শা’বান, পানি সিঞ্চনের
– রমাদ্বান, ফসল কাটার মাস।
তাউফীক দাও হে রাব্ব।
.
কাজেই চলুন,
পানি সেচি বেশী বেশী,
হাসিল করি রব্বের খুশি।।
.
__
তথ্যসূ্র:
১। বখারী, কিাবুস্‌ সওম। মুসলিম, কিতাবস সিয়াম।
২। মুসনাদ আহমাদ ৫ম খন্ড ২০১ পৃষ্ঠা। সুনান নাসাঈ, কিতাবুস সিয়াম।
৩। বুখারী, কিতাবুস-সাওম। মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম। ইয়াহয়া বলেন: এর কারণ ছিল তিনি রাসূল ﷺ সেবায় ব্যস্ত থাকতেন।
৪। মুসনাদে আহমাদ (২/৪৪২), আবু দাউদ, অনুচ্ছেদ এমনটি করা অর্থাৎ অবচ্ছিন্নিভাব শাবান ও রমাদ্বান সিয়াম পালন করা অনুচতি।

– রাজিব হাসান

Leave a Comment