লকডাউনে ভোগান্তি কর্মজীবী মানুষদের

মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সারাদেশে আজ মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে লকডাউন। সোমবার থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের প্রথম দিন চলেছে ঢিলেঢালাভাবে। বিভিন্ন সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি রিকশা ও অটোরিকশার জট দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা মার্কেট খোলা রাখার জন্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আন্দোলনও করেছেন।

কাঁচাবাজার ও অলিগলির চেহারা ছিল স্বাভাবিক। কেবল বিমান, ট্রেন, দূরপাল্লার বাস এবং বড় নগরীগুলোতে গণপরিবহন বন্ধ ছিল। কিন্তু অন্যান্য যানবাহন স্বাভাবিকভাবেই চলেছে। অফিস-আদালত ছিল খোলা। তবে উপস্থিতি ছিল কিছুটা কম। কয়েকটি এলাকায় স্বল্প দূরত্বের গণপরিবহনও চলেছে। যথারীতি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের চিত্র ছিল হতাশাজনক।

তবে দ্বিতীয় দিনের লকডাউন কিছুটা কঠোর হলেও গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে পোশাক শ্রমিক ও কর্মজীবী মানুষদের। লকডাউনের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর বাসস্ট্যান্ডগুলোতে অফিসগামী মানুষদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। অনেকেই গন্তব্যে পৌঁছাতে বেশি ভাড়া দিয়ে রিকশা ঠিক করছেন। এখন রাজধানীবাসীর একমাত্র ভরসা এই রিকশায়।

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আসাদগেট, ধানমন্ডি, কলাবাগান, সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। কঠোর বিধিনিষেধের ফলে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকায় রিকশার চলাচল বেড়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

অনেকের অফিস খোলা থাকায় বাইরে যেতে হচ্ছে। আবার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে বা ওষুধের জন্যও কেউ কেউ বের হচ্ছেন। এদের অনেকেই বয়স্ক বা রোগী। তাদের পক্ষে দীর্ঘ পথ হেঁটে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই পুলিশ বিষয়টি সহজভাবেই দেখছে।

মোহাম্মদপুরের আজিজ মোহল্লা থেকে রিকশায় করে ধানমন্ডি ৭ নম্বরে যাচ্ছিলেন মোহাম্মদ রাইহান খান নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বলেন, অফিস খোলা রেখেই গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখার মতো অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের ফলে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। গাড়ি চলছে না। তাই বাধ্য হয়েই রিকশায় যেতে হচ্ছে। কষ্ট যত আমাদের মতো কর্মজীবী মানুষদের।

রিকশার চাহিদা বেশি থাকায় রিকশাচালকরা ভাড়া বেশি নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রাইহান খানের। তিনি বলেন, আগে মোহাম্মদপুর থেকে ধানমন্ডি ৭ এ যেতে ৬০ টাকা রিকশা ভাড়া লাগতো। এখন রিকশা চালকরা ১২০-১৫০ টাকাও চাইছেন। এতো বেশি ভাড়া দিয়ে কিভাবে যাবো?

তবে বেশিরভাগ রিকশাচালকই অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের মতে, গণপরিবহন বন্ধ থাকার পরও যাত্রীদের যেভাবে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিচ্ছেন তাতে একটু বেশি ভাড়াই ন্যায্য। নজরুল ইসলাম নামে এক রিকশাচালক বলেন, আমরা লকডাউনে ঢাকায় থেকে মানুষের উপকার করছি। আর এই অবস্থায় সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। একটু বেশি টাকা না দিলে আমাদের সংসার চলবে কীভাবে?

এদিকে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, দেশের বৃহৎশিল্প মালিকরা করোনা মোকাবেলায় সরকারের নানামুখী সুবিধা পেয়ে থাকে। কিন্তু সারাদেশে যে লক্ষ লক্ষ ছোট মাঝারি শিল্প ও দোকানপাঠ রয়েছে তাদের খোঁজ কেউ রাখে না। গত বছর রমজানের আগে এসব ব্যবসায়ীরা কঠিন ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অনেকের পুঁজি অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। তবে তিনি মনে করেন, এভাবে আন্দোলন করে সমস্যার সমাধান হবে না। এতে করোনা ঝুঁকি বাড়বে। তিনি সবাইকে ধৈর্য ধরার আহবান জানান।

Leave a Comment