রমাদানের প্রস্তুতি-১

পরীক্ষা আমরা কিভাবে দেই? না, পরীক্ষার কথা থাক। মাসখানেকের জন্য কোথাও বেড়াতে গেলে আমরা কিভাবে যাই? হঠাৎ বেরিয়ে পড়ি কি? আর যদি তাই করি, বিনা প্রস্তুতিতে, তাহলে সেই এক মাসে কী কী অসুবিধা হতে পারে, সেটা সহজেই আমরা কল্পনা করতে পারি। জীবনের বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্যই পূর্ব প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। কাউকে দাওয়াত খাওয়ানো হোক, কোথাও যাওয়া হোক, চাকরির ইন্টারভিউ হোক, হোক কোন পরীক্ষা। এমনকি খেলাধুলার জন্যও পূর্ব-প্রস্তুতি লাগে। যার দৌড়ানোর অভ্যাস মোটে নেই, তাকে হঠাৎ করে দিনব্যাপী ক্রিকেট খেলতে হলে, খেলার পর তার কী অবস্থা হবে, সে তো সবারই জানা!

মুসলিমদের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় হচ্ছে রামাদান। ইবাদতের সময়, সওয়াব হাসিল এর সময়। সময় কুরআনের সাথে সময় কাটানোর। নিজেকে শুধরে নেয়ার সময়। তাই, এই এত গুরুত্বপূর্ণ রামাদান পূর্ব-প্রস্তুতি ছাড়া সফলভাবে কাটিয়ে দেয়া সম্ভব- এটা ভেবে বিষয়টাকে এত হালকা ভাবে আমাদের নেয়া উচিত না।

প্রথমত, সিয়ামের অভ্যাস না থাকলে, রামাদানে সিয়াম পালন করার ধকল কাটিয়ে উঠতে বেশ কিছুদিন লাগে। তাই, সারা বছরই অল্প করে হলেও নফল সিয়াম এর মাধ্যমে সিয়ামের অভ্যাসটা ধরে রাখা ভালো। খেয়াল করলে দেখা যাবে, যারা পুরো বছর নফল সিয়াম পালন করেন, রামাদানে তাঁরা সিয়াম পালনের কারণে খুব একটা দুর্বল হন না। সিয়াম হচ্ছে রামাদানের বেসিক বিষয়। এই বেসিকে দুর্বল হয়ে পড়লে বাকি দিকে মন দেয়া সম্ভবই না। একইভাবে, রামাদানের আগেই আমরা সিয়াম এর নিয়ম কানুন, মাসলা মাসায়েল, ইত্যাদি নিয়ে একটু পড়াশুনা করতে পারি।

রামাদানে নফল সালাত যেহেতু আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আমরা তার আগেই একটু বেশি করে সালাত আদায়ের অভ্যাস করতে পারি। সুন্নাত সালাতগুলো পড়ার মাধ্যমে, সালাতুত দোহা পড়ার মাধ্যমে, বিতরের সালাতে বাড়তি রাকাত পড়ার মাধ্যমে এবং তাহাজ্জুদ পড়তে চেষ্টা করার মাধ্যমে।

রামাদান কুরআনের মাস। তাই, কুরআন তিলাওয়াত বেশি করে করার অভ্যাসটাও রামাদানের আগেই করতে হবে। যেন, রামাদানে তার চেয়েও বেশি তিলাওয়াত করতে আমরা হাঁপিয়ে না উঠি।

রামাদানের আগে আমরা এমন কিছু কাজ সেরে ফেলতে পারি, যার মাধ্যমে রামাদানে আমরা বেশ খানিকটা ভারমুক্ত থাকবো। যেমন আলমারি গোছানো, রান্নাঘর গুছিয়ে রাখা। পর্দা, ইত্যাদি ধোয়ার ব্যাপার থাকলে সেগুলো ধুয়ে ফেলা। এমন সব কিছু, যা দৈনন্দিন কাজের মাঝে পড়ে না, মাসে একবার করলেই হয়, সেইসব আমরা রামাদানের আগে করে রাখতে পারি। রামাদানে কেবলমাত্র দৈনন্দিন কাজগুলো করব এবং সেটাও যথাসম্ভব সংক্ষেপে। একইভাবে বাসার বাইরের যে সমস্ত কাজ থাকে, আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা করা, টুকটাক কেনাকাটা, শুকনো বাজার যা এক মাস আগে করে রেখে দিলেও সমস্যা নেই- এ সব কাজ শেষ করে রাখা যায়।

রামাদানের সময়ের একটি বড় অংশ চলে যায় খাবারের প্রস্তুতি নিতে। এ প্রসঙ্গে খেয়াল রাখা জরুরী যে, রামাদান খাওয়ার উৎসব না। তাই, কে কত আইটেমের ইফতার করতে পারে, কে কত ভালো রেস্টুরেন্টে যেয়ে ইফতার করতে পারে, এটা কখনোই চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত না। সেই সাথে খেয়াল রাখতে হবে যে, সারাদিন সিয়াম পালনের পরে ভালো করে খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে, বাসায় যদি ছোটরা থাকে, যারা সিয়াম পালন করবে, তাদের কিছুটা শখ থাকতেই পারে। তাই, খাবারের মেনু এমনভাবে প্ল্যান করতে হবে যেন তাদের শখ মেটানো সম্ভব হয়। এবং একই সাথে, অতিরিক্ত সময় ব্যয় না হয়।

এই রান্না সংক্রান্ত কিছু কাজও আগেই করে রাখা সম্ভব। ফ্রিজ এবং ডিপ ফ্রিজের এই যুগে, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ইত্যাদি আগেই পেস্ট করে ফ্রিজে রেখে দেয়া সম্ভব। তেমনি ভাবে ডাল বাটা, ছোলা সিদ্ধ, বেরেস্তা, ইত্যাদিও আগে থেকেই রেডি করে ডিপে রেখে দেয়া যায়। পুরো এক মাসের জন্য না হোক, দশ দিনের জন্য তো করাই যায়, যেন প্রতিদিন এই কাজগুলো করতে না হয়। অনেকে সবজিও স্টিম করে ছোট ছোট প্যাকেট বা বক্সে করে ফ্রিজে রেখে দেন, যেন প্রতিদিনের কাটা-বাছার ঝামেলায় যেতে না হয়। শরবতের জন্য আগেই বেশি করে লেবু চিপে আইস ট্রেতে করে ডিপ ফ্রিজে রেখে সেগুলো জমে গেলে কিউব করে প্যাকেটে রেখে দেয়া যায়। যতটুকু লাগবে, বের করে পানিতে মিশিয়ে নিলেই হবে। কাঁচা মাছ-মাংস ফ্রিজে তোলার আগে কেটে বেছে পরিষ্কার করে প্রতিদিনের রান্না অনুপাতে প্যাকেট করে রেখে দিলে, রান্নার সময় বাড়তি আর কোনো কাজ থাকবে না। পরোটা লুচি ইত্যাদি জিনিস বেলার পর হালকা একটু সেকে প্যাকেট করে ডিপে রেখে দেয়া যায় অনেকদিন। তেমনি ভাবে, রেখে দেয়া যায় ঘরে বানানো সমুচা, সিঙ্গারা।

ডিপে খাবার রাখার ব্যাপারে অনেকের দ্বিমত থাকতেই পারে। আগেই বলে রাখছি, এগুলো কেবল সময় বাঁচানোর কিছু টিপস। নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত।

একজনকে শুনেছিলাম ২/৩ সেট কাপড় আলাদা করে রাখতে। রামাদানে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সেগুলোই পরবেন যেন বেশি কাপড় ধোয়া, ভাঁজ করা, তুলে রাখা ইত্যাদিতে সময় নষ্ট না হয়। ঠিক তেমনি, যে সমস্ত কাপড় ইস্ত্রির প্রয়োজন, সেগুলোও আগে থেকেই ইস্ত্রি করে জায়গামতো রেখে দেয়া যায়।

 

~উস্তাযা নায়লা নুযহাত

আল কাসিম, সৌদি আরব

Leave a Comment