রওশনকে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা, মুজিবুল হক বললেন ‘ভুয়া’

দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে জাতীয় পার্টির (জাপা) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছে একটি পক্ষ। আজ বুধবার রাত সোয়া নয়টার দিকে ‘লাঙ্গলবার্তা’ নামের একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে কাজী মামুনুর রশীদ নামের এক ব্যক্তি জাতীয় পার্টি ও বিরোধীদলীয় নেতার মুখপাত্র পরিচয় দিয়ে এ ঘোষণা দেন।

জি এম কাদেরের নাম উল্লেখ না করে ঘোষণায় বলা হয়, দলীয় কার্যক্রম পরিচালনায় আইনি জটিলতা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ কো চেয়ারম্যানদের মতামত ও সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ দায়িত্ব দেওয়া হয়।

 

পরে ‘জাপার প্রেস উইং’ নামের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বুধবার রাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ কো চেয়ারম্যানদের সিদ্ধান্তে রওশন এরশাদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়। যদিও বিজ্ঞপ্তিতে ছয়জন নেতার নাম উল্লেখ করা হয়। তাতে কো চেয়ারম্যান এ বি এম রহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন ও সালমা ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম ও নাসরিন জাহানের নাম রয়েছে।

রাত পৌনে ১০টার দিকে জাপার কো চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আমি গোপালগঞ্জের বাড়ি থেকে মাত্র ঢাকায় এলাম। প্রেসিডিয়ামের মিটিং সম্পর্কে আমি কিছু জানি না।’

জাপার বিভিন্ন পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কো-চেয়ারম‌্যান‌দের কো‌নো বৈঠক হয়‌নি। এ ধরনের সিদ্ধান্তের খবরও তাঁরা জানেন না।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জাপার মহাসচিব মো. মুজিবুল হক বলেছেন, ‘কেউ যদি এ ধরনের সিদ্ধান্তের কথা জানায়, সেটি অসাংগঠনিক এবং ভুয়া। কারণ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পদের ওপর আদালতের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। কেবল গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে দলীয় সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না। আর কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করতে হলে দলের সিনিয়র কো–চেয়ারম্যান হতে পারেন। এর জন্য দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হতে হবে। এর বাইরে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

জাপার দায়িত্বশীল নেতারা জানান, কাজী মামুনুর রশীদ নামক যে ব্যক্তির নামে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তিটি পাঠানো হয়, তিনি জাতীয় পার্টির কেউ নন। একসময় তিনি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে থাকলেও জি এম কাদের তাঁকে অব্যাহতি দিয়েছেন। সম্প্রতি জি এম কাদেরের মোবাইলে ফোনে তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দিলে মামুনের বিরুদ্ধে থানায় ডায়েরি করা হয়।

গত ২৭ নভেম্বর দীর্ঘদিনের অসুস্থতা শেষে ব্যাংকক থেকে দেশে ফেরেন রওশন এরশাদ। তাঁর সঙ্গে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বিরোধ দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতিতে আলোচ্য বিষয়। ওই দিন বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের রওশন এরশাদ বলেন, জি এম কাদেরসহ দলের সবার সঙ্গে আলোচনা করে ভুল-বোঝাবুঝির অবসান ঘটানো হবে। ২৯ নভেম্বর রওশন এরশাদের সঙ্গে দেখা করেন জি এম কাদের। দুজন এক টেবিলে বসে নাশতা করেন।

এদিকে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরের দায়িত্ব পালন-সংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা আবেদন নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ আজ বুধবার এ আদেশ দেন। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে জাপা থেকে বহিষ্কৃত নেতা ও দলটির সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা আপিল বিভাগে আবেদন করেছিলেন।

Leave a Comment