মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে র‌্যাবের জবাবদিহি নিশ্চিতে জোর ব্লিঙ্কেনের

দায়িত্ব পালনকালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) জবাবদিহি নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এ মন্তব্য করেছেন।দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার দুপুরে পররাষ্ট্র দপ্তরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গত বছরের ডিসেম্বরে র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ চালিয়ে আসছে বাংলাদেশ।

বৈঠকে র‍্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি এসেছে কি না জানতে চাইলে মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়টি আলোচনায় তুলেছি। র‍্যাব হয়তো কাজ করতে গিয়ে কখনো কখনো এক্সেস… বেশি করে ফেলেছে। কিন্তু তাদের জবাবদিহির ইন বিল্ট সিস্টেম (কাঠামোগত পদ্ধতি) আছে। তিনি বলেন, র‍্যাবের ১২ কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ডসহ নানা মেয়াদে শাস্তি হয়েছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে র‍্যাবে কাজ করার বিষয়ে তরুণ কর্মকর্তারা নিরুৎসাহিত হবেন। তাই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, র‍্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে আমি খুশি হব বলে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে বলেছি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটা একটি প্রক্রিয়াগত বিষয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র র‍্যাবের কর্মকাণ্ডে জবাবদিহি প্রয়োজন বলে মনে করে। আমি বলেছি, অবশ্যই। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তার সবগুলোই আমরা নিয়েছি। তখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি গত চার মাসে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বৈঠক শুরুর আগে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য প্রচার করেছে। এতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্ব আরও এগিয়ে নেওয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। অন্যদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।বাংলাদেশের শ্রম অধিকার এবং কর্ম পরিবেশ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বৈঠক শেষে মোমেন বলেন, শ্রম অধিকার বিষয়ে বাংলাদেশে যে সব উন্নতি করেছে সেগুলো সম্পর্কে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছি। তাদের বলেছি, আমরা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে পরামর্শ করে শ্রম অধিকার ও কর্ম পরিবেশের উন্নয়ন করছি। তারপরও এই খাতে আমাদের যেসব দুর্বলতা আছে তা কাটিয়ে উঠতে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে সংলাপ বা একটা ‘কমপ্লিট রোডম্যাপ’ তৈরি করে একসঙ্গে কাজ করতে পারব।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে জ্বালানির বাইরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ নানা খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি আকাশপথে চলাচল, বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানো, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল (আইপিএস), আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

মানবাধিকার সুরক্ষা ও আইনের শাসনে জোর ব্লিঙ্কেনের
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের পর মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে মুখপাত্র নেড প্রাইসের দপ্তর একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বৈঠকে ব্লিঙ্কেন ও মোমেন দুই দেশের সম্পর্কের ব্যাপক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন বলে এতে জানানো হয়।

ফুলব্রাইট এক্সচেঞ্জের (মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান) মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে জনগণের ক্রমবর্ধমান সম্পর্কসহ গত অর্ধ শতাব্দীতে দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার প্রক্রিয়া নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। জলবায়ু সংকট মোকাবিলা, গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গাদের চাহিদা পূরণ এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে আঞ্চলিক নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে চলমান সহযোগিতার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তাঁরা।পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন নিরাপদ ও সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক সমাজের ভিত্তি হিসেবে মানবাধিকার সুরক্ষা, আইনের শাসন ও ধর্মীয় স্বাধীনতার গুরুত্বের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছেন বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

Leave a Comment