মেয়েদের উচ্চশিক্ষা নিয়ে কিছু কথা

সেক্যুলার সিস্টেমে মেয়েদের উচ্চশিক্ষা, মেডিকেলের বাহানা এবং কিছু কথা…
—————

তর্ক না করে একটু চিন্তা ভাবনা করার আহবান –
[ The biggest communication problem is we do not listen to understand. We listen to reply. ]

ঢাকা শহরের অধিকাংশ বাসায়ই কাজের বুয়া আছে। কারো বাসায় হয়তো ছুটা বুয়া। কারো বাসায় পার্মানেন্ট। এই মহিলা গুলো কারো না কারো মা, বোন, স্ত্রী, কন্যা। ধর্ম কর্ম আপনার আমার জন্য যা যা ফরজ ওয়াজিব, তাদের জন্যও তাই (নামাজ, রোজা, পর্দা ইত্যাদি।)

আপনি আমি কি আমাদের বোন কন্যাকে এই ধরনের কাজ/চাকরি করতে কোনদিনও অ্যালাউ করবো? কেউ কি কোনদিন বলবে আমাদের বোন কন্যাকে এই কাজ করতে না দিলে বাসায় কি পুরুষ লোক রাখবেন নাকি?
সবাই যদি তাদের বোন কন্যাকে আটকে রাখে তাহলে বাসায় কাজের বুয়া পাবে কই?
তাহলে কি পুরুষ লোক রাখবে কাজের জন্য?
কেউ কোনদিনও এই কথা বলে নাই। বলবেও না।

আচ্ছা কাজের বুয়ার উদাহরণ দেয়াতে হয়তো অনেকের গায়ে লাগবে। অন্যান্য জব গুলো চিন্তা করেন। মডেলিং, নাটক, সিনেমা, দোকানের সেলস গার্ল ইত্যাদি। ফিমেল অনলি শপ গুলোতে যদি মেয়ে সেলসপার্সন না থাকে তাহলে কিভাবে হবে?
মেয়েদের চেক করার জন্য মেয়ে সিকিউরিটি গার্ড না থাকলে কিভাবে হবে?
নারীদের জন্য নারী পুলিশ না থাকলে কিভাবে হবে?
এসব কাজের জন্য কিন্তু কেউ তার বোন কন্যাকে জব করতে পাঠাচ্ছে না। দ্বীনদার মেয়েরা এসব জবে না গেলেও এগুলোতে নারী কর্মীর ঘাটতি হচ্ছে না।
এটা (ঘাটতি) কখনো হবেও না। সমাজের ইকো সিস্টেমের কারনে কেউ না কেউ থাকবেই এই পজিশান গুলো দখলের জন্য।

এবার আসি মূল আলোচনায়,
মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় ৫০% এর উপরে নারী শিক্ষার্থী চান্স পায়। তাদের মধ্যে কতজন মেয়ে পর্দানশিন?
খুবই নগন্য কয়েকজন নিশ্চয়ই?
এরা নিজেদের দ্বীন, গায়রত, পর্দাকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে শুধুমাত্র এই কথার উপর ভিত্তি করে – তারা ডাক্তার না হলে আমরা আমাদের স্ত্রী কন্যাকে পুরুষ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো কিনা?

এটা যে শুধুমাত্র তর্ক করার জন্য বলা সেটা তো বুঝাই যায়।
মেডিক্যালে পড়ুয়া অন্য বেপর্দা বদদ্বীনি মেয়েরা কি ডাক্তার হয় না? নাকি শুধু পর্দানশিন মেয়েরাই ডাক্তার হিসেবে পাশ করে?

ধরেন ১০০ জনের মধ্যে ৫০ জন ছেলে এবং ৫০ জন মেয়ে মেডিক্যালে চান্স পায়। ৫০ জন মেয়ের মধ্যে ৫ জন হয়তো পর্দানশিন। বাস্তবে এটার পার্সেন্টেজ আরও কম হবে। তবুও তর্কের খাতিরে ধরলাম ৫০ জনের মধ্যে ২৫ জন পর্দানশিন বাকি ২৫ জন নরমাল মেয়ে। পর্দানশিন ২৫ জন যদি মেডিক্যালে নাও পড়ে। বাকি ২৫ জন মেয়ে তো আছেই। আমি আমার স্ত্রী কন্যাকে তাদের কাছে নিয়ে যাবো। তাছাড়া পর্দানশিন ২৫ জনের জায়গায় তো অন্য ২৫ জন ভর্তি হবে। অংকের হিসেবে ধরলেও সেখানে আরও ১২+ জন মেয়ে চান্স পাবে। তারমানে ৩৭% এর উপরে মেয়ে ডাক্তার পাচ্ছি আমি। বাস্তবে এই সংখ্যাটা অনেক অনেক বেশি।
তাই কেউ যদি এই যুক্তির উপর ভিত্তি করে মেডিক্যালে পড়তে যায় যে, পর্দানশিন মেয়েরা মেডিক্যালের না পড়লে আমাদের স্ত্রী কন্যাকে কোন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো। তাহলে তাদের যুক্তিটা অসার/ইনভ্যালিড।

নারী সাহাবীদের চিকিৎসার উদাহরণ দিলে বলবো আগে আপনারা তাদের জন্য পরিবেশ তৈরি করুন। তারপর সেই উদাহরণ দিয়েন।

যখন দ্বীন বুঝি না। সেই ছোট্টবেলা থেকে দেখে আসছি আমার আম্মা ফরিদা পারভীন নামক এক মহিলা ডাক্তারের চিকিৎসা নেন। (অন্য ডাক্তারদেরও চিকিৎসা নেন।) তিনি ঐরকম পর্দানশিন কেউ না বলেই যতদূর জানি। কিন্তু খুবই সম্ভ্রান্ত ও ভদ্রমহিলা।
তো আপনারা যারা বলেন স্ত্রী কন্যাকে পুরুষ ডাক্তারের কাছে নিবো কিনা। আপনারা জেনে রাখুন। দেশে প্রচুর সম্ভ্রান্ত মহিলা ডাক্তার আছে। যারা হয়তো দ্বীনের তেমন বুঝ পায় নাই।

– হানিফ বিন সোহরাব

Leave a Comment