মিরসরাই যাচ্ছে ওয়ালটন

ইলেকট্রনিকস পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে চায় দেশীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটন। এবার তারা চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে, যাতে দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও টেলিভিশন (টিভি) ও ফ্রিজ রপ্তানি করা যায়।
জানা গেছে, ‘আমাদের পণ্য’ স্লোগানে বাজারে আসা ওয়ালটন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে ৩০০ একর জমি চেয়েছে। কিন্তু সেখানে জমির অপ্রতুলতার কারণে তাদের নামে ১০০ একর জমি বরাদ্দ করেছে বেজার নির্বাহী বোর্ড। এখন সবাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের অপেক্ষায়। সেখান থেকে সবুজ সংকেত পেলেই শুরু হবে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের নতুন কারখানা নির্মাণের কাজ।জানতে চাইলে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম মুর্শেদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে কারখানা নির্মাণের জন্য আমরা বেজার কাছে জমি চেয়েছি। জমি পেলে আমরা সেখানে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিকস পণ্য উৎপাদন করব।’

ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২০০৬ সালে নিবন্ধিত হয়। এটি ওয়ালটন গ্রুপের প্রধান কোম্পানি। কোম্পানিটির সব কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্সে, যা ঢাকা থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সেখানে জমির পরিমাণ ৭৬৪ একর। বর্তমানে ওয়ালটনের ১৫টির বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাদের উৎপাদিত উল্লেখযোগ্য পণ্যগুলো হলো মুঠোফোন, ফ্রিজ, টিভি, এসি, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, লিফট, এলইডি বাতি। এ ছাড়া কোম্পানিটি গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য বিভিন্ন সরঞ্জামসহ ইলেকট্রিক ও রাসায়নিক পণ্যসামগ্রী তৈরি করে। বর্তমানে দেশে টিভির বাজারে প্রায় ৪৫ শতাংশ ও এসির ক্ষেত্রেও ২৫ শতাংশের বেশি হিস্যা তাদের বলে দাবি ওয়ালটনের।


বেজা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের প্রাথমিকভাবে ওয়ালটন ৬৫ কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে, যা বাংলাদেশের সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার মতো (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ধরে)। এই কারখানায় মোট ১৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। কারখানায় কী কী পণ্য উৎপাদন হবে, তার একটি ধারণাও দিয়েছে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছে, সেখানে টিভি, ফ্রিজ, এসি, কম্প্রেসর, তার, অটোমোবাইল ও বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিকস পণ্য উৎপাদন করবে। মোট উৎপাদিত পণ্যের ৬০ শতাংশ দেশের বাজারে বিক্রি করবে। আর বাকি ৪০ শতাংশ পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হবে।

লিন্ডে বাংলাদেশও জমি পাচ্ছে
বহুজাতিক কোম্পানি লিন্ডে বাংলাদেশও বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। দেশের সর্ববৃহৎ অক্সিজেন উৎপাদনকারী কোম্পানিটি বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে এয়ার সেপারেশন ইউনিট (এএসইউ) নির্মাণ করবে। প্রস্তাবিত এই প্ল্যান্টে কারখানা, মেডিকেলে ব্যবহারের তরল অক্সিজেন ও নাইট্রাস অক্সাইড উৎপাদিত হবে।বেজার তথ্য বলছে, লিন্ডে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে পাঁচ একর জমি চেয়েছে। তাদের সে পরিমাণ জমিই অনুমোদন দিয়েছে বেজার নির্বাহী বোর্ড। প্রাথমিকভাবে সেখানে ১৫৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে লিন্ডে। পরে বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বাড়বে।লিন্ডে বাংলাদেশ হলো লিন্ডে পিএলসি গ্রুপের একটি কোম্পানি, যা জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি বহুজাতিক কোম্পানি। ২০১৮ সাল থেকে অবশ্য কোম্পানিটির সদর দপ্তর আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনে। বাংলাদেশে এ কোম্পানিটি ব্যবসা করছে ১৯৫৩ সাল থেকে। এর আগে ২০১৫ সালে রাজধানীর অদূরে রূপগঞ্জে এয়ার সেপারেশন ইউনিট স্থাপন করেছিল তারা।

বাইসাইকেল তৈরি করবে পিনাকল
বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে বাইসাইকেলও তৈরি হবে। এটি করবে পিনাকল বাইসাইকেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তারা সেখানে আট একর জমি পেতে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে সোয়া কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে পিনাকল বাইসাইকেল। পরে বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বাড়বে। বেজার নির্বাহী বোর্ডের সভায় এরই মধ্যে তাদের প্রস্তাবটি অনুমোদন করা হয়েছে।পিনাকল বাইসাইকেল ইন্ডাস্ট্রিজ সম্রাট কোল্ড স্টোরেজের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। কোম্পানিটি বেজাকে জানিয়েছে, তারা শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান। সে অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে তৈরি করা বাইসাইকেল দেশের বাইরে রপ্তানি করা হবে।

হোটেল ও পর্যটন সেবায় এএমইজেড
এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে হোটেল ও পর্যটন সেবা দেবে এএমইজেড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তারা সেখানে পাঁচ একর জমি পাচ্ছে, আর বিনিয়োগ করবে দেড় কোটি ডলার বা ১২৭ কোটি টাকা। পরে তা আরও বাড়বে।বেজার কর্মকর্তারা বলছেন, ৩০ হাজার একর জায়গাজুড়ে গড়ে উঠছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। চলতি বছরের মধ্যে সেখানে আটটি বড় প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরু করবে।

Leave a Comment