মহাকাশে নাসার নভোযান যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে

যান্ত্রিক ত্রুটির মুখে পড়েছে নাসার সদ্য পাঠানো নভোযান ‘লুসি’। বৃহস্পতি গ্রহকে প্রদক্ষিণরত বেশ কয়েকটি গ্রহাণু পর্যবেক্ষণে ১২ বছরের অভিযানে পাঠানো হয় সেটি। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, সমস্যাটি নভোযানের মূল দুই সোলার প্যানেলের একটিতে। সৌরশক্তি আহরণের মাধ্যমে নভোযানের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে সোলার প্যানেল কার্যকর থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

দ্য ভার্জের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে ১৬ অক্টোবর নির্ঝঞ্ঝাট উড্ডয়ন করে লুসি বহনকারী রকেট অ্যাটলাস ফাইভ। সময়মতো ঠিকঠাক বেরিয়ে আসে লুসির দুই সোলার প্যানেল। তবে কেবল একটি প্যানেল পুরোপুরি মেলে কাঙ্ক্ষিত অবস্থায় পৌঁছেছে।

নাসার ডিপ স্পেস নেটওয়ার্কের তথ্য বলছে, সার্বিকভাবে নিরাপদেই আছে লুসি। অভিযানটিও ভেস্তে যায়নি। অন্যান্য যন্ত্রাংশও কার্যকর। তবে অভিযানটির সঙ্গে সম্পৃক্ত নাসার প্রকৌশলীরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন।

এক ব্লগ পোস্টে নাসা লিখেছে, বর্তমান অবস্থায় কোনো নিরাপত্তা শঙ্কা ছাড়াই কাজ করতে পারবে লুসি। তবে নভোযানটির বর্তমান অবস্থা বুঝতে এবং সোলার অ্যারের পুনর্বিন্যাসের জন্য পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখছেন প্রকৌশলী দল।

নভোযান বিপদে না পড়লেও সোলার প্যানেল পুরোদমে কাজ করাটা জরুরি। এক অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট (এইউ) দূরে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে পৃথিবী। লুসি যে গ্রহাণুগুলো পর্যবেক্ষণে যাচ্ছে, সেগুলো রয়েছে দ্বিগুণ বা তারও বেশি দূরে। আর পৃথিবীর কক্ষপথে থাকলে যতটা সৌরশক্তি পেত, দুই বা ততোধিক এইউ দূরে থাকলে নভোযান হয়তো তার ৩ শতাংশ শক্তি পাবে।

এ ধরনের মেরামতের কাজ আগেও করেছে নাসা। কক্ষপথে পরিভ্রমণের সময় স্কাইল্যাব মহাকাশকেন্দ্রের সোলার অ্যারের আটকে যাওয়া কবজা ঠিক করেছিল সেবার। ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক মহাকাশকেন্দ্রেও একই ধরনের মেরামত করতে হয়েছে। লুসির ক্ষেত্রেও হয়তো তেমন কোনো সমাধান প্রযোজ্য। তবে লুসি এরই মধ্যে পৃথিবী থেকে অনেক দূরে সরে গেছে।

লুসির বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতিগুলোর জন্য সৌরবিদ্যুতের প্রয়োজন। সেগুলো কাজ না করলে অভিযান ব্যর্থ হবে। তবে মহাকাশে গ্রহাণুর মধ্য দিয়ে নভোযানটি চলার জন্য রয়েছে ১৪টি হাইড্রাজিন থ্রাস্টার। ২০২৭ সাল নাগাদ বৃহস্পতির গ্রহাণুগুলোর কাছাকাছি পৌঁছাবে লুসি। নাসার গবেষকেরা ধারণা করছেন, গ্রহাণুগুলো কার্বন যৌগ দিয়ে তৈরি। এগুলো পৃথিবীতে প্রাণের সঞ্চার ও জৈব পদার্থের উৎস সম্পর্কে নতুন ধারণা দিতে পারবে।

Leave a Comment