মশা মারতে মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয়, কিন্তু সুফল কম

মশকনিধনে বেশ বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় হলেও সুফল খুব একটা মিলছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, মশার সমস্যা নিয়ন্ত্রণে শুধু ওষুধ ছিটালে হবে না, প্রয়োজন কার্যকর ওষুধ ও সমন্বিত কীট ব্যবস্থাপনা।

সেই ব্যবস্থাপনা কী হবে, তা ঠিক করতে স্থানীয় সরকার বিভাগ গত বছরের ৬ জানুয়ারি একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিল। কথা ছিল, এক মাসের মধ্যে কমিটি সুপারিশ জমা দেবে। তবে এক বছর সাত মাস পেরিয়ে গেছে, কমিটি কোনো সুপারিশ জমা দেয়নি। সভা করেছে মাত্র একটি।

কমিটির আহ্বায়ক স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন)। ১৬ সদস্যের কমিটিতে বেশির ভাগই সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধি। ৭ জন রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞ।

কমিটির সভা ডাকা ও সুপারিশ তৈরির কাজ এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব আহ্বায়কের। বর্তমানে আহ্বায়কের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন) মরণ কুমার চক্রবর্তীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি। কমিটির সদস্যসচিব স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব (সিটি করপোরেশন-১) নুমেরী জামান বলেন, তিনি কয়েক মাস আগে এই দায়িত্বে এসেছেন। এই সময়ের মধ্যে কমিটির কোনো সভা হয়নি।

কমিটি গঠন করা হয়েছিল ২০১৯ সালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেওয়ার পর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, ওই বছর সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখের বেশি মানুষ। সরকারি হিসাবে মারা যান ১৭৯ জন, যা বেসরকারি হিসাবে ৩০০ জনের বেশি। এমন অবস্থায় ওই বছরের মাঝামাঝি ও ২০২০ সালের শুরুতে মশকনিধনের উপায় খুঁজতে স্থানীয় সরকার বিভাগ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বেশ কয়েকটি সভা করে। এসব সভায় বিশেষজ্ঞরা সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা পর্যায়ে বিক্ষিপ্তভাবে মশক নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম না চালিয়ে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা (ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট) গড়ে তোলার সুপারিশ করেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে সমন্বিত কীট ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সুপারিশ দিতে কমিটি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর সদস্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ জি এম সাইফুর রহমান বলেন, গত বছর কমিটির একটি সভা হয়েছিল। কিন্তু এরপর আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। তিনি বলেন, ‘মশকনিধন এখন “মৌসুমি টেনশন” হয়ে গেছে। যখন রোগী বাড়ে তখন হইহল্লা করি, রোগী কমলেই আলোচনা থেমে যায়। মশা সমস্যার স্থায়ী সমাধান দরকার।’

কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একমাত্র বৈঠকে বিশেষজ্ঞ সদস্যরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে সারা দেশে মশা নিয়ন্ত্রণে একটি কেন্দ্র চালুর পরামর্শ দেন। এই কেন্দ্র দেশব্যাপী মশা ও অন্যান্য ক্ষতিকর কীট নিয়ন্ত্রণে অভিভাবক সংস্থা হিসেবে কাজ করবে। বছরব্যাপী সেখানে মশা ও কীটনাশক নিয়ে গবেষণা হবে এবং তারাই নির্দেশনা দেবে কখন কোন কীটনাশক ব্যবহার করা হবে।

সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনায় কয়েকটি বিষয় রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানান। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মশার প্রজননস্থল কমানো, উপকারী প্রাণীর মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণ, মশা নিয়ন্ত্রণে লার্ভিসাইড এবং এডাল্টিসাইড কীটনাশক ব্যবহার এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করতে উদ্যোগ নেওয়া অন্যতম।

Leave a Comment