ভোটের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি দলের নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে সভা-সমাবেশে সরকারের উন্নয়ন প্রচার করা এবং ভোটের কথা মাথায় রেখে সব স্তরে নতুন কমিটি করার নির্দেশ দিয়েছেন।গতকাল মঙ্গলবার গণভবনে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠক হয়। বৈঠকের শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সভায় নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন, নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন, চলমান রাজনৈতিক ঘটনাবলি, র‌্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।ইসি গঠনে অনুসন্ধান কমিটিতে দলের পক্ষ থেকে নাম দেওয়ার বিষয়ে বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনা হয় বলে একাধিক নেতা জানান। তাঁরা বলেন, দলীয় প্রধান বলেছেন, ইসি গঠনে সংসদে গণতান্ত্রিকভাবে আইন পাস হয়েছে। আইন পাসের আগে বিভিন্ন দলের সংশোধনী গ্রহণ করা হয়েছে। এখন ইসি গঠনের সময় এসেছে। অনুসন্ধান কমিটিকে সহযোগিতা করতে চায় আওয়ামী লীগ।বৈঠকে আলোচনা পশ্চিমারাই র‌্যাবকে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলেছে, এখন নানা অভিযোগ তুলছে। সরকারের অর্জন সম্পর্কে মানুষকে জানাতে নেতাদের নির্দেশ। নারায়ণগঞ্জের ভোট দলের নেতা-কর্মী, বিরোধী দল ও বিদেশিদের জন্য দৃষ্টান্ত।


বৈঠক সূত্র জানায়, আলোচনার একপর্যায়ে দলের নেতাদের কাছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য কমিশনার পদে তাঁদের পছন্দের নাম দেওয়ার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সবকিছু গণতান্ত্রিকভাবে হওয়া উচিত। আপনারা নাম দেন। এ সময় নেতারা কাগজে নিজেদের পছন্দের নাম লিখে দেন। তবে নামের তালিকা চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দলীয় প্রধানকেই দেন নেতারা। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের দেওয়া নামগুলো একটা খামে ভরে রাখা হয়। পরে তিনি বলেন, যতগুলো নাম এসেছে, তা পরে সময় নিয়ে দেখবেন, এরপর চূড়ান্ত তালিকা করবেন।উল্লেখ্য, সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ১৯ জন। গত নভেম্বরে সভাপতিমণ্ডলীতে যুক্ত হন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান। আর গত সোমবার যুক্ত হন সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী ও কামরুল ইসলাম। তাঁরা প্রথমবার সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা এবং অন্য নেতারা তাঁদের স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানান।


দলের কার্যক্রম গতিশীল করতে ২০২০ সালের অক্টোবরে দেশের আট বিভাগের জন্য জ্যেষ্ঠ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে আটটি সাংগঠনিক কমিটি করা হয়েছিল। বৈঠক সূত্র বলছে, এই কমিটিগুলোকে গতকালের বৈঠকে আরও তৎপর হওয়ার তাগিদ দেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। যেসব জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটির মেয়াদ পেরিয়ে গেছে, সেগুলোতে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দেন তিনি। এ সময় নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠনকে গড়ে তুলতে হবে। ভালো নেতৃত্বকে এগিয়ে আনতে হবে।বৈঠক সূত্র জানায়, দলীয় প্রধান বলেছেন সরকারের অর্জন সম্পর্কে জানাতে হবে। কারণ, মানুষ সবকিছু ভুলে যায়। তাদের বারবার স্মরণ করিয়ে দিতে হয়। সভা-সমাবেশ করে মানুষকে জানাতে হবে কেন তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন আর কেন বিএনপি বা অন্যদের ভোট দেওয়া ঠিক হবে না।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর জয়ী হওয়া নিয়েও বৈঠকে কথা বলেন কোনো কোনো নেতা। বৈঠক সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন নারায়ণগঞ্জের ভোট দলের নেতা-কর্মী, বিরোধী দল ও বিদেশিদের জন্য একটা দৃষ্টান্ত। দলের জন্য দৃষ্টান্ত হচ্ছে, আওয়ামী লীগ এক হয়ে মাঠে থাকলে কেউ হারাতে পারে না। নারায়ণগঞ্জে দলে বিভেদ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে ভোটের সময় সেলিনা হায়াৎ আইভী ও সাংসদ শামীম ওসমানকে কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। তাঁদের নির্দেশনা দেওয়ার জন্য লোক ছিল। এ জন্য দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে জয় ছিনিয়ে এনেছে। বিরোধী দল ও বিদেশিদের জন্য দৃষ্টান্ত হচ্ছে, এই সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়। বিরোধী দল কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বীরা নির্বাচন নষ্ট না করার চেষ্টা করলে ভোট ভালো হয়।


র‌্যাব এবং এই বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও অহরহ ঘুম-খুন হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি নানা পরিসংখ্যান এবং বিভিন্ন প্রকাশনার তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেছেন, সেখানে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। ক্যাপিটল হিলের মতো জায়গায় দাঙ্গা হয়েছে। কৃষ্ণাঙ্গ যুবক, এমনকি শিশু পর্যন্ত বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে মানবাধিকারের বুলি আওড়ানো মানায় না। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, পশ্চিমারাই র‌্যাবকে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলেছে। এখন নানা অভিযোগ তুলছে। র‌্যাবের সব কাজকে তো সরকার বৈধতা দিচ্ছে না। অনেক ঘটনার বিচার করছে। র‌্যাবের মাধ্যমে কোনো অন্যায় হচ্ছে কি না, সেটিও নজরে রাখা হয়।

Leave a Comment