ভারতের দুই রাজ্যে বন্যায় ৭২ জনের প্রাণহানি

ভারী বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় ভারতের দুই রাজ্যে ৭২ জনের প্রাণহানি হয়েছে। উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তরাখন্ডে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৪৬ জন। এ ছাড়া দক্ষিণ ভারতের রাজ্য কেরালায় সাম্প্রতিক দিনগুলোয় কমপক্ষে ২৬ জন মারা গেছেন। বিবিসির আজ বুধবারের এক অনলাইন প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্তরাখন্ডের ছবি ও ভিডিওতে প্লাবিত সড়ক, ডুবে যাওয়া বাড়িঘর ও ভেঙে পড়া সেতু দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিমালয় অঞ্চলের এই রাজ্য একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। জলবায়ু পরিবর্তন ও ব্যাপক অবকাঠামো নির্মাণের প্রভাবেই রাজ্যটিতে এমন বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এ বছর রাজ্য দুটিতে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। কেরালায় সাধারণত এ সময় ১৯২ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়ে থাকে। সে তুলনায় এবার রাজ্যটিতে বৃষ্টি হয়েছে ৪৫৩ দশমিক ৫ মিলিমিটার। উত্তরাখন্ডে অক্টোবরে সাধারণত ৩০ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যটিতে ১২২ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগের কর্মকর্তারা অবশ্য গতকাল মঙ্গলবার থেকেই বৃষ্টির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন।

রাজ্যের এক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা নিলেশ ভারনে বিবিসিকে জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোয় এখনো উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দেশটির জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী উত্তরাখন্ডে তাদের ১৬টি দল মোতায়েন করেছে। এখন পর্যন্ত তারা প্রায় ৩০০ জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী পুশকার সিং ধামি বন্যায় প্রাণ হারানো প্রত্যেকের পরিবারকে চার লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া বন্যায় যাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে, তাদের ১ লাখ ৯০ হাজার রুপি করে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
টুইটারে শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘উত্তরাখন্ডের কিছু অংশে ভারী বৃষ্টির কারণে প্রাণহানির ঘটনায় আমি শোকাহত। আহত ব্যক্তিরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক।’

ভারতীয় দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসকে উত্তরাখন্ডের আঞ্চলিক আবহাওয়া কেন্দ্রের পরিচালক বিক্রম সিং বলেন, অল্প কয়েক দিনে অতিরিক্ত বৃষ্টি স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরও বলেন, সম্ভবত অনেক স্থানে মেঘলা বিস্ফোরণ ও ভারী বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু অনেক এলাকায় আবহাওয়া কেন্দ্র না থাকার কারণে তা রেকর্ড করা যায়নি।

ভারী বৃষ্টির জন্য জলবায়ু সংকটকে দায়ী করেন বিক্রম সিং। বিশেষজ্ঞরাও দীর্ঘদিন ধরে উত্তরাখণ্ডে অন্যান্য পরিবেশগত পরিবর্তনের কথা বলছেন। এতে ভূমিধস ও বন্যার মতো বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। হিমালয়ের উঁচু অঞ্চলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ও পাহাড়ি ঢালে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যাপক অবকাঠামো নির্মাণের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, উচ্চ তাপমাত্রার অর্থ হিমালয়ে কম তুষারপাত এবং ভারী বৃষ্টির সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে পানি প্রবাহিত হওয়ায় বন্যা দেখা দিয়েছে।

Leave a Comment