বোন আমার, প্রবঞ্চনা করো না নিজের সাথে

আচ্ছা, রাস্তাঘাটে ছেলেদের সাথে হাসি-ঠাট্টা করা, ক্লাসের ফাঁকে তাদের সাথে জমিয়ে আড্ডা দেওয়া, বোরখা পরে ছেলেবন্ধুর সাথে ঘুরতে যাওয়া, আধুনিকতার নামে নিজের সৌন্দর্য অন্যের সামনে প্রকাশ করা, অনলাইনে পরপুরুষের সাথে চ্যাট করা—এগুলোকে কি নির্লজ্জ কাজ বলে মনে হয়?
.
এগুলোর কোনো একটিতে জড়ানোর পরও লজ্জায় তোমার মুখ যদি লাল না হয়, তাহলে বুঝে নিয়ো—তোমার লজ্জাশীলতার বাঁধ ধসে পড়েছে। বেহায়াপনার স্রোতে তোমার ঈমানি দুর্গ ভেসে গেছে। পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছ তুমি। খানিক বাদেই সব তলিয়ে যাবে বানের জলে। ভাসিয়ে নিয়ে যাবে সবকিছু।
.
اَلْإِيْمَانُ بِضْعٌ وَّ سَبْعُوْنَ شُعْبَةً وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِّنَ الْإِيْمَانِ
“ঈমানের সত্তরটিরও বেশি শাখা আছে। লজ্জা তার বিশেষ একটি শাখা।” [মুসলিম, ৩৫]
.
তোমার কাছ থেকে যদি লজ্জাশীলতার গুণ উঠে যায়, তবে কী আর বাকি থাকবে বলো? ঈমানখাতায় শূন্য ছাড়া তো আর কোনো অঙ্কেরই দেখা পাবে না।
.
তুমি কীভাবে নিজের হিজাবটাকে এত কম দামে বিক্রি করে দিলে? আমি আশ্চর্য হই এ কথা চিন্তা করলে! হিজাব পরার পরও চালচলনে কোনো পরিবর্তন এল না তোমার। এখনও ছেলেদের সাথে সমানতালে ওঠাবসা করো তুমি। অশ্লীল ভিডিয়ো দেখো। গান শোনো। তুমি কি জানো না, আল্লাহ তাআলা সব ধরনের অশ্লীলতাকে হারাম করেছেন?
.
তুমি কি জানো না, তোমার এই ভুল দৃষ্টিভঙ্গির কারণে মানুষ হিজাব থেকে দূরে সরে যাচ্ছে? কত যুবতী যে তোমার কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আসমানি আবরণ খুলে ফেলেছে, তার কি কোনো ইয়ত্তা আছে? তুমি যখন বোরখা পরে পরপুরুষের সাথে আড্ডায় বসে যাচ্ছ, তখন অনেক বেপর্দা নারী নিজেকে তুলনা করছে তোমার সাথে। সে গর্ব করে বলছে, ‘আমার স্বভাব-চরিত্র এই মেয়ের চেয়ে অনেক ভালো। আমি বেশি দ্বীনদার। আমার সাথে আল্লাহর সম্পর্ক বেশি গভীর।’ সে আরও বলতে থাকে, ‘আসলে দ্বীনদারীর সাথে হিজাবের কোনো সম্পর্ক নেই। কত মেয়ে দেখলাম—হিজাব পরে ছেলেদের সাথে ওপেনলি চলাফেরা করে। ওদের চেয়ে আমি শতগুণে ভালো।’
.
কেন তুমি মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছ? একটিবারও ভাববে না, সতর্ক হবে না?
.
যেদিন থেকে হিজাব পরা শুরু করেছ, সেদিন থেকেই তুমি ইসলামের একটা প্রতীক বয়ে বেড়াচ্ছ। মানুষ তোমায় একটু অন্য নজরে দেখতে শুরু করেছে। নিজের অজান্তেই অনেক মানুষের সামনে মডেল হয়ে গেছ তুমি। তোমার থেকে যদি কোনো বিচ্যুতি প্রকাশ পায়, সেটা আসলেই অপ্রত্যাশিত। দাড়ি-টুপিওয়ালা কোনো লোককে যদি মানুষজন গানের তালে তালে নাচতে দেখে, তা হলে তাকে কী বলবে বলো?
.
বিনীত অনুরোধ করে আমি বলব, তুমি বেপর্দা নারীদের কাছে দ্বীনদারিতা ও লজ্জাশীলতার অনুপম দৃষ্টান্ত হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করো। এমনভাবে চলাফেরা করো, যেন লোকজন তোমার থেকে লজ্জাশীলতার সবক নিতে পারে। নিজেকে কখনোই আর আট-দশটা সাধারণ নারীর মতো মনে করবে না। তুমি সাধারণ কোনো নারী নও। তোমার গায়ে আছে বোরখা, যা ইসলামি মূল্যবোধের পরিচয় বহন করে। তাই তোমাকে আরও সাবধানে পা ফেলতে হবে।
.
হিজাব হলো তোমার চারিত্রিক সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ। হিজাব পরার পর, তোমার চালচলন, আচার-ব্যবহার ও কথাবার্তার মাধ্যমে যদি উত্তম গুণাবলির প্রকাশ ঘটে, তবেই বেপর্দা বোনেরা হিজাবের সঠিক মর্ম উপলব্ধি করতে পারবে। তুমি কিছু না বললেও তারা তোমাকে অনুসরণ করা শুরু করবে। কিন্তু তুমি যদি হিজাব পরেও নষ্টামো করে বেড়াও, তবে হিজাব কোনো কাজেই আসবে না। না দুনিয়ার মানুষের সামনে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হতে পারবে, আর না আখিরাতে মুক্তি পাবে।
.
বোন আমার, হিজাব পরার মাধ্যমে এটা প্রমাণ করেছ যে, অন্যান্য নারীদের থেকে তুমি আলাদা। আর আট দশটা নারীর মতো নও তুমি। ওরা অনায়াসেই যা করতে পারবে, সেটা করার আগে তোমাকে অন্তত দশবার ভাবতে হবে। ওদের মতো তুমিও যদি ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি করে বেড়াও, তবে হিজাবের কী মূল্য থাকল বলো?
.
তুমি যদি হিজাব পরো, হিজাবের বার্তাটা বুঝতে পারো, হিজাবকে জীবনের অংশ করে নিতে পারো, তা হলে তুমি হয়ে যাবে একটা চলন্ত দাওয়াহ। এর মাধ্যমে সামাজিক দাওয়ার কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। পেয়ে যাবে ভালোকাজে উ‌ৎসাহ প্রদানকারীর সওয়াব। নেক কাজের পথপ্রদর্শনকারী হিসেবে মানুষ তোমায় স্মরণ করবে শ্রদ্ধাভরে।
.
বোন আমার, এ পথে চলার মাধ্যমেই তুমি অন্যান্য নারীদের থেকে আলাদা হয়ে যাবে। নৈতিকতার চরম অবক্ষয়ের যুগে তুমি যদি হিজাবকে আঁকড়ে ধরো, তবে মানুষের সামনে তুমি হয়ে যাবে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তোমার নাম সেসব দাঈদের তালিকায় লেখা হবে, যারা সমাজের চোখে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আল্লাহর বিধান পালন করে যায় নির্ভিকচিত্তে।
.
.
‘হিজাব আমার পরিচয়’ বই থেকে চয়নকৃত।­

Leave a Comment