বিধানসভায় বিএসএফ’র ক্ষমতা বৃদ্ধির বিল পাশ

বিধানসভায় বিএসএফ’র ক্ষমতা বৃদ্ধির বিল পাশ হয়েছে। শীতকালীন অধিবেশনে গৃহীত এই প্রস্তাবের ওপর প্রায় দেড় ঘণ্টার আলোচনা হয়েছে।

দেশের একাধিক রাজ্যের সাথে পাশের দেশগুলোর সীমান্ত ভাগ করেছে। সেই তালিকায় নাম রয়েছে আসাম, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ ও পঞ্জাবের।

এই রাজ্যগুলোয় বিএসএফ’র সীমান্ত বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

উত্তর-পূর্বের গেটওয়ে হিসেবে পরিচিত পশ্চিমবঙ্গ। তাই এই রাজ্য দেশের অভ্যন্তরিণ নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত সীমান্ত থেকে ৫০ কি. মি. পর্যন্ত বিএসএফ-র ক্ষমতা বাড়ানো হবে।

বিলে দেশটির দুই অবিজেপি শাসিত রাজ্য বাংলা-পঞ্জাব এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। তবে বিরোধীতার পরও মঙ্গলবার পাশ হয়েছে ওই প্রস্তাব।

বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনের এই প্রস্তাবের ওপর প্রায় দেড় ঘণ্টার আলোচনার হয়েছে। তারপর ভোট হয়। ভোটে প্রস্তাবের পক্ষে ১১২টি এবং বিপক্ষে ৬৩ ভোট পড়েছে। এদিন বিজেপির তরফে আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর এবং ইংরেজবাজারের শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। পাশাপাশি শাসক দল অর্থাৎ তৃণমুলের পক্ষে এই আলোচনায় অংশ নিয়েছেন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কারিগরী মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর এবং দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ।

সরকার দলের পক্ষে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘বাংলার মানুষ ভোটে তাদের রায় জানিয়েছে। তাই বিএসএফ-র ক্ষমতা বৃদ্ধি পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখলের চক্রান্ত নয় তো?’

শুভেন্দু অধিকারি বলেন, ‘বিএসএফ-র সীমান্ত বৃদ্ধি সংক্রান্ত কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত সঠিক। প্রয়োজনে ৮০ কি. মি. পর্যন্ত করা হোক বাহিনীর ক্ষমতা। রাজ্য এই প্রস্তাবে বিজেপির সাথে গলা মেলাক।‘

সম্প্রতি বিএসএফ-র গুলিতে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় উত্তপ্ত হয়েছিল কোচবিহারের সিতাই। বিধানসভার গুঞ্জোরির চওড়া এলাকায় ২৯ নম্বর গেটের কাছ থেকে উদ্ধার হয় তিনটি লাশ। নিহতদের মধ্যে দু’জন বাংলাদেশী এবং একজন ভারতীয়। এরা গরু পাচারকারি বলে অভিযোগ করেছে বিএসএফ। তাদের নির্বিচার গুলিতে পাচারকারিদের মৃত্যু বলে দাবি করা হলেও তা মানেনি সীমান্তরক্ষী বাহিনী।

জানা যায়, গরু পাচার করার সময় বিএসএফের ৭৫ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের কর্তব্যরত জওয়ানদের উদ্দেশ্যে পাথর ছোঁড়ার অভিযোগ ওঠে পাচারকারিদের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তরা কাঁটাতারের বেড়ার খুব কাছাকাছি চলে যাওয়ার পর বিএসএফ পাল্টা গুলি ছোঁড়েন। এতেই মৃত্যু হয় তিন পাচারকারির। ঘটনার জেরে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ালে ঘটনাস্থলের পৌঁছায় জেলা পুলিশের বিশেষ দল।

জানা গেছে, পাচারকারীদের ছোঁড়া পাথরে এক বিএসএফ জওয়ানও জখম হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

অপরদিকে, গত সপ্তাহেই রাজ্য সফর করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভল্লা। দেশের ভেতরের নিরাপত্তায় বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে মোদি সরকার।

সেক্ষেত্রে বাংলার সাথে রয়েছে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মতো তিনটি স্পর্শকাতর আন্তর্জাতিক সীমান্ত। পাশাপাশি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একমাত্র ‘গেটওয়ে’ এই পশ্চিমবঙ্গ। ফলে, জাতীয় নিরাপত্তার নিরিখে এ রাজ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। যা বিবেচনা করেই শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লা পশ্চিমবঙ্গের শীর্ষকর্তা ও বিএসএফ আধিকারিকদের সাথে আলোচনা বসেছিলেন।

বৈঠকে সীমান্ত সুরক্ষা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উন্নয়নের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া তোলার বিষয়টি দ্রুত করার জন্য রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তাদের নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় স্বারাষ্ট্র সচিব।

ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ২৮৯ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার প্রয়োজনীয়তা থাকলেও বেড়া রয়েছে মাত্র ১৮২ কিলোমিটার জুড়ে।

সীমান্তে জমি অধিগ্রহণের বাধায় বেড়া দেয়ার কাজটি আটকে রয়েছে বলে সরকারি সূত্রে খবর প্রকাশ করা হয়েছে। সমস্যা দ্রুত মিটিয়ে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া তোলার জন্য রাজ্য প্রশাসন ও বিএসএফ কর্তাদের নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় স্বারাষ্ট সচিব।

হিডকো ভবনে শুক্রবার হওয়া প্রায় আড়াই ঘণ্টার এই বৈঠকে রাজ্যের তরফে ছিলেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, স্বরাষ্ট্র সচিব বিপি গোপালিকা, ভূমি দফতরের সচিব মনোজ পন্থ, রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য।

এছাড়াও, রাজ্যের যে ১০ জেলায় আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে সেইসব জেলায় পুলিশ সুপাররাও শুক্রবারের বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন। এই জেলাগুলো হলো, দুই ২৪ পরগনা, দুই দিনাজপুর, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, নদিয়া, মালদা ও মুর্শিদাবাদ।

সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

Leave a Comment