বাচেনা খাতুন ২০ বছর ধরে কাঁচি পেটে নিয়ে ঘুরছিলেন

বাচেনা খাতুনের (৫০) পেটে পাথর অপসারণের জন্য চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করেন। অস্ত্রোপচারটি হয়েছিল ২০০২ সালের দিকে। এত দিন বাচেনা খাতুন ভালোই ছিলেন। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে তাঁর পেটের মধ্যে যন্ত্রণা ও ব্যথা অনুভূত হতে শুরু করেন। রাজশাহীতে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে এক্স-রে করার পর তিনি জানতে পারেন, তাঁর পেটের ভেতরে কাঁচি রয়েছে।

ভুক্তভোগী বাচেনা খাতুন চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার ঢিৎলা ইউনিয়নের নওদাহাপানিয়া গ্রামের আবদুল হামিদের স্ত্রী। পেটে কাঁচি রেখে অস্ত্রোপচারের ঘটনাটি ২০ বছর আগে ঘটেছিল মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা শহরের রাজা ক্লিনিক নামের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। বাচেনা খাতুন সোমবার বিকেলে এ বিষয়ে গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

বাচেনা খাতুন বলেন, এত দিন ধরে পেটের ভেতর মাঝেমধ্যে যন্ত্রণা করলে স্থানীয় ওষুধের দোকান থেকে গ্যাসের ও ব্যথার ওষুধ কিনে খেয়েছেন। কয়েক দিন আগে পেটে অসহনীয় ব্যথা শুরু হলে রোববার রাজশাহীর একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসার জন্য যান। পরে সেখানে এক্স-রে করে চিকিৎসক দেখতে পান, পেটের মধ্যে কাঁচি রয়েছে।

বাচেনা খাতুনের স্বামী আবদুল আজিজ বলেন, ‘পাথরের জন্য অস্ত্রোপচার করে তাঁরা কাঁচি রেখে সেলাই করে দিয়েছেন। এখন আবারও অপারেশন করতে হবে। আমরা গরিব মানুষ। এত টাকা কোথায় পাব?’

বাচেনা খাতুনের এক্স-রে চিত্রটি দেখেছেন গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাহিদুর রেজা। জাহিদুর রেজা বলেন, বাচেনা খাতুন তাঁর কাছে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। তাঁকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, তাঁর পেটের ভেতরে অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত কাঁচি রয়েছে। তাঁকে দ্রুত অস্ত্রোপচার করে কাঁচিটি অপসারণ করতে হবে। আপাতত তাঁকে ওষুধপথ্য দেওয়া হয়েছে।

অভিযুক্ত রাজা ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী ও চিকিৎসক পারভিয়াস হোসেন ওরফে রাজা বলেন, মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। মানুষের ভুল হবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় দোষ এড়ানো যায় না। যদিও তখন কর্মরত চিকিৎসক মিজানুর রহমান বাচেনা খাতুনের অপারেশনটি করেছিলেন। তিনি ভুক্তভোগী বাচেনা খাতুন ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে বিষয়টির সুরাহা করতে চান।

জানতে চাইলে গাংনী ইউএনও মৌসুমি খানম বলেন, এ ধরনের অভিযোগ এখনো হাতে পাননি তিনি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্য ওই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মেহেরপুরের সিভিল সার্জন জওয়াহেরুল আনাম সিদ্দিকী বলেন, ‘এমন অভিযোগ এখন পর্যন্ত আমি শুনিনি। তবে এটা ঘটে থাকলে খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ভুক্তভোগী পরিবার আইনের আশ্রয় নিলে বিষয়টি আইনগতভাবে সুরাহা হবে বলেও জানান তিনি।’

Leave a Comment