প্রশাসক পদে রাজনৈতিক ব্যক্তিরাই আসছেন

দেশের সদ্য বিলুপ্ত ৬১টি জেলা পরিষদে দ্রুততম সময়ে প্রশাসক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এ পদে আসতে পারেন বলে স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

অপর দিকে জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটার তালিকা তৈরির কাজ শুরু করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দেশের প্রথম নির্বাচিত জেলা পরিষদগুলোর মেয়াদ শেষ হয় জানুয়ারিতে। জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের বিধানসহ আইনের বেশ কয়েকটি ধারা সংশোধন করে সম্প্রতি জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন পাস করেছে সরকার। এর ধারাবাহিকতায় রোববার ৬১টি জেলা পরিষদ বিলুপ্ত করা হয়। প্রশাসক নিয়োগের আগ পর্যন্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা (সিইও) জেলা পরিষদের প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা পরিচালনা করবেন।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো সম্পন্ন করতে পারেনি। নির্বাচন কমিশনের জন্য এখন জেলা পরিষদ নির্বাচন করা চ্যালেঞ্জিং। জেলা পরিষদগুলোকে জনকল্যাণমুখী ও কার্যকরী করার জন্য আইন সংশোধন করা হয়েছে। বর্তমান আইনের বিধান অনুযায়ী, প্রশাসক নিয়োগে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

জেলা পরিষদ স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন একটি স্তর। ২০০০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নতুন জেলা পরিষদ আইন পাস করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা বাদে বাকি ৬১টি জেলা পরিষদে ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাদের প্রশাসক নিয়োগ করে সরকার। দীর্ঘদিন অনির্বাচিত ব্যক্তিদের দিয়ে জেলা পরিষদ পরিচালনা করা হয়। ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইন, ২০০০-এর অধীনে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী, ১২টি বাধ্যতামূলক কাজ করবে জেলা পরিষদ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে জেলার সব উন্নয়ন কার্যক্রম পর্যালোচনা; উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার গৃহীত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা; জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উদ্যান, খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত স্থানের ব্যবস্থা এবং রক্ষণাবেক্ষণ। এ ছাড়া শিক্ষা, সংস্কৃতি, সমাজকল্যাণ, জনস্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক কল্যাণসহ কিছু ঐচ্ছিক কাজও রয়েছে।

তবে জেলা পরিষদের পাঁচজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সদস্যরা তাঁদের যেসব কাজ করার কথা, সেগুলো করতে পারেননি। তাঁরা শুধু এলাকায় ছোট আকারের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসা, কবরস্থান, শ্মশানের মতো সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রণয়নের কাজ করেছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের কথার বাইরে কিছু হয়নি।

নির্বাচিত জেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সরকার বিদ্যমান আইনের বেশ কিছু ধারা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। ৬ এপ্রিল জেলা পরিষদ (সংশোধন) বিল ২০২২ সংসদে পাস হয়। আগে চলমান কোনো পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রশাসক নিয়োগের বিধান ছিল না। সংশোধিত আইন অনুযায়ী, জেলা পরিষদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে এবং পরবর্তী পরিষদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত সরকার উপযুক্ত ব্যক্তিকে বা প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মকর্তাকে প্রশাসক নিয়োগ করতে পারবে। তবে প্রশাসকের মেয়াদ ১৮০ দিনের বেশি হবে না।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ গতকাল মঙ্গলবার বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। পরিষদ ভেঙে দেওয়ার পরবর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। জেলা প্রশাসকেরা ভোটার তালিকা করে নির্বাচন কমিশনে পাঠাবেন। প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রশাসক পদে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বসবেন। তাই সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।

সংশোধনের আগের আইন অনুযায়ী, ১ জন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও সংরক্ষিত ৫ জন নারী সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠিত হতো। এটি সংশোধন করে প্রতিটি উপজেলায় (জেলার মোট উপজেলার সমসংখ্যক) একজন করে সদস্য এবং চেয়ারম্যানসহ সদস্যদের মোট সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ (নিকটবর্তী পূর্ণসংখ্যা) নারী সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠন করা হবে।

সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন হলেও কেবল জেলা পরিষদ আইনে প্রত্যক্ষ ভোটের বিধান নেই। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচন করেন সংশ্লিষ্ট এলাকার সিটি করপোরেশন (থাকলে), উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। সর্বশেষ জেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৬৩ হাজার ১৪৩ জন।

স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তা ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংশোধনের আগে ছোট–বড় সব জেলা পরিষদেই ২১ জন সদস্য ছিলেন। কিছু জেলায় উপজেলার সংখ্যা অনেক বেশি। ছোট আয়তনের জেলা পরিষদের পক্ষে সদস্যদের সম্মানী পরিশোধ ও অন্যান্য প্রশাসনিক ব্যয় নির্বাহের পর উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা সম্ভব হতো না।

জেলা পরিষদ নিয়ে সরকারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক প্রণব কুমার পান্ডে বলেন, জেলা পরিষদের সঙ্গে উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। স্থানীয় সরকারকে কার্যকর করতে হলে কিছু আইনি ধারা সংশোধন করে এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে।

Leave a Comment