পৃথক নদী ট্রাইবুনালের দাবি নদী কমিশনের

যাদের ব্যর্থতায় নদী ভাঙছে, তাদের কাছ থেকেই ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিৎ বলে মনে করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। এছাড়া, কমিশনকে নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া, পৃথক নদী ট্রাইবুনালে নদীর দখল ও দূষণকারীদের বিচারও দাবি করা হয়েছে।

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের’ এক সভায় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান এ এস এম আলী কবীর এ দাবি জানান।

কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যাদের ব্যর্থতার জন্য এরকম বছরের পর বছর এরকম হচ্ছে তাদেরই ক্ষতিপূরণটা দিতে হবে।

তিনি বলেন, আমি মনে করি ট্রেন দুর্ঘটনা, লঞ্চ দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের যদি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় তবে যারা নদী শিকস্থি, নদী যাদের বাড়ি-ঘর, উপাসনালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলছে তাদেরকেও ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিৎ।

এ এস এম আলী কবীর বলেন, প্রতিষ্ঠার সাত বছরের মধ্যে কমিশন ৬০ হাজার দখলদারের তালিকা করেছে। এর মধ্যে ১৮ হাজার উচ্ছেদ হয়েছে। কাজটা কিন্তু সহজ নয়। কারণ আপনারা জানেন নদী দখলদারেরা অনেক শক্তিশালী। তবে আইন তারচেয়েও শক্তিশালী, সরকারের হাত আরও লম্বা। নদী দখল করে কেউ পার পাবেন না।

নদী কমিশনকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এর জনবল কাঠামো বাড়ানো দরকার, এর আইনগত কাঠামো বাড়ানো দরকার। কমিশনকে একটা সাংবিধানিক সংস্থায় পরিণত করা উচিৎ। আমি মনে করি সেরকম সাংবিধানিক বডি হওয়া উচিৎ। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় আছে, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় আছে, নদী ও জলাশয় মন্ত্রণালয় থাকবে না কেন?”

নদী দূষণ ঠেকাতে না পারলে ভয়াবহ পরিণতি হবে উল্লেখ করে নদী কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “ঢাকার চারপাশের নদীর দূষণটা মারাত্মক। এটা মনে হয় পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি, রেকর্ড সৃষ্টিকারী। ঢাকা এখন পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত নগরী। ঢাকায় সুস্থ শরীরে বেঁচেবর্তে থাকা মনে হয় আল্লা তায়ালার একটা কুদরত। এভাবে চলতে থাকলে ঢাকার প্রতি ঘরে ঘরে একটা ভয়ঙ্কর রোগ এসে ঢুকবে, এর কোনো চিকিৎসা থাকবে না।”

বিশ্ব নদী দিবস উদযাপন উপলক্ষে এই সভার আয়োজন করে ‘নদী বাঁচাও আন্দোলন’। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববার আন্তর্জাতিকভাবে নদী দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

দখল-দূষণ প্রতিরোধের তাগিদ দিয়ে নদী বাঁচাও আন্দোলনের প্রধান আনোয়ার সাদাত বলেন, “কঠিন সত্য হচ্ছে, আমাদের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে দূষণের ওপর। পৃথিবীর সব থেকে দূষিত নদীগুলো আমাদের ঢাকার চারপাশে।”

তিনি বলেন, “জাতীয়ভাবে নদীর সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। সংজ্ঞা নির্ধারিত না হলে নদীর সীমানা নির্ধারণ করা যাবে না। সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে সিএস পর্চা অনুযায়ী।”

সভায় আনোয়ার সাদাতের সভাপতিত্বে নদী কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য অতিরিক্ত সচিব কামরুন নাহার আহমেদসহ সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, গবেষক ও সরকারি কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।

এসময় বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ‘নদী বাঁচাও আন্দোলনের’ নেতারা নদী-জলাশয় দখল, দূষণের চিত্র তুলে ধরে নদী রক্ষা কমিশনের কাছে প্রতিকার চান।

Leave a Comment