পানির দামে বিক্রি হচ্ছে হাঁড়িভাঙ্গা আম দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে

করোনার কারণে স্থানীয় বাজারে পানির দামে বিক্রি হচ্ছে হাঁড়িভাঙ্গা আম। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে গত বছরের চেয়ে কেজি প্রতি ৭০ টাকা লোকসান গুনছে ব্যবসায়ীরা।

উপজেলার নবাবগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলোতে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে আম চাষীরা দীর্ঘদিন ধরে বাগান পরিচর্যা করে যথাসময়ে সেচ প্রয়োগসহ ব্যাপক পরিচর্যা করার পর এ বছর বাগানে গত বছরের তুলনায় আম উৎপাদন হয়েছে প্রচুর পরিমাণে। বর্তমানে কোভিড-১৯ এর কারণে খোদ ঢাকা শহরসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে আম বাজারে পরিবহনসহ ক্রয় বিক্রয়ে মূল্য অনেক কম। গত বছরের এ মৌসুমে হাড়িভাঙ্গা আম প্রতিকেজি ৮০/৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে ১৫/২০ টাকা কেজি দরে আম বিক্রি করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।


নবাবগঞ্জ উপজেলার ১’শ বিঘা জমিতে থাকা আম চাষী মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান- গত বছরের তুলনায় এবছর আম ক্রেতাদের সংখ্যা অনেকাংশে কম। যে বাগান ৯০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছিলাম, এবছর সে বাগান ৩০/৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে না। উপজেলার ২নং বিনোদনগর ইউনিয়নের আম ব্যবসায়ী মোঃ ছানাউল্লাহ জানান- লাভের আশায় অনেক কষ্টে ঋণ করে পয়সার যোগান দিয়ে বেশ কিছু আম বাগান ক্রয় করেছি। স্থানীয় বাজারে আম বিক্রি করে দেয়ায় একদিকে যেমন ক্রেতা কম অন্যদিকে চাহিদাও কম। আমের ফলন ভালো হওয়া সত্বেও এবছর বাজারে ধস নামার কারণে ও বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারি বিস্তার রোধে লকডাউনের ফলে আম ক্রেতা ও পরিবহন ব্যবস্থা ভালো না থাকায় মাথায় হাত পড়েছে। ব্যাপক ক্ষতির অংক গুনতে হচ্ছে আমাদের।

একটি বে-সরকারি জরিপে জানা গেছে- কৃষি ফসলী দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার উঁচু শ্রেনীর জমিতে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে হাড়িভাঙ্গা, আম-রোপালী, বোম্বাই, মিশ্রিভোগ সহ বিভিন্ন প্রজাতির আম চাষ হয়েছে। বাংলাদেশের তৃতীয় ফল সমবায় সমিতি লিঃ নবাবগঞ্জ উপজেলার ৮নং মাহমুদপুরে রয়েছে। ওই সমিতির সভাপতি মোঃ জিল্লুর রহমান জানান- ইতিপূর্বে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে চাপাই নবাবগঞ্জ আম গবেষনা ইন্সটিটিউট থেকে বিজ্ঞানীদের অংশগ্রহণে এ অঞ্চলে উন্নতমানের আম বিদেশে রপ্তানী করতে বিজ্ঞানীদের পরামর্শ অনুযায়ী শতশত বাগানে ব্যাগিং পদ্ধতি করা হয়েছিল। অনেক আশা বুকে নিয়েও ওই আমগুলো রপ্তানী করা সম্ভব হয়নি। সে অবস্থার অবসান না হতেই আবার চলতি মৌসুমে কোভিড-১৯ এর কারণে আম ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সরকারিভাবে সরেজমিন তদন্ত করে ভর্তুকির দাবী করেন সমিতির এই নেতা।

করোনা পরিস্থিতিতে যানবাহনের অভাবে পাইকারি ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকায় আম বাজারজাতকরণ নিয়েও যথেষ্ট চিন্তিত তারা।মে মাসের শেষে আম পাড়ার মৌসুম শুরু হওয়ার আগে আমের বাজারজাতকরণে সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপে চাষিরা আশাবাদী হয়ে উঠছিলেন। সে সময় বাজারে আমের দাম চাষিদের মনে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছিল। কিন্তু সারাদেশে কঠোর লকডাউন ঘোষণায় নবাবগঞ্জে আমের বাজারে নতুন সংকট তৈরি করেছে। ব্যাপারীরা আম কেনা বন্ধ করে দেওয়ায় আমাচাষিরা হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন।

আম বিক্রেতা ও আমচাষিদের মতে- কঠোর লকডাউন ঘোষণার কারণে বাজারে ক্রেতা নেই। আর সে কারণে আম বিক্রি হচ্ছে না। পাইকাররাও বাইরের জেলা থেকে আসতে ভয় পাচ্ছেন, যে কয়জন পাইকার এসেছেন লকডাউনের মধ্যে তাদের কেনা আম বিক্রি করা যাবে কিনা চিন্তায় আম কেনা বাদ দিয়ে অলস সময় কাটাচ্ছেন তারা।

Leave a Comment