পাখির কিচিরমিচিরে ঘুম ভাঙে দূর্গাপুর গ্রামের মানুষের

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় ‘পাখির গ্রাম’ হিসেবে পরিচিতি পেতে শুরু করেছে দূর্গাপুর গ্রাম। এই গ্রামে প্রতিদিন পাখি দেখতে আসে পাখি প্রেমি মানুষরা। আবার চুপিসারে কেউ পাখি শিকার করতে আসলে গ্রামবাসীর তোপের মুখে তারা টিকতে পারে না। গ্রামের মানুষ অতিথি পাখিগুলোকে পরিবারের সদস্যের মতো ভালোবাসেন। ইতোমধ্যে নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে এই গ্রামে গাছের ডালে ডালে পাখির দল রাত যাপন করে। ভোর হওয়ার সাথে সাথে পাখিরা কিচিরমিচির ডাকের মধ্য দিয়ে জানান দেয়, সারা দিনের মতো আমরা খাবার সন্ধানে বের হচ্ছি।

এই কিচিরমিচির শব্দে দুর্গাপুর প্রামানিক পাড়া, পার্শ্ববর্তী কুজাপাড়া গ্রামের মানুষের ঘুম ভাঙে। এমন করে প্রতিটি সন্ধ্যা নামে পাখির এমন কলতানে। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, গ্রামের গাছে গাছে যেন থোকায় থোকায় পাখির ফুল ফুটে আছে।

কয়েক দিন লাগাতার বৃষ্টিপাতে দূর্গাপুর গ্রামের পুকুর পাড়ে একটি কড়ই গাছ মাটি ধ্বসে পড়ে যাওয়ায় আবাসস্থল সংকটের কারণে বেশ কিছু পাখি এখন কুঁজাপাড়া গ্রামের বিভিন্ন গাছে বসতে শুরু করেছে।

রাণীনগর পরিবেশ ও পাখি সংরক্ষন কমিটির সদস্যরা ইতিমধ্যে ওই এলাকায় গিয়ে সর্বস্তরের জনসাধারণকে পরিবেশ বান্ধব এই পাখিগুলোকে শিকারি এসে মারা কিংবা বিরক্ত করতে না পারে সেই লক্ষ্যে জনসচেতনতামূলক আলোচনা ও লিফলেট বিতরণ করছে। স্থানীয়রা বলছে, এই গ্রাম দুটিকে বন বিভাগের পক্ষ থেকে ‘পাখি কলোনি’ হিসেবে ঘোষণা করা হলে পাখির প্রতি মায়া-মমতা আরো ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।

সরেজমিন জানা গেছে, উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে কাশিমপুর ও গোনা ইউনিয়নে মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে রতনডাড়ি খাল। এই খালের দুই পাড়ে অবস্থান দূর্গাাপুর ও কুঁজাপাড়া গ্রাম। এই দুই গ্রামে অর্ধ শতাধিক বিভিন্ন জাতের গাছের ডালে শতশত ধূসর বর্ণের শামুকখোল পাখি প্রতিদিন পড়ন্ত বিকেলে এই গাছগুলোতে আশ্রয় নেয়। গ্রামের পাশ্বর্তী নদী-নালা খাল-বিল আর ফসলের মাঠ থেকে নানা জাতের পোকা মাকড় ও শামুক ঝিনুক খেয়ে জীবন বাঁচে এই পাখিগুলোর। নিরাপদ আশ্রয় পেয়ে বাসা বেঁধে প্রজনন থেকে শুরু করে ডিম, বাচ্চা, সবকিছু এখানেই তারা সম্পন্ন করে। ফলে দিন দিন এই গ্রামে পাখির সংখ্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য এখানে প্রায় এক বছর ধরে বাস করছে এসব শামুকখোল পাখি। সারাক্ষণ চলে ওদের ডানা ঝাপটানো। কেউ বা উড়ে যাচ্ছে খাবার সংগ্রহ করতে। আবার কেউ খাবার মুখে করে নিয়ে এসে তুলে দিচ্ছে বাচ্চার মুখে। সারাদিন চলে তাদের এমন কর্মযজ্ঞ। সন্ধ্যায় পুরো পুকুর মুখরিত হয়ে ওঠে পাখির কল কাকলিতে। নির্বিঘ্নে রাত কাটিয়ে ভোর হলেই উড়ে যায়। দিনশেষে আবারও তারা নীড়ে ফিরে আসে।

পাখি দেখতে আসা হরিশপুর গ্রামের আব্দুল আহাদ বলেন, এমন সুন্দর দৃশ্য বর্তমান সময়ে পাওয়া বড় কঠিন। সকাল ও সন্ধ্যায় শত শত পাখির কলকাকলিতে মুখরিত এই শব্দ খুবই আনন্দদায়ক। আমার খুব ভালো লাগছে।

বাংলাদেশ জীববৈচিতত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশন (বিবিসিএ) নওগাঁ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পাখির প্রতি এই গ্রামের লোকজনের ভালোবাসা ও নিরাপত্তার দেওয়ায় এখানে পাখিগুলো বসে। এলাকাবাসী আরো সচেতন হলে এখানে ‘পাখি কলোনি’ গড়ে উঠতে পারে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রতিটি পশুপাখি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ভূমিকা রাখে। এদেরকে মানুষের কল্যাণে টিকিয়ে রাখতে হবে। দূর্গাপুর গ্রামে পাখি বসে এমন খবর প্রথম জানতে পারলাম। এই পাখিগুলোকে কেউ বিরোক্ত কিম্বা শিকার করছে এমন খবর পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাখির আবাসস্থল নিরাপদ রাখতে ওই এলাকার বসবাসরত জনগণকে সচেতন করাসহ প্রয়োজনে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা হবে।

Leave a Comment