তালেবানের সঙ্গে জি-৭ শর্ত সাপেক্ষে আলোচনায় প্রস্তুত

আফগানিস্তানের নতুন শাসকগোষ্ঠী তালেবানের সঙ্গে শর্ত সাপেক্ষে আলোচনা শুরুর এক পরিকল্পনার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোর নেতারা। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এ কথা জানান। তিনি বলেছেন, তাঁদের এক নম্বর শর্ত হলো, ৩১ আগস্টের পরও আফগানিস্তান থেকে দেশটি ছাড়তে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের নিরাপদে দেশত্যাগের সুযোগ দিতে হবে তালেবানকে। খবর আল-জাজিরার।

গত বছর দোহায় তালেবানের সঙ্গে সম্পাদিত শান্তিচুক্তি অনুযায়ী, এ মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সব সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা। ১৫ আগস্ট পশ্চিমা-সমর্থিত আশরাফ গনি সরকারকে হটিয়ে পুরো আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন তালেবান যোদ্ধারা। এরপর থেকে দেশটি ছাড়তে কাবুল বিমানবন্দরে জড়ো হচ্ছেন হাজারো আফগান। এ নিয়ে শুরু হয়েছে চরম বিশৃঙ্খলা। মারা গেছেন অন্তত ২০ জন। বিদেশি ও স্থানীয় লোকজনকে বিমানবন্দর থেকে সরিয়ে নিতে নিয়োজিত আছেন কয়েক হাজার মার্কিন সেনা।

এই পরিস্থিতিতে তালেবান নেতারা হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী সরিয়ে নেওয়ার সময়সীমা বাড়ানোর পদক্ষেপ তাঁরা মেনে নেবেন না। এই হুঁশিয়ারির মধ্যে ধনী দেশগুলোর জোট জি-৭–এর নেতারা মঙ্গলবার ভার্চ্যুয়ালি জরুরি বৈঠকে বসেন।

বৈঠকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস বলেন, ‘আজ আমরা জি-৭ নেতারা আফগানিস্তান থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে এক যৌথ দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারেই শুধু একমত হইনি; বরং তালেবানের সঙ্গে কীভাবে আমাদের আলাপ-আলোচনা চলবে, সেই রূপরেখার বিষয়েও আমরা মতৈক্যে পৌঁছেছি।’

বরিস বলেন, তালেবানের সঙ্গে এই আলাপ-আলোচনা শুরুর প্রথম শর্ত হলো, আফগানিস্তান ছাড়তে আগ্রহী ব্যক্তিদের (৩১ আগস্টের পরও) নিরাপদে দেশত্যাগের সুযোগ দিতে হবে সংগঠনটির নেতাদের। তাঁদের কেউ কেউ এটি না–ও মানতে পারেন। আমি আশা করি, অন্য নেতারা তা বিবেচনা করবেন। কেননা, অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, রাজনৈতিকসহ নানা বিষয়ে জি-৭–এর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যেভাবে আফগানিস্তান সংকট মোকাবিলা করছেন এবং দেশটিতে মার্কিন সেনাদের উপস্থিতির মেয়াদ বাড়াতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, তাতে জি-৭ নেতারা হতাশ কি না এমন একটি প্রশ্ন এড়িয়ে যান বরিস। তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তান থেকে আরও হাজারো মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। কিন্তু বিমানবন্দরের পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। দেশ ছাড়তে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য তা আতঙ্কজনক দৃশ্য হয়ে উঠেছে।’

বৈঠকের পর জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল সাংবাদিকদের বলেন, সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা পার হলে কাবুল বিমানবন্দর বেসামরিক কর্তৃপক্ষের অধীন পরিচালনা করা যায় কি না, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। শরণার্থীদের সহায়তা করতে আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশ যেমন পাকিস্তান ও ইরানের সঙ্গে কাজ করতে জার্মানি তৈরি আছে। তিনি বলেন, আফগানিস্তান থেকে বিদেশিদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কোনো নতুন তারিখ বৈঠকে নির্ধারণ করা হয়নি।

জি-৭–এর জরুরি বৈঠকে সভাপতিত্বকারী যুক্তরাজ্য বলেছে, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়ার সময়সীমা বৃদ্ধি করতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে অনুরোধ জানাবে তারা। ফ্রান্সও এই সময় বাড়াতে চাপ সৃষ্টির জন্য ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়সীমা মেনে সেনাদের প্রত্যাহার সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাইডেন।

বাইডেন মঙ্গলবার বলেছেন, আফগানিস্তান থেকে সামরিক-বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ যত দ্রুত শেষ করা যাবে, ততই ভালো। কাবুল থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার অভিযানে প্রতিদিন মার্কিন সেনাদের জন্য ঝুঁকি বাড়ছে। হামলার ঝুঁকির কারণে আফগানিস্তান থেকে দ্রুত চলে আসা দরকার বলে মনে করছেন তিনি।

এর আগের দিন তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহীন সতর্ক করে বলেছেন, ‘কোনো সময় বৃদ্ধি মানা হবে না। ৩১ আগস্ট একটা রেড লাইন (চূড়ান্ত সময়)। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিলম্ব হলে তা দখলদারির মেয়াদ বাড়ানো বলে গণ্য করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দখলদারি বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্য যদি অতিরিক্ত সময় চায়, তবে তার জবাব হবে ‘‘না’’। নতুবা এর ফল ভোগ করতে হবে।’

আফগানিস্তানের জনগণকে সহায়তা করা নৈতিক দায়িত্ব: ভন ডার লিয়েন

বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশটির জনগণকে সহায়তা করা নিজেদের সম্মিলিত নৈতিক দায়িত্ব বলে একমত পোষণ করেছেন জি-৭ নেতারা। জোটের বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

উরসুলা বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজেটে চলতি বছরের জন্য মানবিক সহায়তাবাবদ বরাদ্দ চার গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব দেবে কমিশন। এটি আফগানিস্তানের জনগণের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করবে।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ছাড়াও জি-৭–এর বাকি দেশগুলো হলো কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও জাপান।

Leave a Comment