ঢাকায় নামার পর আত্মগোপনে মুরাদ হাসান

কানাডা ও আরব-আমিরাতে ঠাঁই না পেয়ে ঢাকায় ফেরা সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ও সাংসদ ডা. মুরাদ হাসান নিরুদ্দেশ। রবিবার রাত থেকেই তার হদিস মিলছে না। নিজের ধানমন্ডির বাসায়ও যাননি। পরিবারের সদস্যরাও এ বিষয়ে কথা বলছেন না। নিজের ফোনটিও বন্ধ রেখেছেন তিনি। 

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নিজের নির্বাচনী আসনেও চরম নিন্দিত ও সমালোচিত হচ্ছেন ডা. মুরাদ। তার প্রতি নেতাকর্মীদের পরামর্শ, আপাতত জনসমক্ষে যত কম আসবেন, তত মঙ্গল দল ও সরকারের জন্য। তাকে দেখলেই মানুষের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। এখন তার কোনো বন্ধু ও স্বজন বলতে কেউ নেই। 

দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, কদিন আগেও প্রতাপশালী ছিলেন ডা. মুরাদ হাসান। কর্মী-নেতা-শুভাকাঙ্ক্ষী-বন্ধুর অভাব ছিল না। প্রশাসনও ছিল তার প্রতি সহযোগিতামূলক। সেই মুরাদ এখন যেন রাতারাতি নক্ষত্রচ্যূত। তার নাম নিতেও লজ্জা পান ঘনিষ্টরা। যে কারণে কানাডা থেকে দেশে না ফেরার জন্য তার প্রকৃত শুভাকাঙ্ক্ষীরা ফোনে পরামর্শও দিয়েছিলেন।

জানা গেছে, নিজের পরিবার থেকে তাকে পরামর্শ দেওয়া হয় যে কোনোভাবে হোক আপাতত বিদেশেই অবস্থান করার। কানাডায় প্রবেশে ব্যর্থ হয়ে তিনি পরিবারকে জানানোর পর তাকে পরামর্শ দেয়া হয় অন্তত দুবাই থেকে যান। 

জানা গেছে, দুবাই নেমেও তিনি ঢাকায় প্রভাবশালী দুজন ব্যক্তির কাছে ফোন করে তাকে আমিরাতের ভিসার ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ জানান। তবে সেই সহযোগিতাও পাননি। তখন  তাকে চরম অস্থিরতা ও উদ্বিগ্ন হয়ে দুবাই এয়ারপোর্টের তিন নাম্বার টার্মিনালে পায়চারি করতে দেখা গেছে। সেখানেও বেশ কজন বাাংলাদেশি তাকে দেখে চিনে ফেলায় তিনি কটূক্তিরও শিকার হন বলে জানা গেছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, রবিবার হজরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে মুরাদ হাসান অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল দিয়ে চলে যান অপরিচিত একজনের গাড়িতে করে। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল তিনি তার ধানমন্ডির নিজের বাসায় যাবেন। ওই বাসা তিনি নিজের হাতে কদিন আগেই সাজিয়েছিলেন। তবে তিনি সেখানে যাননি। পরে শোনা যায় তিনি তার এক ভাইয়ের বাসায় উত্তরায় আছেন। সোমবারও সেখানে খোঁজ নেয়া হয়েছে কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। আমাদের ধারণা তিনি আত্মগোপনেই থাকার সিদ্বান্ত নিয়েছেন। 

সম্প্রতি এক ফেসবুক পেজের লাইভে এসে খালেদা জিয়ার নাতনিকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ও অশালীন মন্তব্য করেন ডা. মুরাদ হাসান। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যেই চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে দুই বছর আগের একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। এতে ওই চিত্রনায়িকাকে ধর্ষণের হুমকি দিতেও শোনা যায় মুরাদকে।  

বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পদত্যাগ করেন তিনি। জামালপুরের এই সংসদ সদস্যকে আওয়ামী লীগের স্থানীয় কমিটি থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর তিনি গত বৃহস্পতিবার গোপনে কানাডার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। কিন্তু সেখানেও প্রবেশ  করতে না পেরে তিনি দেশে ফিরতে বাধ্য হন।

Leave a Comment