জনপ্রিয় বুদ্ধির খেলা ‘সুডোকু’র জনক আর নেই

বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় জাপানি বুদ্ধির খেলা সুডোকুর ‘জনক’ খ্যাত পাজল নির্মাতা মাকি কাজি মারা গেছেন।

মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) মাকি কাজির নিজ প্রতিষ্ঠান তার মৃত্যুসংবাদ প্রকাশ করে। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। দীর্ঘদিন পিত্তনালীর ক্যানসারে ভুগছিলেন তিনি।

পাজলের খেলা ছড়িয়ে দিতে মাকি কাজি জীবনে ৩০টিরও বেশি দেশে ভ্রমণ করেন। বছরের পর বছর ধরে তার কোম্পানির আয়োজনে অনুষ্ঠিত সুডোকু চ্যাম্পিয়নশিপগুলোতে বিশ্বের ১০০ দেশের প্রায় ২০ কোটি প্রতিযোগী এ পর্যন্ত অংশ নিয়েছেন।

১৯৫১ সালে জাপানের সাপ্পোরো শহরে জন্ম মাকি কাজির। কেইও ইউনিভার্সিটি থেকে ড্রপ আউট হয়ে পাজল ম্যাগাজিন নিকোলি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১৯৮০ সালের আগস্ট মাসে।

সুডোকুর জন্ম ইতিহাস অস্পষ্ট। তবে অনেকে দাবি করেন, ১৮শ শতাব্দীর সুইস গণিতবিদ ইউলার এর স্রষ্টা। আবার কেউ কেউ বলেন, পাজল গেমটি আরব বিশ্ব থেকে ভারত হয়ে চীনে পৌঁছেছিল, আর এটি ঘটেছিল ৮ম অথবা ৯ম শতাব্দীতে।

১৯শ শতকের শেষের দিকে ফরাসি সংবাদপত্রে সুডোকুর প্রাথমিক কয়েকটি ধরন প্রকাশিত হয়েছিল। এর একটির নাম ছিল ‘লা ক্যারে ম্যাজিক ডায়াবোলিক’ বা ‘অশুভ জাদুর বর্গ’ (এভিল ম্যাজিক স্কয়ার)। ১৮৯৫ সালের জুলাইয়ে লা ফ্রান্স পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল এটি।

তবে কিছু জায়গায় মার্কিন স্থপতি হাওয়ার্ড গার্নসকে পাজল গেমটির আধুনিক ধরনের স্রষ্টা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯৭০-এর দশকে ‘নাম্বার প্লেস’ নামে প্রকাশিত হতো এটি। মূলত এই গেমটিই ১৯৮৪ সালে মাকি কাজির নজরে পড়ে।

২০০৮ সালের এক সাক্ষাৎকারে মাকি বলেছিলেন, এটি খুব আকর্ষণীয় ধাঁধা ছিল, সমাধান করা মজার। কিন্তু ‘নাম্বার প্লেস’ নাম আমার ভালো লাগেনি। আমি এর একটি জাপানি নাম চাচ্ছিলাম।

তিনি গেমটির নাম ‘সুজি ওয়া ডোকুশিন নি কাগিরু’ ঠিক করেন, যার অর্থ দাঁড়ায় ‘সংখ্যাগুলো একক হতে হবে’। তবে সহকর্মীরা এর চেয়ে চিত্তাকর্ষক কোনও নামের জন্য চাপ দিতে থাকেন। ঠিক সেই সময় ঘোড়দৌড় দেখতে যাওয়ার তাড়া ছিল মাকির, তাই ‘মাত্র ২৫ সেকেন্ডের মধ্যে’ তিনি ঘোষণা দেন, গেমের নাম হবে সুডোকু।

বাকিটা ইতিহাস। সুডোকু দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে জাপানে। ২০০৪ সালের দিকে টাইমস অব লন্ডনে প্রকাশিত হওয়ার পর এটি রীতিমতো বৈশ্বিক উন্মাদনায় পরিণত হয়।

মাকি কাজি সুডোকুর ট্রেডমার্ক করাননি। ফলে এটি বাণিজ্যিকভাবে বিশাল সফলতা অর্জন করলেও তাতে আর্থিকভাবে খুব একটা লাভবান হননি এ জাপানি প্রকাশক। তবে বিশ্ববাসী ঠিকই তাকে ‘সুডোকুর গডফাদার’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।

২০০৭ সালে মাকি কাজি বিবিসি’কে বলেছিলেন, যখন কোনও ধাঁধার জন্য নতুন আইডিয়া দেখি, যার মধ্যে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে, আমি প্রচণ্ড খুশি হই। খুব উত্তেজিত হয়ে উঠি। এটি অনেকটা গুপ্তধন খুঁজে পাওয়ার মতো।

Leave a Comment