ছেলেরা কাঁদে না?

“ছেলেরা কাঁদে না। মেয়েদেরকেই স্যাক্রিফাইস করে চলতে হয়। ছেলেরা কাঁদবে কেন?” এমন কথা আমরা হরহামেশাই শুনে থাকি।

আমার  মনে হয় কি জানেন, ক্যান ভাই ছেলেরা কাঁদবে না? এটা লেখা আছে কোথাও? কাঁদলে কি হবে? দুনিয়া উলটে যাবে ?

আসলে সত্যিকারের মানুষরাই কান্না করে। আর আপনি কোনো একজনকে জড়িয়ে ধরে অথবা প্রিয়মানুষটার সামনে কান্না করছেন মানে এই নয় যে আপনি দূর্বল।সবর করছেন বলে এই না যে আপনি কাঁদতে পারবেন না।আর কাঁদা মানেই দূর্বল নয়।বরং আমি কাদছি মানে ‘আমি ভালোবাসি’ ‘আমি ছেড়ে যেতে অথবা হারাতে চাই না’

 .

 

রাসূলুল্লাহ্-ও তো সেদিন ঘাবড়ে গিয়েছিলেন।যেদিন ১ম জিবরাঈল (আ.)এসেছিলেন!তিনি তখন ছুটে এসে খাদিজা (র.)-কে আঁকড়ে ধরে কেঁদেছেন,ভরসা খুঁজেছেন,,খুঁজেননি বলুন? উনি কি পুরুষ নন?অথচ তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ!দ্বীন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়!মুজাহিদ।বীর।বীরশ্রেষ্ঠ ..

 

বদর যুদ্ধে যখন আবুল আস বন্দি হয়েছিলেন।সবাই মুক্তিপণ দিয়ে যখন ছাড়া পাচ্ছিলো তখন তার স্ত্রী যয়নব(র.) চিন্তিত ছিলেন ভীষণ!তার কাছে তো মুক্তিপণ দেবার মতো কিছুই ছিলো না।সম্বল বলতে মায়ের দেয়া একটা হার ছিলো।মায়ের স্মৃতিমাখা হারটা দিয়ে দিতে বুক হুহু করে উঠলো মেয়েটার।তবুও উপায় যে ছিলো না।

 

আবুল আসের ভাই হারটা নিয়ে মাদীনায় এলো। নবীজি মসজিদে বসে আছেন।এক সাহাবী তার হাতে মুক্তিপণ তুলে দিচ্ছিলেন । এবার দিলেন একটা হার।নবীজি সাথে সাথে বললেন,

-এটা কার মুক্তিপণ?

-আবুল আসের!

 

শুনুন,নবীজি কেঁদে দিয়েছিলেন।হ্যা তার দু’চোখ বেয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরতে শুরু করলো ।মনে পড়ে গেলো অনেক স্মৃতি,অনেক কথা। দাম্পত্য জীবনের সেরা সময়টার কথা।আকুল স্বরে বললেন ‘এতো “আমার খাদিজা”র হার’ ,

 

ব্যস্ আর না বলি।উনার চোখে জল এলো কেন?কাঁদলেন কেন উনি?তিনি তো দূর্বল নন।সারাজাহানের সর্দার তিনি। হাবিবুল্লাহ।রাসুলুল্লাহ!

 

তাহলে ?

 আচ্ছা যারা এভাবে কাঁদে তারা কি দূর্বল? তারা পুরুষ নন ? 

 

অথচ রাসুলুল্লাহ-র আদরের দুলালী যয়নবের স্বামী আবুল আসের কথা ভাবুন! তিনি একজন সাহাবা ছিলেন।তিনি কেন প্রিয়তমার বিচ্ছেদের যন্ত্রণায় পাগলপ্রায় হয়ে গিয়েছিলেণ।তারপর আবার পূনঃমিলনের এক বছর পর যায়নাব মারা গেলেন।আবুল আস ভীষণ শোকাহত হলেন।

মানুষ অবাক হয়ে দেখলো,

নবীজি আবুল আসের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে সান্তনা দিচ্ছেন।আবুল আস নবীজিকে বললেন “আল্লাহর কসম ইয়া রাসুলুল্লাহ!যয়নব ছাড়া পৃথিবীতে বেঁচে থাকা আমার জন্যে খুব কষ্টকর হবে।খুব্বি … ”

 

তিনি পুরুষ নন?

তিনি দূর্বল ?

.

 

কি ভুল বললাম? তবুও একশ্রেনি এসে বলবে আমরা কাঁদবো কেন আমরা দূর্বল নয়।আরে বাবা আপণাদের কি আমি সারাদিন বাচ্চাদের মত ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে বলেছি।আজীব ভাই আজীব !

.

.

মানুষ মানেই তার কষ্ট আছে।ছেলে মেয়ে সবারই কষ্ট আছে!ছেলেরা কষ্টটা দেখাতে পারে না সবার সামনে।তাই বলে এই না যে তারা কাঁদে না।তারাও কাঁদে,লুকিয়ে … 

এটা ঠিক যে সব ছেলেরা জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মত করে কাঁদে না।তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হয় তো, নির্দিষ্ট একজন যদি থাকে রব্ব-এর পরপর,যাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মত কাঁদা যায়।

 

তাকে জড়িয়ে ধরে একটু কাঁদলে কি হয় বলুন?নয়নযুগলে যদি ভালোবাসার উপস্থিত’ই না থাকে সেটা কিসের ভালোবাসা?

এতে কি আপনার গায়রত ধ্বংস হয়ে যাবে? অথচ আমাদের রাসূলুল্লাহ আর সাহাবারা ছিলেন গায়রতের উজ্জল দৃষ্টান্ত। 

 .

 

এমন ছেলে পাওয়া একেবারেই যাবে না যে তা ঠিক না।এমন হলে ক্ষতি কি যেই মানুষটা বাহিরের পুরো দুনিয়ার কাছে গম্ভীর থাকবেন আর নিজের একান্ত হালাল মানুষটার কাছে এসেই এমন বাচ্চাদের মতো হয়ে গেলো! হবে না কেনো! হয় ঠিকই।আল্লাহ কার ভাগ্যে কি রেখেছেন বলা যায় না।অতিরিক্ত স্বপ্ন দেখা ঠিক না তা মানি তবে আশা রাখতে কিসের মানা! আল্লাহ বলেছেন তো ,আমার কাছে চাও।আমরা চাইবো।দেয়া না দেয়াতেও তাঁরই ইচ্ছা।চাইতে তো আর মানা নেই!দুনিয়াতে না পেলেও আখিরাতে হলেও পাবে।চেয়েছো মানেই আল্লাহ শুনেছেন।আর আল্লাহ শুনেছেন মানেই সেই চাওয়া কবুল হয়ে গিয়েছে।যখন কল্যাণ তখন শুধু পাওয়ার অপেক্ষা …

______

 

শায়খুল ইসলাম ত্বকী উসমানী হাফিজাহুল্লাহর নিকট ভালোবাসার সংজ্ঞা(আবার বলিয়েন না তিনি দূর্বল,আমরা দূর্বল নয়)

 

ভালোবাসা কি?

ভালোবাসা হলো দুঃখ বেদনায়  হৃদয় পূর্ণ হওয়া।

নিজের আত্মার নির্যাস কারো কাছে অর্পণ করে অসহায় হয়ে পড়া।

 

তোমার পদযুগল যদি প্রেমের পথে চলতে থাকে তবে গন্তব্যের কামনা কেন করো?

প্রেমের পথের গন্তব্য তো খোদ নিজের পথে চলে নিজেই ক্লান্ত… 

 

ওহে বন্ধু! ভালোবাসলে যে মস্তিষ্কের আগে হৃদয়ের কুরবানি দেয়া শর্ত!

রাহে ইশকে মনসুরের মতো মস্তক কাঁটানো কি সবার জন্য সহজ?

আমাদের পাগলামিকে ফেরেশতারাও ঈর্ষার চোখে দেখে….

 

ভালোবাসা কি?

ভালোবাসা হলো কারো দরজায় চুমু খেয়ে পাগল হয়ে যাওয়া..

বুকের মাঝে কারো জায়গা দেওয়ার কাজ শুধু বুকই করতে পারে।

 

পাহাড় জানে ভালোবাসার জন্য কীভাবে চুর্ণবিচূর্ণ হয়ে যেতে হয়…

নয়ন তোমারে পাইনা দেখিতে তবুও রয়েছ নয়নে নয়নে…..

নয়নযুগল ভালোবাসার অনুপস্থিতি তো প্রেমেরই ত্রুটি….

 

©

Leave a Comment