গাছ পিপাসায় পানি দেয়?

কোন গাছ পিপাসায় পানি দেয়?

“গাছ তৃষ্ণায় পানি দেয়” কথাটি শুনলেই কেমন বিচিত্র মনে হয়, তাই না? আসলেই একটু অন্যরকম লাগে। সুবিশাল পৃথিবীর আনাচে কানাচে কত যে বৈচিত্র্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তার কতটুকু খোঁজ রাখি আমরা?

ভূগোলকারগণের মতে, আফ্রিকা মহাদেশ পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় ভূখণ্ড। কত যে বিচিত্র কাণ্ড কারখানা সেখানে ঘটে চলছে তার গণাগাঁথা নেই। দক্ষিণ আফ্রিকার জঙ্গলে এক অবিশ্বাস্য চরিত্রের গাছ রয়েছে যা স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে “বর্ষণ মুখর” গাছ নামে পরিচিত।

আম গাছের মতো বড়সড় ও ঝাঁকড়া হয় এই গাছগুলি। সূর্যের তাপে মানুষের গায়ের চামড়ায় যখন জ্বালা ধরিয়ে দেয়, তৃষ্ণায় যখন গলা পর্যন্ত শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়, তখন আমাদের সবচেয়ে বড় কাম্য হয়ে দাঁড়ায় এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি। কিন্তু গভীর বনাঞ্চলে ঠাণ্ডা পানি পাওয়া যাবে কোথায়? এমনই দুঃসময়ে যদি হাতের কাছে বর্ষণমুখর গাছের সন্ধান পাওয়া যায়, তখন আল্লহর প্রশংসা করে করে পারা যায় না।

গাছের ডালপালা ও পাতা বেয়ে অজস্য ধারায় নেমে আসে পানি। দিন রাত্রি সর্বক্ষণ নিরবিচ্ছিন্নভাবে পানিধারা গড়িয়ে পড়ার ফলে গাছের নিচে সৃষ্টি হয় রীতিমত একটি পুকুর। কি স্বচ্ছ সেই পুকুরের পানি। পানের উপযুক্ত ত বটেই। আবার ডাবের পানির মতো কিছুটা সুস্বাদুও। অবিশ্বাস্য হলেও হেসে উড়িয়ে দেবার মতো নয়। কারণ দক্ষিণ আফ্রিকার অন্তর্গত পেরু অঞ্চলে গেলেই চক্ষু ও কর্ণের বিবাদ ভঞ্জন হয়ে যাবে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, একটি গাছের পক্ষে এমন বিষ্ময়কর কাণ্ড ঘটানো কি করে সম্ভব হয়?
দক্ষিণ আফ্রিকা গ্রীষ্ম প্রান স্থান, রুক্ষ-রুষ্ট। সূর্যের উত্তাপের প্রখরতা এখানে প্রখরতর। গ্রীষ্মের শুকনো ঋতুতে রোদের তাপ এত প্রখর হয়ে ওঠে যেন আগুনের হল্কা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে চারদিক ঝলসে যাওয়ার মত অবস্থা। তখন বর্ষণ মুখর গাছ কাছাকাছি বাতাস থেকে বাষ্প সংগ্রহ করে। তারপর সেগুলো পাতায় গিয়ে পানি উৎপন্ন করে। তা-ই বৃষ্টির আকারে পাতা ও ডালপালার গা বেয়ে অজস্র ধারায় মাটির দিকে নেমে আসে। সে এক বিষ্ময়কর কাণ্ড!
গাছের গোড়ায় পানিতে একাকার হয়ে যায়। তা গড়িয়ে গিয়ে আশেপাশের নিচু জায়গায় অর্থাৎ খানা খন্দে জমা হয়ে জলাশয় গড়ে তোলে। সেই পানি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হওয়ায় আশে পাশের মানুষজন দলে দলে এসে পানি সঞ্চার করে নিয়ে যায়।

রিপোর্টার: মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া।

Leave a Comment