খেয়াল-খুশির বিরোধিতার প্রয়োজনীয়তা ও স্তরসমূহ জানুন।

খেয়াল-খুশির বিরোধিতা কেন করবেন?

যেসব বিষয় প্রকাশ্য গোনাহ্, সেসব বিষয়ে খেয়াল-খুশির বিরোধিতার চেষ্টা করলে যে কেউ নিজে নিজেই সাফল্য অর্জন করতে পারে। কিছু কিছু খেয়াল-খুশি এমনও রয়েছে, যেগুলো ইবাদত ও সৎ কর্মে শামিল হয়ে যায়। রিয়া, নাম-যশ, আত্মপ্রীতি এমন সূক্ষ্ম গোনাহ্ ও খেয়াল-খুশি, যাতে মানুষ প্রায়শই ধোঁকা খেয়ে নিজের কর্মকে সঠিক ও বিশুদ্ধ মনে করতে থাকে।

বলা বাহুল্য, এই খেয়াল-খুশির বিরোধিতা করাই সর্বপ্রথম ও সর্বাধিক জরুরী।

খেয়াল-খুশি বিরোধিতার স্তরসমূহ:

খেয়াল-খুশি বিরোধিতা করার তিনটি স্তর নিয়ে আলোচনা করব, ইন শা আল্লহ। যা কাযী সানাউল্লাহ পনিপথী (র.) তাফসীরে মাযহারীতে উল্লেখ করেছেন।

👉প্রথম স্তর এই যে, যেসব ভ্রান্ত আকিদা ও বিশ্বাস কুরআন, হাদিস এবং ইজমার বিপরীত, সেগুলো থেকে আত্মরক্ষা করা। কেউ এই স্তরে পৌঁছলেই সে সুন্নী মুসলমান কথিত হওয়ার যোগ্য হয়।

👉মধ্যম স্তর এই যে, কোনো গোনাহ্ করার সময় আল্লহর সামনে জবাবদিহির কথা চিন্তা করে গোনাহ্ থেকে বিরত থাকা।
সন্দেহজনক কাজ থেকেও বিরত থাকা এবং কোনো জায়েজ কাজে লিপ্ত হওয়ার ফলে কোনো নাজায়েজ কাজে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে, সেই জায়েজ কাজ থেকে বিরত থাকাও এই মধ্যম স্তরের পরিশিষ্ট।

এক্ষেত্রে হযরত নোমান ইবনে বশীর (রা:) এর বর্ণনানুসারে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি সন্দেহজনক কাজ থেকে বিরত থাকে, সে তার আব্রু ও ধর্মকে রক্ষা করে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি সন্দেহজনক কাজে লিপ্ত হয়, সে পরিশেষে হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে যাবে।”

সন্দেহজনক কাজ বলা হয় সেই কাজকে, যে কাজে জায়েজ এবং নাজায়েজ উভয়বিধ সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মনে সন্দেহ দেখা দেয় যে, কাজটি তার জন্য জায়েজ না নাজায়েজ।

উদাহরণত জনৈক রুগ্ন ব্যক্তি অজু করতে সক্ষম হয় কিন্তু অজু করা তার জন্য ক্ষতিকর হবে এ বিষয়ে পূর্ণ বিশ্বাস নেই, অর্থাৎ অযু তার জন্য ক্ষতিকর নাও হতে পারে। এমতাবস্থায় তায়াম্মুম করা জায়েজ কি-না, তা সন্দেহযুক্ত হয়ে গেল।
এমনিভাবে, এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে পারে কিন্তু কষ্ট হয়। এমতাবস্থায় বসে নামাজ পড়া জায়েজ কি-না তা সন্দিগ্ধ হয়ে গেল।

এরূপ ক্ষেত্রে সন্দিগ্ধ কাজ পরিত্যাগ করে নিশ্চিত জায়েজ কাজ করা তাকওয়া এবং খেয়াল-খুশির বিরোধিতা করার মধ্যম স্তর।

👉খেয়াল-খুশি বিরোধিতার তৃতীয় স্তর এই যে, অধিক জিকির, অধ্যবসায় ও সাধনার মাধ্যমে নফসকে এমন পবিত্র করা, যাতে খেয়াল-খুশির চিহ্নটুকুও অবশিষ্ট না থাকে।

এটা বিশেষ ওলীত্বের স্তর এবং তা সেই ব্যক্তিরই হাসিল হয়, যাকে সূফী বুযূর্গগণের পরিভাষায় ফানাফিল্লাহ্ ও বাকাবিল্লাহ্ বলা হয়।

এই শ্রেণির ওলীগণের সম্পর্কেই কুরআনে শয়তানকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে:
“আমার বিশেষ বান্দাদের উপর তোর কোনো ক্ষমতা চলবে না।”
এক হাদিসেও তাঁদের সম্পর্কে বলা হয়েছে:
” কোনো ব্যক্তি ততক্ষণ কামেল মু’মিন হতে পারে না, যতক্ষণ তার খেয়াল-খুশি আমার শিক্ষার অনুসারী না হয়।”

অন্তরে মলিনতা অনুভব করলে কী করবেন?
=> ইস্তেগফার।

কেননা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: আমি মাঝে মাঝে অন্তরে মলিনতা অনুভব করি। তখন আমি ১০০ বার ইস্তেগফার করে আল্লাহ তা’য়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি।

[তথ্যসূত্র: তাফসীরে আনওয়ারুল কুরআন।]

লেখা: মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া।

Leave a Comment