কেমন পশু কুরবানি করা জায়েজ এবং কেমন পশু কুরবানির দ্বারা কুরবানি সহীহ হবে না।

যে সকল পশু কুরবানি করা জায়েজ এবং যে সকল পশু কুরবানি করা জায়েজ নেই।

উট, গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া ব্যতীত অন্য কোনো পশু কুরবানি করা জায়েজ নেই। বন্য পশু কুরবানি করা জায়েজ নেই। ছাগল ও ভেড়া কেবল এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানি করা যাবে।

উট, গরু ও মহিষ সাত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানি করা যথেষ্ট হবে। শর্ত হলো, প্রত্যেক শরীকের ভাগ সপ্তমাংশ হতে হবে। অতএব কোনো শরীকের অংশ সপ্তমাংশ থেকে কম হলে কারো কুরবানি শুদ্ধ হবে না।

উট, গরু ও মহিষ কুরবানি করার দ্বারা যদি প্রত্যেক শরীকের উদ্দেশ্য হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, কেবল তখনই সাত ব্যক্তির তরফ থেকে কুরবানি করা শুদ্ধ হবে। কিন্তু যদি কুরবানি করার দ্বারা কোন শরীকের গোশত খাওয়া উদ্দেশ্য হয়, তাহলে কারোরই কুরবানি শুদ্ধ হবে না।

ছাগল ও ভেড়া কুরবানির কিছু শর্ত আছে। ছাগল এক বছর পূর্ণ হয়ে ২য় বছরে পদার্পণ না করা পর্যন্ত তা দ্বারা কুরবানি করা জায়েজ হবে না। আর ভেড়ার বয়স যদি ছয় মাসের বেশি হয় এবং এত মোটা সোটা হয় যে, দেখতে এক বছরের বাচ্চার মত মনে হয় তাহলে তা দ্বারা কুরবানি করা জায়েজ হবে।

গরু, মহিষ ও উট কুরবানির ক্ষেত্রে –
গরু ও মহিষ দুই বছর পূর্ণ হয়ে ৩য় বছরে পদার্পণ না করা পর্যন্ত তা দ্বারা কুরবানি জায়েজ হবে না।
আর উট পাঁচ বছর পূর্ণ হয়ে ছয় বছরে পদার্পণ না করা পর্যন্ত তা দ্বারা কুরবানি জায়েজ হবে না।

মূলত কুরবানির পশু মোটা সোটা এবং সর্ব প্রকার দোষ ত্রুটি থেকে মুক্ত হওয়া উত্তম।

যে পশুর জন্মগতভাবে শিং নেই, তা কুরবানি করা জায়েজ হবে। তদ্রুপ যে পশুর শিং ভেঙে গেছে তা কুরবানি করা জায়িজ আছে। কিন্তু যদি ভাঙার পরিমাণ মগজ পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তাহলে সেটা কুরবানি করা জায়েজ হবে না।

অনুরূপে খাসী কুরবানি করা জায়েজ আছে। বরং তা দ্বারা কুরবানি করা উত্তম। কেননা খাশীর গোশত উত্তম ও মজাদার।

তদ্রুপ পাঁচড়া যুক্ত মোটা পশু কুরবানি করা জায়েজ আছে। তবে চর্ম রোগাক্রান্ত পশু যদি অতি শীর্ণকায় হয়ে থাকে তাহলে সেটা কুরবানি করা জায়েজ হবে না। এভাবে অতিপ্রকৃতিস্থ পশু কুরবানি করা জায়েজ আছে, যদি অপ্রকৃতিস্থতা তাকে প্রতিপালনের ক্ষেত্রে কোনো বাধা সৃষ্টি না করে। কিন্তু যদি অপ্রকৃতিস্থতার কারণে তাকে প্রতিপালন করা সম্ভব না হয়, তাহলে তা কুরবানি করা জায়েজ হবে না।

অন্ধ পশু কুরবানি করা জায়েজ হবে না। অর্থাৎ যে পশুর দুটি চোখই নস্ট হয়ে গেছে। তদ্রুপ কোনো পশুর এক চোখ নষ্ট হলে সেই পশু দ্বারাও কুরবানি করা জায়েজ হবে না।
আবার, জবাই করার স্থান পর্যন্ত হেঁটপ যেতে অক্ষম এমন খোঁড়া পশু কুরবানি করা জায়েজ হবে না। পক্ষান্তরে, যে খোঁড়া পশু তিন পায়ে হাঁটে এবং হাঁটার সময় সাহায্য নেয়ার জন্য ৪র্থ পা মাটিতে রাখে, এমন পশু কুরবানি করা জায়েজ হবে।

এভাবে এমন দূর্বল পশু কুরবানি করা জায়েজ হবে না, দূর্বলতার কারণে যার অস্থিতে কোনো মগজ নেই। তদ্রুপ এমন পশু কুরবানি করা জায়েজ হবে না, যার অধিকাংশ কান কিংবা অধিকাংশ লেজ নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু যদি দুই তৃতীয়াংশ কান বাকি থাকে এবং এক তৃতীয়াংশ কান নষ্ট হয়ে যায় তাহলে সেটা কুরবানি করা সহীহ হবে।

তদ্রুপ দন্তবিহীন পশু কুরবানি করা জায়েজ নেই। অর্থাৎ এমন পশু যার দাঁত ভেঙে গেছে। কিন্তু যদি অধিকাংশ দাঁত বাকি থাকে তাহলে তা কুরবানি করা সহীহ হবে।

তদ্রুপ কানবিহীন পশু কুরবানি করা জায়েজ হবে না। আর সেটা হলো এমন পশু যার জন্মগতভাবেই কান নেই। অনুরূপ ভাবে, ওলানের বাঁট কাটা পশু কুরবানি করা জায়েজ নেই।

এই সমস্ত ফিকহ প্রদান করেছেন- “হযরত মাওলানা শফীকুর রহমান নাদভী (র:)

reporter: মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া।

Leave a Comment