করোনায় ১৫ দিন কারখানা বন্ধ থাকলে ৩ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ ধ্বংস অনিবার্য

আমার জানা মতে তিনটা দেশের অর্ডার এখন আমাদের দেশের কারখানা গুলোতে গ্রহণ করার অপেক্ষায় আছে, বড় ক্যাপাসিটি গুলো গ্রহণ করে ফেলেছেন, কেউ কেউ নিজেদের ক্যাপাসিটির বাইরে ও বেশ কিছু অর্ডার নিয়ে ফেলেছেন, বেশ কিছু অর্ডার প্রোডাকশন ও শুরু হয়ে গেছে। কেউ মেশিন বাড়িয়ে, কেউ লোকবল বাড়িয়ে, কেউ ডাবল শিফট করে এই বাড়তি অর্ডার গুলোকে সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করার চেষ্টা করছেন।

আপনারা সোশ্যাল মিডিয়াতে ও দেখছেন সকলেই অর্ডার, সাবকন্টাক্টের জন্য হন্যে হয়ে কারখানা খুঁজছেন।

যে মুহূর্তে আমাদের হাতে ২৫% থেকে ৩০% বেশি অর্ডার আছে, সেই মুহূর্তে এই সিদ্ধান্ত অনেক বড় আত্মঘাতী হয়ে যাবে বলে আমি মনে করি।

১৫ দিন কারখানা বন্ধ থাকলে আমাদের ৩ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ প্রোডাকশন বন্ধ থাকবে। এই ৩ বিলিয়ন অর্ডার আমরা পরে এক মাস জুড়ে ও করতে পারবোনা কারণ ওই পনের দিনের ( ৫ই আগস্টের পরে ) ও বাড়তি অর্ডার আমাদের কারখানা গুলোতে নেয়া আছে বা অপেক্ষমান তালিকায় আছে।

আমরা আশা করছিলাম ১৯/২০ তারিখ থেকে ২৪ বা ২৫ তারিখ পর্যন্ত হয়ত বন্ধ থাকবে। এবং তারপর থেকে প্রোডাকশনে ফিরতে পারবো, কিন্তু এখন ১৯ থেকে ২৩ তারিখ মোট ৫ দিন সহ আরো ১৩ দিনের বন্ধের হিসাব কষলে, ব্যাপারটা কত দিনে গড়াচ্ছে তা সংশ্লিষ্ট মহল নিশ্চয়ই বিচক্ষণতার সাথে খতিয়ে দেখবেন !

সারা বিশ্বে যেখানে অর্ডারের হাহাকার চলছে ঠিক সেই মুহূর্তে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে অর্ডারের অভাবে নাই। আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত এই মুহূর্তে নেয়ার মত বিচক্ষণতা খুব জরুরী।

আমরা এমনিতেই শিপমেন্ট যথা সময়ে দিতে পারিনা , সে অবস্থায় ১৫ দিন প্রোডাকশন বন্ধ করে দিলে আমাদের বিশাল মাপের ধ্বংস অনিবার্য হয়ে যাবে।

আমাদের স্টাইল চেঞ্জ হলে ৩ থেকে ৭ দিন সময় লাগে প্রোডাকশন পিকে উঠতে, কারখানা যদি বন্ধ থাকে তাহলে তার পরে আরো সাতদিন লাগবে প্রোডাকশন পিকে আসতে। তার মানে ৩ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার হুমকির মুখে পরে যাবে এই ব্যাপারে নিশ্চিত বলে দেয়া যায়।

এত সুন্দর সুষ্ঠ ভাবে আমরা কারখানা গুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করেছি যে কোন ধরণের করোনা সংক্রমণের উল্লেখযোগ্য কোন বিপদ আমাদের কোন কারখানাতেই ঘটেনি ইনশা-আল্লাহ।

সকল প্রফেশনালদের কাছে উদাত্ত আহবান , খুব শান্ত শিষ্টভাবে, যৌক্তিকভাবে, নিজ নিজ অবস্থান থেকে এই ব্যাপারটা নিয়ে মন্তব্য করে,
( লাইক, কমেন্ট, শেয়ার ও ট্যাগ করে ) সরকারের এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ব্যাপারে সাহসী ভূমিকা রাখবেন।

মনে রাখবেন এই সরকার কিন্তু যথেষ্ঠ সাহায্য করেছে বলে আমরা এখন পর্যন্ত এই গার্মেন্টস সেক্টর নিয়ে কোন প্রকার ডিজাস্টারের সম্মুখীন হইনি। দয়া করে সরকারকে সাহায্য করুন। ইন্ডাস্ট্রিটাকে নিয়ে কেউ যাতে ষড়যন্ত্র না করতে পারে সেই ব্যাপারে সজাগ এবং বিচক্ষণ ভূমিকা পালন করুন।

কেন আমাদের দেশে ২৫% থেকে ৩০% অর্ডার এই মুহূর্তে বেশি আছে তার কারণ গুলো নিম্নরুপঃ

🔹চায়নার প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের নেতিবাচক ভূমিকার কিছু অর্ডার এখন মার্কেটে ঘুরছে , যে দেশ এই সকল অর্ডার ভালোভাবে ক্যাটারিং করতে পারবে তারা এই সকল অর্ডারের জন্য পার্মানেন্ট ভেন্ডরে পরিণত হবে।

🔹ভারতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে , তাদের কারখানা গুলো বন্ধ থাকায় আরো কিছু অর্ডার মার্কেটে আছে , যে সমস্ত বড় ব্র্যান্ড ওই সকল অর্ডার ভারতে দিতে পারছেনা তারা স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের দেশের কারখানা গুলোর সাথে নেগোসিয়েশন করছে।

🔹মায়ানমারে সেনাবিদ্রোহের কারণে দেশের পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে যাওয়ায় তাদের অসংখ্য কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে , সেই অর্ডার গুলোর জন্য বাংলাদেশ এখন অনেক বেশি পছন্দের তালিকায় আছে।

🔹 ইউরোপ আমেরিকায় ভ্যাকসিন দেয়ার কারণে এখন তারা অনেকখানি স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ফিরে আসতে শুরু করেছে, তাই সে সকল দেশ থেকেও কার্যাদেশ বেশি আসছে।

আমার কয়েকটা পরামর্শ আছে এই মুহূর্তের জন্য।

১। একজন এক্সপার্টের সাথে বসে আপনার কারখানার সঠিক ক্যাপাসিটি ক্যালকুলেট করে বের করে ফেলুন। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আপনার কারখানার ম্যান আওয়ার অনুযায়ী ক্যাপাসিটি ইউটিলাইজেশন ৩০% এর নিচে।

২। দ্রুততার সাথে কিভাবে বর্তমান ক্যাপাসিটি ইউটিলাইজেশন বাড়িয়ে ২০% বেশি প্রোডাকশন দেয়া যায় তার সকল বন্দোবস্ত করে ফেলতে হবে।

৩। উপরোক্ত কাজ গুলো করার পর. ধরুন এখন আপনার ১৮ মেশিনের লে-আউটে ২৫০০ পিস্ টি-শার্ট তৈরী করতে পারেন, যদি দুই তিনটা মেশিন বেশি দিলে ৩০০০ পিস্ বেশি প্রোডাকশন হয় তাহলে মাথা ঠান্ডা করে ২০% বেশি শিপমেন্ট করা সম্ভব।

৪। বর্তমানে অনেক কারখানা ডাবল শিফট চালু করেছে এবং ৫০% বেশি প্রোডাকশনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে , এজন্য তারা সকল প্রকার কমপ্লায়েন্স , নতুন বাজেট, নতুন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এর সকল বন্দোবস্ত করে নিয়েছে। আপনার কাছে যদি আগামী সিজন পর্যন্ত ৫০% বেশি অর্ডার এর প্রজেকশন থাকে , এবং আপনি যদি আগামী সিজনেও ওই পরিমান বেশি অর্ডার নিয়ে আস্তে সক্ষম হন তাহলে আপনার জন্য ডাবল শিফট একটা নতুন টুল হতে পারে।

৫। কিছু কারখানা আছে যেখানে সেমী অটো , কিংবা অটোমেশিনের ব্যবহার কম , সেই কারখানা গুলোতে কিছু অটো মেশিনের ব্যবহার বাড়ালে ৫% প্রোডাকশন কিন্তু সংখ্যায় বেড়ে যাবে। একটু বাজেট , খরচ ক্যালকুলেট করে অবশ্যই আপনার নতুন প্ল্যানিং করা দরকার।

আমার নিজস্ব যুক্তি হল।

১। খোলা রাখলে ৫০% চান্স আছে আমাদের করোনা আক্রান্ত হবার। যদিও আমাদের দরিদ্রতম মানুষগুলোর করোনা একেবারে শুন্যের কোঠায়।
২। বন্ধ রাখলে আমাদের ৫০% চান্স আছে না খেয়ে থাকার।
৩। বন্ধ রাখলে আমাদের ১০০% চান্স আছে অর্ডার গুলো ক্যানসেল হয়ে যাওয়ার।
৪। বন্ধ রাখলে ১০০% চান্স আছে আমাদের কারখানা গুলো চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়ার।

Leave a Comment