কবি শঙ্খ ঘোষ আর নেই

প্রখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষ আর নেই। বুধবার সকাল সাড়ে এগারটার দিকে তিনি ৮৯ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর সাথে সাথে বাংলা কবিতার এক যুগের সমাপ্তি ঘটেছিল, বাংলা সাহিত্যের এক যুগের সমাপ্তি ঘটে।

শঙ্খা ঘোষ বেশ কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। ২১ শে জানুয়ারী তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে কিছুদিন হাসপাতালে ছিলেন। জ্বর এবং পেটের সমস্যা দেখা দেয়। তারপরে তার করোনার পরীক্ষা করা হয়েছিল। ১৪ ই এপ্রিল বিকেলে জানা গেছে যে তিনি আক্রান্ত হয়েছেন। সুতরাং কোভিড সংক্রমণ ধরা পরে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে বাড়িতে নির্জনতা ছিল। তবে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। একপর্যায়ে তাকে ভেন্টিলেটর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চিকিৎসকদের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে কবি চলে গেলেন। বেলা সাড়ে এগারোটায় ভেন্টিলেটরটি খোলা হয়েছিল।

শঙ্খা ঘোষের আসল নাম চিত্তপ্রিয়া ঘোষ। তাঁর পিতা মনিন্দ্র কুমার ঘোষ এবং মা হলেন আমলা ঘোষ। তিনি ১৯৩৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের বর্তমান চাঁদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়া। তবে শাঁখা ঘোষ পাবনায় বড় হয়েছেন। পিতার কর্মক্ষেত্রে তিনি বেশ কয়েক বছর পাবনায় অবস্থান করেন এবং সেখানে চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপীঠ থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৫১ সালে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলায় আর্ট ডিগ্রি এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

কর্মজীবনে তিনি যাদবপুর এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৯২ সালে তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। দীর্ঘজীবনে কবি বিভিন্ন চরিত্রে দেখা গেছে। তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্বভারতীর মতো প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষকতা করেছেন। তিনি আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখকদের কর্মশালায় অংশ নিয়েছিলেন। কয়েক বছর আগে ‘মতি’ শিরোনামের একটি কবিতায় তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন।

বাংলা কাব্য জগতে শঙ্খ ঘোষের অবদান অপরিসীম। ‘দিন ও রাত’, ‘বাবরের প্রার্থনা’, ‘বিজ্ঞাপনে মুখ ঢাকা’, ‘গন্ধর্ব কবিতা’ তাঁর উল্লেখযোগ্য কবিতার বই। রবীন্দ্রনাথ বিশেষজ্ঞ হিসাবেও তাঁর খ্যাতি ছিল।


শাঁখা ঘোষ তাঁর দীর্ঘ সাহিত্যিক জীবনে একাধিক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৭৭ সালে তিনি তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ বাবরের প্রার্থনা গ্রন্থের জন্য দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার সাহিত্য একাডেমি পুরষ্কার পেয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালে তিনি কন্নড় থেকে ‘রক্তকল্যাণ’ নাটকটি বাংলায় অনুবাদ করেন এবং সাহিত্য একাডেমী পুরষ্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি রবীন্দ্র পুরষ্কার, সরস্বতী সম্মান, জ্ঞানপীঠ পুরষ্কার পেয়েছেন। ২০১১ সালে তিনি পদ্মভূষণ পুরষ্কার পেয়েছিলেন।

Leave a Comment