কণ্ঠরোধের নতুন বৈশ্বিক অস্ত্র পেগাসাস

ব্যক্তিদের স্মার্টফোনে ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানের তৈরি সফটওয়্যার দিয়ে নজরদারির ঘটনা ফাঁস বিশ্বের ৫০টির বেশি দেশে গুরুত্বপূর্ণ । তেলসমৃদ্ধ তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সরকারের রোষানলে পড়েন খাদিজা ইসমাইলোভা দেশ আজারবাইজানে ক্ষমতাসীন পরিবার নিয়ে সংবাদের জন্য । তাঁর ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে ,এই অনুসন্ধানী সাংবাদিক বুঝতে পারেন । তবে আত্মীয়–বন্ধুদের অনেককেই তাঁর ওপর গোয়েন্দাগিরির জন্য বলা হয়েছিল বলে জানতে পেরেছিলেন তিনি । তাঁর ঘরে গোপনে ক্যামেরা বসানো হয় একপর্যায়ে রাজধানী বাকুতে ।অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে এক সহকর্মীকে আত্মহত্যার প্ররোচনার । তার পরে কর ফাঁকির অভিযোগও আনা হয় । ইসমাইলোভার সাত বছরের কারাদণ্ড হয় । তবে দেড় বছর পর জামিনে কারামুক্ত হলেও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় পাঁচ বছরের জন্য ।

যখন ইসমাইলোভা তুরস্কের আঙ্কারার উদ্দেশে উড়োজাহাজে ওঠেন, তখন তিনি মনে করেছিলেন সবকিছুই যেন পেছনে ফেলে যাচ্ছেন এই নিষেধাজ্ঞা শেষে গত মে মাসে । সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তির গোয়েন্দা নজরদারির অস্ত্র সঙ্গী করে নিয়ে যান খাদিজা ইসমাইলোভা কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি, নিজের অগোচরে । বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ২০০ সাংবাদিকের মধ্যে একজন, যাঁদের স্মার্টফোনে পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে নজরদারি চালানো হয়েছে খাদিজা ইসমাইলোভা । তবে পেগাসাস স্পাইওয়্যারের নির্মাতা ইসরায়েলি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপ।

এমন ৫০ হাজারের বেশি ফোন নম্বরের তথ্যভান্ডার পেয়েছিল প্যারিসভিত্তিক অলাভজনক সংবাদ সংস্থা ফরবিডেন স্টোরিজ পেগাসাস ব্যবহার করে তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বা চেষ্টা করা হয়েছে । ওই নম্বরগুলো ধরে অনুসন্ধান চালায় বিভিন্ন দেশের ১৭টি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম পরে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতা নিয়ে । তবে কয়েক মাস ধরে চলা এ অনুসন্ধানে যুক্ত ছিলেন ৮০ জনের বেশি সাংবাদিক । অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাইবার সিকিউরিটি ল্যাবে কিছু নম্বর নিয়ে পরীক্ষা চালানো হয় ।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ফোন নম্বর লক্ষ্যবস্তু করেছে ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপের অন্তত ১০টি গ্রাহক সংস্থা ২০টি দেশের ১৮০ জন সাংবাদিকের । সৌদি আরবের মতো কর্তৃত্ববাদী দেশ থেকে শুরু করে আছে যুক্তরাজ্য, ভারত ও মেক্সিকোর মতো গণতান্ত্রিক দেশের সরকারি সংস্থাও এসব গ্রাহকের মধ্যে বাহরাইন, মরক্কো ছিলেন । আফ্রিকার টোগো ও রুয়ান্ডার মতো সব দেশেই তা করা হয়েছে এই নজরদারি ছড়িয়েছে বিশ্বজুড়ে, ইউরোপের হাঙ্গেরি ও আজারবাইজান থেকে শুরু করে । তবে নজরদারির আওতায় শুধু সাংবাদিক নন, রয়েছেন রাজনৈতিক নেতা, মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নির্বাহী, ধর্মীয় নেতা, গবেষক, এনজিও কর্মী, সরকারি কর্মকর্তা । তবে এমনকি কোনো কোনো দেশের ক্ষমতাসীন পরিবারের সদস্য, সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের ওপরও নজরদারি চালানো হয়েছে বলে জানা যায় ।

Leave a Comment