এবার রেমিট্যান্সে বড় ধস

গত মাসে এক আলোচনায় প্রশ্ন তুলেছিলাম প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সের জাদু কি শেষ হয়ে যাচ্ছে? বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শক্তির জায়গা বৈদেশিক খাত। এতে কোনো ভাঙন ধরছে কি না, এখন সেই দুশ্চিন্তা আসছে। জুলাই মাসে রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ দুই খাতেই ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তখন অনেকে সেটা নিয়ে আলোচনা করেছেন। আগস্টে নতুন তথ্যেও দেখা গেল, রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে আরও ৮ শতাংশ প্রবাহের পতন হয়েছে।

দেড় বছর ধরে রেমিট্যান্স যে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছিল, সেটাকেই আমি রেমিট্যান্সের জাদু বলেছি। জুলাই-আগস্ট মাসের তথ্য বলছে, রেমিট্যান্স প্রবাহের জাদু ক্ষীণ হয়ে আসছে। গত মাসেও বলেছিলাম, আবারও তা বলছি, ম্লান হয়ে আসছে। জাদু হলো সেটাই যা অলৌকিক, যাকে বাহ্যত কারণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। তবে এটা বলা প্রয়োজন যে অর্থনীতির প্রয়োজনের নিরিখে বিষয়টি বিভিন্নভাবে দেখার সুযোগ আছে।

প্রথম যে প্রশ্নটি আসে তা হলো গত দেড় বছরের অস্বাভাবিক রেমিট্যান্স প্রবাহে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল তার মূল কারণ কী? প্রথম কারণ হিসেবে বলা হয় যে সরকারের পক্ষ থেকে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে ২ শতাংশ প্রণোদনা বড় ভূমিকা রেখেছে। বেসরকারিভাবে হুন্ডির মাধ্যমে যে রেমিট্যান্স আসত, তা সরকারি বা ব্যাংক খাতে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। তবে প্রবাহ না বাড়লে প্রতিস্থাপনের সুযোগ ক্রমান্বয়ে সীমিত হয়ে যাবে। আরেকটি কারণ, সম্প্রতি ব্যাংক পদ্ধতিতে অর্থ পাঠানো সহজ করা হয়েছে। কিছু উৎস দেশেও প্রেরণকারীর জন্য বৈদেশিক লেনদেন সহজতর করা হয়েছে।

এ ছাড়া তৃতীয় কারণ আমরা দেখেছি করোনার কারণে বিধিনিষেধ আরোপ থাকায় আন্তর্জাতিক যাতায়াত বন্ধ ছিল, হাতে হাতে যে অর্থ আসত তা বন্ধ হয়ে যায়। প্রেরণকারীরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রেমিট্যান্স পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্য থেকে বহু মানুষ ফেরত এসেছেন। তাঁরা ফিরে এসেছেন তাঁদের শেষ সঞ্চয় নিয়ে। অর্থাৎ এই প্রবাহ চলমান আয় নয়, কর্মচ্যুত অনাবাসীদের শেষ সঞ্চয়।

শেষ যেটা বড় কারণ হিসেবে বলা যায়, বাংলাদেশে যখনই কোনো বড় ঘটনা ঘটে নির্বাচন ও ঈদসহ, তখন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনের কাছে প্রবাস থেকে টাকা পাঠানোর গতি বেড়ে যায়। যেমন অনেকেই গত বছর অতিমারির কারণে পরিবার-পরিজনের জন্য বেশি করে অর্থ পাঠিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হলো অব্যাহতভাবে এই রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব কি না। সে ক্ষেত্রে বলতে হয় ওপরের কারণগুলোর প্রাথমিক ধাক্কায় সুফল এনেছে, এখন তা অব্যাহত থাকবে কি না সেটাই প্রশ্ন।

Leave a Comment