এক বছরে ১০১ জন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০২১ সালে ১০১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা যায়, আত্মহত্যাকারীদের ৬১ শতাংশের বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আর আত্মহত্যার প্রবণতা ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্রদের বেশি।
দেশের প্রায় ৫০টি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার আত্মহত্যার সংবাদ বিশ্লেষণ করে সংখ্যাটি পেয়েছে আঁচল ফাউন্ডেশন। আজ শনিবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করবে সংগঠনটি। আঁচলের হিসাবে, ৫০টির মতো বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও অর্নাস কলেজের শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা করেছেন।আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, দুটি জাতীয় দৈনিকের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২০ সালে ৭৯ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছিলেন।

আঁচলের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত বছর আত্মহত্যা করা ১০১ জনের মধ্যে ৬২ জন বা ৬১ দশমিক ৩৯ শতাংশই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। একই সময়ে মেডিকেল কলেজ ও অনার্স কলেজের ১২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন, যা মোট আত্মহত্যাকারীর ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। গত বছর ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার ২২ দশমিক ৭৭ শতাংশ, যা সংখ্যায় ২৩।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, ‘এক বছরে এতগুলো প্রাণ চলে যাওয়ার খবর ভীতিকর। তার মতোই ভীতিকর হলো বিষয়টি নিয়ে কেউ কিছু ভাবছে না। অথচ আমাদের দেশে প্রতিবছর আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে।’


আঁচলের হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ জন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ৩ জন আত্মহত্যা করেছেন।দেখা গেছে, ২২ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি। এই বয়সসীমার ৬০ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। অন্যদিকে ১৮ থেকে ২১ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যা করেছেন ২৭ জন।আঁচলের গবেষণা থেকে দেখা গেছে, গত বছর আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ৬৫ জন ছাত্র, অর্থাৎ আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৪ দশমিক ৩৬ শতাংশই ছাত্র। ছাত্রীদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ছাত্র গত বছর আত্মহত্যা করেছেন।করোনাকালে সারা দেশেই বেড়েছে আত্মহত্যার প্রবণতা। আঁচল বলছে, আর্থিক টানাপোড়েন, লেখাপড়া ও পরীক্ষা নিয়ে হতাশা, পারিবারিক সহিংসতা, অভিমান—এসব কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।

কী করছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মহত্যা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রতিরোধযোগ্য। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলে মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা ও এর জন্য অবকাঠামো দরকার। এ জন্য প্রয়োজন অর্থের। কিন্তু অধ্যাপক কামাল উদ্দিন জানান, এর জন্য বিশেষ কোনো বরাদ্দ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নেই বললেই চলে। তিনি বলেন, বছর দশেক আগে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের হলে একজন করে মনোবিজ্ঞানী রাখা হয়েছে। কিন্তু ছাত্রদের হলে সেই ব্যবস্থা নেই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। সেই বিবেচনা থেকে এখানে আরও বেশি জনবল রাখা উচিত। আরও বাজেট থাকা উচিত। কিন্তু সেসবের বালাই নেই।

আত্মহত্যা প্রতিরোধে কিছু কিছু উদ্যোগ অবশ্য সীমিত পরিসরে শুরু হয়েছে। এর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছরের নভেম্বরে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি কাউন্সেলিং সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা এখানে কাউন্সেলিং করাচ্ছেন বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক আইনুল ইসলাম। তিনি জানান, এর জন্য লোকবল ও বাজেট চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে আবেদন করা হয়েছে । রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ ও একটি মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশ কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের সেবা দেওয়া হয় বলে জানান উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার। কোনো শিক্ষার্থীর সমস্যা হলে শিক্ষকেরা জানালে তবেই সেখানে সেবা পাওয়া যায়। হলে কোনো পৃথক ব্যবস্থা নেই। উপাচার্য বলেন, এটার প্রয়োজন। লোকবল ও অর্থের সংস্থান হলে এটা করা হবে।

Leave a Comment