একজন স্ত্রীর আবেগী চিঠি

প্রিয়ম,

আবেগমাখা শব্দমালায় আমায় আর গাঁথো না কেন? ব্যস্ততার ভীড় ঠেলে আমার জন্য কি কয়েক মুহূর্ত রাখা যায় না? আর কিছু নয়, শুধু কয়েক লাইনের চিরকুট।

যাপিত জীবনের কোলাহলে তুমি হারিয়ে গিয়েছো। তোমার অভ্যাসে আর আমি নেই। কেন বলতে পার?

বিয়ের পর রোজ সকালে ড্রেসিংটেবিল বসতেই চোখে পড়তো তোমার চিরকুট। ভাঁজ খুলে দেখতাম তুমি লিখেছো, ” প্রিয়া, আজ চোখ রাঙাবা গাঢ় কাজলে। ঘুম জড়ানো চোখ খুলেই যেন দেখতে পাই তোমার কাজল রাঙা আঁখি।”

দুপুরে একসাথে একই প্লেটে খেতাম দু’জনে। খাওয়া শেষে তুমিই আগে উঠে যেতে। পরে প্লেট উঠাতেই দেখি প্লেটের নিচে চিরকুট। ভাঁজ খুলতেই টুপ করে পরে যেত পাঁচশত টাকার একটি চকচকে নোট। সাদা কাগজে লেখা থাকতো, “আমার পক্ষ থেকে সামান্য হাদিয়া। রান্না অমৃত হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।” আচমকাই আমার চোখ ভিজে উঠতো। রান্না খারাপ হলেও কখনো অভিযোগ আসেনি দুপুরের সেই চিরকুটে।

রাতে ফেরার আগেই ফোনে মেসেজ আসতো চিরচেনা সেই নাম্বারটি থেকে। তাতে লেখা থাকতো, “আজ ঢাকাই মসলিনের সেই শাড়িটা পরবে। খোপা খালি রেখ। আমি ফুল নিয়ে আসব, ইন শা আল্লহ। আর হ্যাঁ, সুরমা দিতে ভুলো না কিন্তু।”

আমি ওভাবেই নিজেকে সাজিয়ে রাখতাম। তুমি একেকদিন একেক ফুল এনে খোপায় গুঁজে দিতে। আমি তখন তোমারই আনা চকলেট, আচার কিংবা আইসক্রিম খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। ফুল পরিয়ে তুমি আমার সামনে এসে বসতে। অপলকে তাকিয়ে থাকতে আমার পানে। তোমার চোখে চোখ পড়তেই আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলতাম। তুমি তখন আমার চিবুক স্পর্শ করে মুখটা উঁচিয়ে ধরতে। আবারো লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠতো আমার মুখ।

তোমার মনে পড়ে না এসব দিনের কথা?
ভুলে গেছো-
আঁধার রাতে নিয়ন আলোয় রাস্তায় হাটার স্মৃতি?
বর্ষার জলে আহ্লাদী করার সুখময় দিনগুলি?
কেন পাই না আর চিরকুট যত্রতত্রে?
কেন আমার খোপা এখনও খালি থাকে?

আমি পুরোনো হয়ে গেছি? নাকি তোমার ইচ্ছেরা মরে গেছে?
সে যাইহোক,
আমি আমার আগের সেই প্রিয়মকে চাই। তুমি ফিরে এসো প্লিজ।

ইতি
তোমারই প্রিয়া

লেখা: মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া

Leave a Comment