উযূর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিধান

উযূর বিধান।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ! তোমরা যখন নামাজ পড়ার ইচ্ছা করবে তখন নামাজের পূর্বে তোমাদের মুখ মন্ডল ও কনুই সহ হস্তদ্বয় ধৌত করবে আর তোমাদের মাথা মাসেহ করবে এবং টাখনুসহ পদদ্বয় ধৌত করবে।
(সূরা মায়িদ)

নবী করীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ হদস গ্রস্থ হলে উযূ করা ব্যতীত আল্লাহ রব্বুল আলামিন তার নামাজ কবুল করেন না।
(বুখারি ও মুসলিম শরীফ)

উযূ এর আভিধানিক অর্থ হলো, সৌন্দর্য ও পরিচ্ছন্নতা। আর শরীয়াতে উযূ হলো পানি দ্বারা অর্জিত পবিত্রতা; যা চেহারা, দুই হাত ও দুই পা ধোয়া এবং মাথা মাসেহ করাকে অন্তর্ভুক্ত করে।

উযূ ব্যতীত নামাজ পড়া এবং কুরআন মাজিদ স্পর্শ করা জায়েজ হবে না। যে ব্যক্তি সর্বদা উযূর সাথে থাকবে, সে পরকালে সওয়াব ও উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হবে।

উযূর রুকনঃ

উযূর রুকন চারটি। এগুলো উযূর ফরজ।

১। মুখ মন্ডল একবার ধৌত করা। দৈর্ঘ্য মুখ মন্ডলের সীমা হলো কপালের উপরিভাগ থেকে চিবুকের নীচ পর্যন্ত এবং প্রস্থে কানের লতির মধ্যবর্তী স্থান।
২। উভয় হাত কনুইসহ একবার ধোয়া।
৩। মাথার চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ করা।
৪। উভয় পা গোড়ালিসহ এক বার ধোয়া।

উযূ শুদ্ধ হওয়ার শর্তঃ

তিনটি শর্ত না পাওয়া গেলে উযূ শুদ্ধ হবে না। তদ্রূপ সেই শর্ত সমূহ পূরণ না হলে উযূ দ্বারা কাঙ্খিত ফায়দা অর্জিত হবে না। শর্তগুলো হলোঃ

১। উযূতে যে সকল অঙ্গ ধোয়া ওয়াজিব সেগুলোতে পানি পৌঁছে যাওয়া।
২। চামড়ায় পানি পৌঁছার ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধক যথা- মোম, আঠা, নেইলপালিশ ইত্যাদি না থাকা।
৩। উযূ নষ্টকারী কোন কিছু না পাওয়া যাওয়া।

অতএব, উযূ করার সময় উযূর পরিপন্থী কোন কিছু পাওয়া গেলে উযূ শুদ্ধ হবে না।

উযূ ওয়াজিব হওয়ার শর্তঃ

নিম্মোক্ত শর্তসমূহ না পাওয়া গেলে উযূ ওয়াজিব হবে না।

১। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া। সুতরাং অপ্রাপ্ত বয়স্কের উপর উযূ ওয়াজিব হবে না।

২। সুস্থ মস্তিষ্কের হওয়া। সুতরাং বিকৃত মস্তিষ্কের উপর উযূ ওয়াজিব হবে না।

৩। মুসলমান হওয়া। সুতরাং অমুসলিমের উপর উযূ ওয়াজিব হবে না।

৪। সমস্ত অঙ্গ ধোয়ার পরিমাণে পানি ব্যবহারে সক্ষম হওয়া। সুতরাং পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে উযূ ওয়াজিব হবে না। তদ্রূপ যদি পানি ব্যবহারে সক্ষম হয় কিন্তু সমস্ত অঙ্গ ধোয়ার মত পর্যাপ্ত পানি না পাওয়া যায় তাহলেও উযূ ওয়াজিব হবে না।

৫। হদসে আসগার (উযূ ভঙ্গের কারণ) বিদ্যমান থাকা। সুতরাং যার উযূ আছে তার জন্য পুনরায় উযূ করা ওয়াজিব হবে না।

৬। হদসে আকবর (গোসল ফরজ হওয়ার কারণ) থেকে মুক্ত হওয়া। সুতরাং যার উপর গোসল ফরজ হয়েছে তার জন্য উযূ করা যথেষ্ট হবে না।

৭। সময় খুব সংকীর্ণ হওয়া। সুতরাং সময় দীর্ঘ হলে অবিলম্বে উযূ করা আবশ্যক নয়। বরং তখন বিলম্ব করা জায়েজ হবে।

এই সমস্ত ফিকহ প্রদান করেছেন- “হযরত মাওলানা শফীকুর রহমান নাদভী (র:)

লেখা: মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া।

Leave a Comment