ইসলামিক দৃষ্টিতে সহবাসের নিষিদ্ধ সময়, মহান আল্লাহ তা’আলা স্বামী-স্ত্রীকে তাদের এক অপরের শষ্য ক্ষেতের সহিত তুলনা করে বলেছেন, তোমরা একে অপরকে যেমন খুশি তেমন ভাবে ভোগ কর। তবে আল্লাহ তা’য়ালা সব সময় মানব কল্যাণ চান। সহবাসের কারণে মানুষের যেন কোন ক্ষতি না হয় সেদিক বিবেচনা করে সহবাসের কিছু শিষ্ঠাচার ও নীতিমালা নির্দেশ করেছেন। নির্দিষ্ট কিছু সময় আছে, যে সময় সহবাসে লিপ্ত হলে আমরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারি। ইসলামিক দৃষ্টিতে সহবাসের নিষিদ্ধ সময়, তাই নির্দিষ্ট কিছু সময় ব্যাতিত স্ত্রীর সহিত যেমন খুশি তেমন ভাবে, যখন খুশি তখন দিনে কিংবা রাতে,বিভিন্ন পজিশনে সহবাস করতে পাবেন। তবে শুধুমাত্র পায়ুপথে নয়।
ইসলামিক দৃষ্টিতে সহবাসের নিষিদ্ধ সময়
ইসলামিক দৃষ্টিতে সহবাসের নিষিদ্ধ সময়, নিশ্চয়ই স্বামী-স্ত্রীর সহবাস পৃথিবীর যত নিয়ামত আছে তার চেয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত। স্বামী-স্ত্রীর গভীর ভালবাসার মাধ্যমে বিভিন্ন সেক্স স্টাইলে সহবাস করে আমরা কতই না তৃপ্তি পেয়ে থাকি। ইসলামিক দৃষ্টিতে সহবাসের নিষিদ্ধ সময়, ইসলামের দৃষ্টিতে কোরআন ও হাদিসের আলোকে কখন সময় সহবাস নিষিদ্ধ তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়
ঋতুস্রাব চলাকালীন সময় মহিলার সাথে সহবাস করা নিষিদ্ধ। (সূরা আল-বাকারা; ২/২২২) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঋতুমতী মহিলার সাথে সহবাস করে সে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল তা অস্বীকার করে (কোরআন) ) (তিরমিযী হা/১৩৫; ইবনু মাজাহ হা/৬৩৯, সহীহ)। তবে এমন অবস্থায় সহবাস ব্যতীত অন্য সব কাজ করা যাবে। (সহীহ মুসলিম, হা/৩০২)।
কিন্তু কেউ জেনেশুনে ঋতুস্রাব চলাকালীন সময় সহবাস করলে তার উপর কাফফারা ওয়াজিব হবে। ইসলামিক দৃষ্টিতে সহবাসের নিষিদ্ধ সময় , এমতাবস্থায় তওবা ছাড়াও এক দিনার বা অর্ধ দিনার গরীবদের দান করতে হবে। (তিরমিযী, আবু দাউদ হা/২৬৪; ইরওয়া হা/১৯৭; মিশকাত হা/৫৫৩)। আর এক দিনার ৪.২৫ গ্রাম সোনার সমান। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৩৫/৩৮ হাজার টাকা। তবে শরীয়ত না জেনে অজ্ঞতা বা ভুলবশত স্ত্রীর সাথে হায়েযের সময় সহবাস করলে তাওবা করার জন্য যথেষ্ট হবে। কাফফারা দিতে হবে না, ইনশাআল্লাহ। (সহীহ মুসলিম ১২৬; ইবনুল উসাইমিন আশ-শারহুল মুমতি; ১/৫৭১)
রমজান মাসে সহবাস
রমজান মাসে সহবাস, রমজান মাসে রোজা রেখে সহবাস করা হারাম। (সূরা বাকারা, ২/১৮৭)। রোজা অবস্থায় কেউ সহবাস করলে রোজার কাফফারা ওয়াজিব,স্বামী-স্ত্রী উভয়ে সম্মতি দিলে উভয়ের উপর কাফফারা ওয়াজিব।ইসলামিক দৃষ্টিতে সহবাসের নিষিদ্ধ সময়, কিন্তু স্বামী যদি জবরদস্তি করে তাহলে শুধু স্বামীকেই রোযার কাযা কাফফারা আদায় করতে হবে,স্ত্রী রোযার কাযা আদায় করবে। (সহীহ বুখারী হা/১৯৩৬; মুসলিম হা/১১১১; মিশকাত হা/২০০৪; আব্দুল্লাহ বিন বায,মাজমু ফাতাওয়া ১৫/৩০৭)।
কাফফারা বিষয়ের নিয়ম হলো [অর্থাৎ একটি আদায় করতে না পারলে অন্যটি করতে হবে। প্রথমটি সক্ষম হলে দ্বিতীয়টি জায়েয হবে না।]। একটানা ৬০টি রোজা [নিরবচ্ছিন্ন]করতে হবে। তা সম্ভব না হলে ৬০ জন গরীব ও অসহায় মানুষকে এক বেলা খাবার খাওয়ানো অথবা প্রতি রোজার বিপরীতে আধা সা বা দেড় কেজি চাল দেওয়া।(টাকা দেওয়া সুন্নাত বিরোধী, তাই টাকা দেওয়া যাবে না।) একজন মিসকীনকে যেমন ৬০ বেলা খাবার খাওয়ানো জায়েয তেমনি ৬০ জন মিসকীনকে একবেলা খাবার খাওয়ানোও জায়েয। (কাফফার সংক্রান্ত একটি প্রসিদ্ধ হাদীস হল সহীহ বুখারী হা/১৯৩৬, সহীহ মুসলিম হা/১১১১, মিশকাত হা/২০০৪)
হজ্ব বা ওমরার সময় সহবাস
হজ্ব বা ওমরার সময় সহবাস নিষিদ্ধ। সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেন,“হজ্ব করা হয় বরকতময় মাসে (অর্থাৎ শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ্জ)। ইসলামিক দৃষ্টিতে সহবাসের নিষিদ্ধ সময়, যে ব্যক্তি এই মাসগুলিতে হজ্ব করার সিদ্ধান্ত নেয় সে যেন হজ্বের সময় সহবাস (কোন প্রকারের যৌন মিলন),পাপ কাজ এবং ঝগড়া না করে। (সূরা বাকারা:১৯৭)। কেননা সহবাস করলে ইহরাম ভেঙ্গে যাবে।
গোপনাঙ্গে মুখ লাগানো
স্বামী-স্ত্রীর গোপনাঙ্গে মুখ লাগানো উচিত নয়। যাকে এখন ‘ওরাল সেক্স’ বলা হয়। মুখ বা জিহ্বা দিয়ে একে অপরের যৌনাঙ্গ চোষা বা চাটা। যা কোনো সভ্য ও রুচিশীল ব্যক্তির আচরণ হতে পারে না। এটি অপবিত্র এবং নিজেদের ক্ষতি করার সম্ভাবনা রয়েছে। ইসলামিক দৃষ্টিতে সহবাসের নিষিদ্ধ সময়, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা নাপাক জিনিস হারাম করেছেন। (সূরা আরাফ; ৭/১৫৭)। অনুরূপভাবে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিজের কোন ক্ষতি এবং একে অপরের কোন ক্ষতি করা যাবে না।” (ইবনে মাজাহ হা/২৩৪০,২৩৪১, সহীহ আল-জামা’, হা/৭৫১৭; সিলসিলা সহীহা, হা/২৫০; বিস্তারিত দেখুন (ইসলাম ওয়েব, ফাতাওয়া নং. ২১৪৬, ৫০৭০৮) এটি একটি বিভ্রান্তিকর কুৎসিত জাতির অপকর্ম।
স্ত্রীর পায়ুপথে সহবাস
স্ত্রীর পায়ুপথে সহবাস হারাম। বর্তমানে যাকে বলে ‘অ্যানাল সেক্স’। রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, مَنْ أَتَى امْرَأَتَهُ فِيْ دُبُرِهَا فَقَدْ بَرِئَ مِمَّا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে তার পায়ুপথে সহবাস করে সে নিজেকে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর উপর মহান আল্লাহ তা’য়ালা কর্তৃক নাযিলকৃত বিষয় থেকে মুক্ত করে নিল,(আবু দাউদ হা/৩৯০৪; তিরমিযী হা/১৩৫; ইবনে মাজাহ হা/৬৩৯)। ইসলামিক দৃষ্টিতে সহবাসের নিষিদ্ধ সময়, অন্য বর্ণনায় আল্লাহ তায়ালা তার দিকে তাকাবেন না এবং সে অভিশপ্ত। (তিরমিযী হা/১১৬৬; ইবনু মাজাহ হা/১৯২৩, সনদ হাসান; আবু দাউদ হা/২১৬২, মিশকাতুল মাসাবীহ হা/৩১৯৩-৯৪)। তাই স্ত্রীর পায়ুপথে সহবাস কোনোভাবেই জায়েজ নয়। এটা বর্বর ও বিদেশীদের ঘৃণ্য অপরাধ।
স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের গোপন কথা
স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের গোপন কথা অন্যের কাছে প্রকাশ করা হারাম।ইসলামিক দৃষ্টিতে সহবাসের নিষিদ্ধ সময়, কেননা এ সম্পর্কে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। (সহীহ মুসলিম, হা/১৪৩৭; বিস্তারিত ইসলাম সুওয়াল জাওয়াব,ফতোয়া নং-৫৫৬০)
সহবাসের নিষিদ্ধ সময় এবং উত্তম দিন ও উত্তম সময়
সহবাসের নিষিদ্ধ সময় এবং উত্তম দিন ও উত্তম সময়, ইসলামের শরী’আ মোতাবেক স্বামী-স্ত্রী সহবাস শুধুমাত্র হজ্জ বা ওমরা এবং স্ত্রীর হায়েজের সময় ব্যাতিত অন্য কোন সময় নিষিদ্ধ করা হয়নি। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, সহবাস করা দিনে করা যাবে কি না ? সহবাসের জন্য কোন বার উত্তম, শুক্রবার সহবাস করা যাবে কি না?শবে কদর, শবে বরাত ইত্যাদি ফজিলতের রাতে সহবাস করা যাবে কি না ?
স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের কোন নিষিদ্ধ বা নির্ধারিত সময় নেই। বরং মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, ‘তোমাদের স্ত্রী তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেতের মতো। কাজেই তোমরা তোমাদের ক্ষেত-খামারে যেভাবে ইচ্ছা ঘুরে চষে বেড়াও’ (বাক্বারাহ ২২৩)। ইসলামিক দৃষ্টিতে সহবাসের নিষিদ্ধ সময়, এছাড়া শুক্রবারে সাক্ষাত সম্পর্কে আলী (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি হল ‘মুনকার’ অর্থাৎ যঈফ (সিলসিলা যইফাহ হা/৬১৯৪)। এছাড়া বিভিন্ন দিবসে সহবাসের বিভিন্ন ফযীলত সম্পর্কে যা কিছু বর্ণনা করা হয়েছে তা শিয়াদের বানানো একটি জাল বর্ণনা মাত্র (খোমেনী, তাহরিরুল ওয়াসায়েল, বিবাহ অধ্যায়)। তাই যে কোন ফযীলতপুর্ণ রাতে সহবাস করতে কোন বাধা নেই। তবে সহবাসের পর অবশ্যই ফরজ গোসল করে ইবাদত করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللّهُ إِنَّ اللّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ
অতঃপর যখন তারা পবিত্র হয়ে যাবে, তখন তাদের কাছে যাও ঠিক যেভাবে আল্লাহ তোমাকে আদেশ করেছেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ ক্ষমাপ্রার্থী এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন। (সূরা বাকারা ২২২)
পরিশেষে
পরিশেষে, মহান আল্লাহ সবাইকে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ইসলামী বিধান অনুসরণ করার এবং সমাজে প্রচলিত সকল কুসংস্কার থেকে রক্ষা করার তৌফিক দান করুন। আমিন (আল্লাহ পরম প্রজ্ঞাময়)। ইসলামিক দৃষ্টিতে সহবাসের নিষিদ্ধ সময়, দিনে কিংবা রাতে স্বামী স্ত্রীর যখন সুযোগ হয়,তখনই সহবাস বৈধ। আসলে কুরআন ও সুন্নাহার আলোকে সহবাসের কোন নিষিদ্ধ সময় নেই।