আমি অন্যের বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। বরং নিজের মেধা ও যোগ্যতার মাধ্যমে জীবিকা উপার্জন করতে চাই__মিজানুর

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিদিন মানববন্ধন, প্রতিবাদ, বিক্ষোভসহ নানান কর্মসূচি পালিত হয়। আজ বুধবারও তার ব্যতিক্রম নয়। এসব কর্মসূচি চলার মধ্যেই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাতে এক তরুণকে একাকী দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। তাঁর দুই হাতে একটা ব্যানার ধরা। ব্যানারে লেখা, ‘ভিক্ষা নয়, কর্মের মাধ্যমে জীবন পরিচালনা করতে চাই।’ তার কাছে গিয়ে কথা বলে জানা যায়,তাঁর নাম গাজী মিজানুর রহমান। তিনি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ব্যানার নিয়ে দাঁড়ালে কাজ পাওয়া যাবে—এমন আশায় আজ সকাল ১০টার দিকে এখানে এসেছেন।মিজানুরের ব্যানারে লেখা, ‘আমি একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। কিন্তু আমি অন্যের বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। বরং নিজের মেধা ও যোগ্যতার মাধ্যমে জীবিকা উপার্জন করতে চাই।’মিজানুর রহমান বলেন, তাঁর বয়স ২১ বছর। গ্রামের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের নয়নপুরে।তিনি গ্রামের বাড়িতে মা–বাবার সঙ্গে থাকেন।তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। মাদ্রাসার হিফজ বিভাগে কিছুটা পড়ালেখা করেছেন তিনি কিন্তু অর্থের অভাবে আর পড়ালেখাটাকরতে পারেননি তিনি।। মা–বাবার বয়স হয়ে গেছে। তাঁরা এখন আর পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারেন না। বড় ভাইয়েরা বিয়ে করে নিজেদের মতো ঘর–সংসার করছেন। এ অবস্থায় তিনি বিপদে পড়ে গেছেন। তিনি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান। কিন্তু কোনো উপায়ান্ত পাচ্ছেন না। মিজানুর বলেন, ‘আমি জন্মগতভাবেই দুই চোখে দেখতে পাই না। আমার ভাইবোনদের কারও এই সমস্যা নেই। তারা তাদের মতো করে নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। এদিকে আমি চলতে-ফিরতে পারি না। আমি মানুষের কাছে হাত পাততে চাই না, কাজ করে খেতে চাই। আমি যে ধরনের কাজ পারি, তা আমাকে দিলে ভালোভাবেই করতে পারব।’

মিজানুর জানান, তিনি ঢাকার শনির আখড়ায় এক বোনের বাসায় এসে উঠেছেন। সেখানে বেকার বসে থাকতে তাঁর ভালো লাগছে না। তাঁর মনে হচ্ছে, তিনি সবার বোঝা। তাঁর এক বড় ভাই তাঁকে পরামর্শ দিয়েছেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসে দাঁড়িয়ে কোনো দাবি জানালে তা কর্তৃপক্ষের নজরে আসবে। এতে তাঁর একটা চাকরির ব্যবস্থা হয়ে যেতে পারে।বড় ভাইয়ের পরামর্শে মিজানুর পল্টন এলাকায় এসে ১০০ টাকা খরচ করে একটি ব্যানার বানিয়েছেন। সেই ব্যানার নিয়েই তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়েছেন। তিনি জানান, জীবনে এই প্রথম কোনো দাবি নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়েছেন। কারণ, তাঁর সামনে আর কোনো উপায় খোলা নেই।চাকরির আশায় মিজানুরকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তিনি জানেন না যে প্রেসক্লাবের সামনে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে তাঁর একটা চাকরি মিলবে।

Leave a Comment