“অসঙ্গতি” পর্ব-৫

ছাদে এসে প্রথম কয়েক মিনিট আবারও নিস্তব্ধতা। যেন রাতের নিরবতার সাথে মিতালি গড়েছে আমাদের সব কথা। এরম চুপচাপ থাকবো? কথা কার আগে শুরু করা উচিত? আমিই শুরু করবো ভেবে যেই কথা বলতে যাব, অমনি নিঝুমই কথা বলা শুরু করলো।

-অনেকদিন তো হয়ে গেল আমাদের বিয়ের, তাই না?
-হুম। কেন?
-আপনি আমাকে এখনো মেনে নিতে পারেন নি বোধ হয়।
-আসলে…

আমার কথা থামিয়ে দিয়ে সে বললো,
-থাক না! আপনাকে বিড়ম্বনায় ফেলতে চাই নি আমি। তবে আমার মনে হলো, এই বিষয় নিয়ে আপনার সাথে খোলামেলা কথা বলাই বেটার। এবং সেটা আজই। অনেকদিন তো অপেক্ষা করলাম, আপনি পরিবর্তন হলেন না। এবার বোধ হয় আপনার থেকে আমার ছুটি নেওয়া উচিত!

-ছুটি নেওয়া উচিত কেন? এখানে কী আপনার কোনো কিছুর অসুবিধা হচ্ছে, নিঝুম?
-অসুবিধা? হ্যাঁ, অসুবিধা হচ্ছে কিছুটা বৈ কি!
-কী অসুবিধা, নিঝুম? আমাকে বলুন, আমি আপনার অসুবিধা দূর করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব, ইন শা আল্লাহ্।
-তেমন কিছু না। এই বাসায় আমি থাকি কেন?
-আপনাকে আমি বিয়ে করেছি। আইনত আপনি আমার স্ত্রী, সেজন্য।
-খুব সোজাসাপ্টা উত্তর দিলেন। কিন্তু আপনি কী আমাকে স্ত্রী হিসেবে এখনো মেনে নিয়েছেন?
-মানে…ইয়ে…..

নিঝুম একটু হাসলো। আমি সামান্য লজ্জা পেলাম। নিঝুমের কথায় যুক্তি আছে। কাগজে-কলমে সে আমার স্ত্রী হলেও আমি ওকে মেনে নিতে পারছি না এখনও। সে আমার দিকে যে প্রশ্নবাণ ছুঁড়ে দিল, তার সঠিক উত্তর আসলে আমার কাছে নেই।

-শুনুন, আমি অনেকদিন ধরে এখানে আছি। তাই আমার প্রতি আপনার মায়া জন্মে গেছে। তবে সেটা মোটেও ভালোবাসা নয় কিন্তু। আমি কিছুদিন আমাদের বাসায় যাই। কয়েক মাস থাকি। যোগাযোগ করার তো প্রশ্নই উঠে না। এই কয়েক মাসে আপনার যদি মনে হয়, কোনোরূপ সংকোচ ছাড়াই আপনি আমাকে মেনে নিতে পারবেন। তাহলে আমাদের বাসার দরজা আপনার জন্য খোলাই থাকবে। আপনি চলে আসতে পারেন।

আর যদি মনে হয়, আমাকে কোনোভাবেই আপনি মানতে পারবেন না। তাহলে দয়া করে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিয়েন। আমি কোনো ঝুট-ঝামেলা ছাড়াই সাইন করে দিব।
-এটা অনেক বড় ডিসিশান হয়ে গেল না?
-তা হয়তো হলো কিছুটা। কিন্তু এক প্রকার বাধ্য হয়েই আমাকে নিতে হলো এই ডিসিশান।

তখনই মুয়াজ্জিনের সুমধুর কণ্ঠস্বরে ভেসে আসলো আযানের মিষ্টি ধ্বনি। আমরা চুপচাপ আজান শুনলাম। আযান শেষ হওয়ার পর সে বললো,
-আমি ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছি। সকাল ৯টার ট্রেনেই চলে যাব, ইন শা আল্লাহ্। আপনার ইচ্ছে হলে আমার সঙ্গে যেতে পারেন স্টেশন পর্যন্ত।
[চলবে]

Writer: Mahazabin Sharmin Priya

Leave a Comment