অবাধ্য শিক্ষার্থীকে বশে আনার প্রাচীন কৌশল

মিসর মানেই যেন প্রাচীন প্রত্ননিদর্শনের খনি। যুগে যুগে দেশটির মাটি চিরে বের করা হয়েছে চমকপ্রদ নানা প্রাচীন নিদর্শন; জানা গেছে তাক লাগানো সব তথ্য। এরই ধারাবাহিকতায় এবার প্রত্নতত্ত্ববিদেরা সন্ধান পেয়েছেন মাটির পাত্রের ১৮ হাজারের বেশি খণ্ডাংশের। প্রাচীন মিসরে কীভাবে অবাধ্য শিক্ষার্থীদের শায়েস্তা করা হতো, তার একটি কৌশল সম্পর্কে জানা গেছে খণ্ডাংশগুলোর কয়েকটিতে। খবর সিএনএনেরমাটির পাত্রের খণ্ডাংশগুলো ‘অস্ট্রাকা’ নামে পরিচিত। ভাঙা অংশগুলোর উপরিভাগ সে সময় লেখালেখির কাজে ব্যবহার করা হতো। অস্ট্রাকাগুলো পাওয়া গেছে মিসরের ঐতিহাসিক লুক্সর শহর থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে আথ্রিবিস এলাকায়। সেগুলোর বয়স দুই হাজার বছর।

পাত্রের ভাঙা অংশগুলো উদ্ধার করেছে জার্মানির তুবিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষকেরা জানিয়েছেন, অংশগুলোর ওপর লেখা রয়েছে নানা রসিদ, পড়ালেখার বিষয়বস্তু, বাণিজ্যসংক্রান্ত তথ্য আর নামের তালিকা। পাত্রের হাজারখানেক অংশের দুই পাশেই একই প্রতীক বারবার আঁকা দেখা গেছে। প্রত্নতত্ত্ববিদদের বিশ্বাস, দুষ্টু শিক্ষার্থীদের বশে আনতেই সেগুলো আঁকতে দেওয়া হয়েছিল।পাত্রের অনেক অংশই প্রাচীন একটি স্কুলের বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন তুবিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিশ্চিয়ান লেইৎজ। মিসরের পর্যটন ও পুরাতত্ত্ব মন্ত্রণালয়ের একটি দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আথ্রিবিসে খননকাজের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।

ক্রিশ্চিয়ান লেইৎজ বলেন, অস্ট্রাকাগুলোর ওপরে মাসের নাম, সংখ্যা, গাণিতিক সমস্যা, ব্যাকরণচর্চা নিয়ে লেখা আছে। অংশগুলোর একটির ওপর রয়েছে এক শিশুর আঁকিবুকিও। তিনটি মানব শরীরের অবয়ব আঁকা হয়েছে সেখানে। এ ছাড়া রয়েছে দেবতাদের ছবি, জ্যামিতিক চিহ্ন এবং কাঁকড়া বিছা ও সোয়ালো পাখির মতো প্রাণীর ছবি।
বিশ্ববিদ্যালয়টি বলছে, এত বেশি পরিমাণ অস্ট্রাকা একসঙ্গে পাওয়া খুবই বিরল। এর আগে মাত্র একবারই লুক্সর শহরে প্রায় একই সংখ্যক অস্ট্রাকার সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল।আথ্রিবিস এলাকার অবস্থান নীল নদের পশ্চিম তীরে, বর্তমান সোহাগ শহরের কাছেই। ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে সেখান থেকে প্রাচীন নানা নিদর্শন খোঁড়াখুঁড়ি করে বের করা হচ্ছে। তবে এ কাজ গতি পায় ২০০৩ সালে। তুবিনজেন বিশ্ববিদ্যালয় এবং মিসরের পর্যটন ও পুরাতত্ত্ব মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ এলাকায় আথ্রিবিস প্রকল্প শুরু করে। সে সময় থেকে আথ্রিবিসের ৩০ হেক্টর এলাকাজুড়ে গবেষণা চলছে।

Leave a Comment