দীর্ঘদিন ধরেই অস্থির চালের বাজার। দুই মাস ধরে বাড়ছে মোটা চালসহ সব চালের দাম। করোনার প্রকোপে কাজ না থাকায় চালের দাম অস্বস্তি বাড়িয়েছে স্বল্প আয়ের মানুষের। চালের দাম বাড়ায় নিম্ন আয়ের মানুষেরও ভোগান্তি বেড়েছে অনেক।
করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের দেওয়া কঠোর বিধিনিষেধে আয় কমেছে সিএনজি চালক আব্দুর রহিমের। লুকোচুরি করে সিএনজি নিয়ে রাস্তায় নামলেও স্বাচ্ছন্দ্যে চালাতে পারছেন না গাড়ি। লোকজন থাকলেও সব জায়গায় যেতে পারছেন না। তাই হচ্ছে না প্রয়োজনমাফিক আয়। কিন্তু খরচ বেড়েছে আগের চেয়ে আরো বেশি। এই খরচের বেশির ভাগ যাচ্ছে দৈনন্দিন চাহিদা পূরণে। এর মধ্যে নাভিশ্বাস তুলেছে চালের দাম।
আব্দুর রহিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চাল আগে যা লাগত তার থেকে এখন বেশি লাগে। এদিক দিয়ে চালের দাম বেড়েই যাচ্ছে। চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দেশের অবস্থা আবার কবে ভালো হবে আল্লাহই জানে।’
বৃহস্পতিবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব চালের দামই ঊর্ধ্বমুখী। নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে চাহিদা বেশি মোটা চালের। সেই চালের দামও বেড়ে এখন ৫০ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহেও বিক্রি হচ্ছিল ৪৭ থেকে ৪৮ টাকায়। দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা।
রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, ইরি বা স্বর্ণা মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। এ ছাড়া মাঝারি মানের চাল পাইজাম ও লতা ৫০ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহেও ৫০ থেকে ৫৪ টাকায় বিক্রি হয়। সরু চাল নাজিরশাইল ও মিনিকেট ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাঝারি ও সরু চালের দামও কমেনি। ঢাকার খুচরা দোকানে মাঝারি বিআর-২৮ ও সমজাতীয় চাল মানভেদে ৫২ থেকে ৫৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছরের চেয়ে ১০ শতাংশের মতো বেশি। আর সরু মিনিকেট চাল ৬০ থেকে ৬২ টাকা ও নাজিরশাইল চাল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
প্রতিবছর বোরো মৌসুম শেষে চালের দাম অনেকটাই কমে যায়। কিন্তু এবার উল্টো দাম বাড়ছে। ব্যবসায়ীদের ধারণা, চালের দাম সামনে আরও বাড়বে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা সায়েম আহমেদ বলেন, ‘গত শুক্রবার মোটা চালের দাম ছিল ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা কেজি। এখন সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা। অর্থাৎ, মোটা চালের দাম গত এক সপ্তাহে দুই টাকার মতো বেড়েছে। শুক্রবার বিআর-২৮ চাল ৫৩-৫৪ টাকা এবং মোটা গুটি স্বর্ণা চাল মানভেদে ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাদামতলী ও বাবু বাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘এবার ধানের দাম বেশি, এ কারণে চালের দাম বেশি।’
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম ৪ শতাংশ এবং সরু ও মাঝারি চালের দাম প্রায় ২ শতাংশ বেড়েছে।
বাড্ডার চাল ব্যবসায়ী আবুল কালাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমানে বাজারে চালের দাম একটু বেশি। মিল মালিকরা প্রতি সিজনে চাল কিনে মজুত করে রাখেন। এ কারণেই এখন চালের দাম বেশি।
চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে বেসরকারিভাবে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কে প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ টন সেদ্ধ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে অবস্থা অনুযায়ী পরিমাণ আরও বাড়তে বা কমতে পারে।
এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম দেশ রূপান্তরকে বলেন, অবৈধভাবে কেউ চালের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে কি না আমরা তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছি। ওএমএসের বরাদ্দ অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। মাঝারি ও সরু চালেরও দাম বাড়ছে। এটা কিন্তু আমাদের ওএমএসের কার্যক্রম দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। সে ক্ষেত্রে আমরা চাচ্ছি, বেসরকারিভাবে কিছু আমদানি হোক। সেটার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছি।
তিনি বলেন, চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করা হবে। আমরা চাই কৃষক এবং ভোক্তা কেউ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তাই যতটুকু দরকার ততটুকুই আমদানি করা হবে। আপাতত ১০ লাখ টন চাল আমদানির চিন্তা করছি। প্রয়োজন হলে আরো করতে পারি। তবে আউশ ধানের উৎপাদন অনেক ভালো হয়ে গেছে, তখন হয়তো আমদানি কমিয়ে দিতে পারি।
গত ২৪ জুলাই থেকে রাজধানীতে পুনরায় ওএমএস কার্যক্রম শুরু করেছে খাদ্য অধিদপ্তর। এ কার্যক্রমের আওতায় স্বল্পমূল্যে চাল ও আটা বিক্রি করা হচ্ছে।