নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা সদরে মেনিখালী খালের ওপর পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে পাঁচটি সেতু আছে। সেতুগুলোর কোনোটি অপ্রশস্ত, কোনোটির সংযোগ সড়ক সরু, আবার কোনোটির সংযোগ সড়কই নেই। এসব কারণে সেতুগুলোতে রিকশা, অটোরিকশা ছাড়া অন্য যান চলাচল করতে পারে না। এমন পাঁচটি সেতুর পাশেই এবার আরেকটি সেতু নির্মাণ করছে এলজিইডি। সেটির সংযোগ সড়কও অপ্রশস্ত। এখন ওই খালের ওপর আরও একটি সেতু নির্মাণের জন্য একনেকে প্রকল্প প্রস্তাব জমা দিয়েছে সওজ।
এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, ৩৯ বছরের ব্যবধানে ছয়টি সেতু বানিয়েও মানুষের কোনো কাজে এল না। এসব সেতু ব্যবহারের জন্য সংযোগ সড়কগুলো প্রশস্ত করার দাবি এলাকাবাসীর।
এলজিইডির তৈরি সেতুগুলোর পাঁচটি পড়েছে উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নে, আরেকটি শম্ভুপুরা ইউনিয়নে। শম্ভুপুরার কাইকারটেক বাজারের পাশের সেতুটি সড়ক থেকে নিচু হওয়ায় সিঁড়ি দিয়ে নেমে এতে উঠতে হয়। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এ সিঁড়ি বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সোনারগাঁ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্রের সংযোগ খাল হিসেবে পরিচিত মেনিখালী খালটি বৈদ্যেরবাজার থেকে কাইকারটেক হাট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ। এ খালের সোনারগাঁ সরকারি কলেজের পাশে ১৯৮২ সালে প্রথম ১৯০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। ৮ ফুট প্রস্থের সেতুটি দিয়ে রিকশা ও অটোরিকশা ছাড়া কোনো যানবাহন চলতে পারত না। এ কারণে এলজিইডি ২০০৭ সালে ওই সেতু থেকে ১৩ ফুট দূরে একটি বেইলি সেতু নির্মাণ করে। কিন্তু এটিও আট ফুট প্রশস্ত।
পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান জানান, মেনিখালী খালে একের পর এক সেতু হচ্ছে। কিন্তু সেতু মানুষের কাজে আসছে না। সরকারি অর্থের অপচয় বন্ধ করা উচিত।
এই দুটি সেতু থেকে তিন কিলোমিটার দূরে একই খালের শম্ভুপুরা ইউনিয়নে কাইকারটেক বাজারের পাশে ২০০৬ সালে একটি পাকা সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুটির সংযোগ সড়ক নেই। মূল সড়ক থেকে নিচুতে হওয়ায় সেতুতে ওঠার জন্য সিঁড়ি বানানো হয়েছে।
একই খালে সোনারগাঁ থানার সামনে ভবনাথপুর গ্রামের মানুষের চলাচলের জন্য ২০০৭ সালে ১২ ফুট প্রস্থের একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। তবে সংযোগ সড়ক অপ্রশস্ত হওয়ায় এই সেতু দিয়েও বড় যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এই সেতু থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে ভাটিবন্দর গ্রামের পাশে ২০১৯ সালে ২ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৯০ ফুট দৈর্ঘ্যের আরেকটি পাকা সেতু নির্মাণ করা হয়। এ সেতুর প্রস্থ ১৬ ফুট। সংযোগ সড়ক অপ্রশস্ত ও পাকা না হওয়ায় এ সেতু দিয়েও ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারে না।
পাশাপাশি দুটি সেতুর সংযোগ সড়ক অপ্রশস্ত হওয়ায় এর ৭০০ মিটার দূরে ২০২০ সালে এলজিইডি ১৭৭ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৬ ফুট প্রস্থের আরেকটি সেতুর দরপত্র আহ্বান করে। এই সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। পিরোজপুর ইউনিয়নের রতনপুর এলাকায় এই সেতুর নির্মাণকাজ চলছে।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, নির্মাণাধীন সেতুটির সংযোগ সড়ক মাত্র ৪ ফুট প্রশস্ত। সড়কের দুই পাশে আমবাগান। সংযোগ সড়ক করতে হলে সরকারি জমি কিংবা ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ করতে হয়। এই সেতুর ৬০ ভাগ কাজ শেষ হলেও এলজিইডি সংযোগ সড়কের জমি অধিগ্রহণ করতে পারেনি।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজের) নারায়ণগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার আনন্দবাজার থেকে উদ্ধবগঞ্জ এলাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে দিয়ে মেনিখালী খালে আরেকটি সেতু নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তাব একনেকে জমা দেওয়া হয়েছে।
এলজিইডি সোনারগাঁর উপজেলা প্রকৌশলী আরজুরুল হক বলেন, ‘সংযোগ সড়ক অপ্রশস্ত থাকায় সেতুগুলো মানুষের কাজে আসছে না। আমি এ উপজেলায় যোগদানের আগেই সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। এ খালের সেতুর চিত্র এলজিইডির সদর দপ্তরকে অবগত করেছি।’