Close Menu
    Facebook X (Twitter) Instagram
    রংপুর ডেইলী
    • Home
    • Rangpur
    • International
    • Islamic
    • Life Style
    • Insurance
    • Health
    Facebook X (Twitter) Instagram
    রংপুর ডেইলী

    সুগন্ধায় জ্বলন্ত লঞ্চে ৪০ মৃত্যু

    নিজস্ব প্রতিবেদকBy নিজস্ব প্রতিবেদকDecember 25, 2021Updated:December 25, 2021No Comments10 Mins Read
    ৩৭ মরদেহ বরগুনা হাসপাতালে

    ঘড়ির কাঁটায় রাত ৩টা ছুঁই ছুঁই। ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর বুক চিরে প্রায় হাজারখানেক যাত্রী নিয়ে ছুটে চলেছে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী লঞ্চ এমভি অভিযান-১০। যাত্রীদের অধিকাংশই তখন গভীর ঘুমে। হঠাৎ প্রচণ্ড উত্তাপ আর ধোঁয়ায় দম আটকে যাওয়ায় ঘুম ভাঙে তাদের কারও কারও। চোখ মেলতেই দেখেন, চারদিকে আগুন। মুহূর্তেই শোরগোল, আর্তনাদ আর প্রাণ বাঁচাতে যাত্রীদের ছোটাছুটিতে চলন্ত লঞ্চটিতে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি হয়। যাত্রীরা কে কার আগে ও কীভাবে লঞ্চের সামনের দিকে গিয়ে নেমে পড়বেন শুরু হয় সেই প্রতিযোগিতা। এরই মধ্যে পাশের দিয়াকুল গ্রামে নদীর তীরে ভেড়ানো হয় লঞ্চটি। কয়েকশ’ মানুষ সেখানে নামতে পারলেও বেশিরভাগই দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা লঞ্চে আটকা পড়েন। প্রাণ বাঁচাতে বহু যাত্রী তখন নদীতে ঝাঁপ দেন। তবে কনকনে শীতের রাতে তাদের অনেকেই প্রচণ্ড ঠান্ডায় জমে মারা গেছেন।

    গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঝালকাঠির গাবখানের কাছাকাছি সুগন্ধা নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চে ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল শুক্রবার রাত ১টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত নারী-শিশুসহ ৪০ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত ৩৯ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন।

    রাত পৌনে ১২টার দিকে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাবিব খান নামে আরও এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এখনো নিখোঁজ শতাধিক যাত্রীর খোঁজ মেলেনি। এছাড়া দগ্ধ শতাধিক যাত্রীকে ঝালকাঠি, বরিশাল ও রাজধানী ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের অধিকাংশের অবস্থাই ছিল আশঙ্কাজনক। নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

    এদিকে ওই লঞ্চের যাত্রীদের স্বজনরা গতকাল সকাল থেকে ঝালকাঠির ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের দিয়াকুল গ্রামের সুগন্ধা নদীর তীরে ভিড় করতে শুরু করে। বাতাসে তখন পোড়া গন্ধ। নদীতেও ছিল পোড়া লাশ। সেখানে স্বজনের খোঁজ না পেয়ে অনেকে ছুটে যান হাসপাতালে। তবে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জানিয়েছেন, অধিকাংশ মরদেহ এতটাই পোড়া যে, চেহারা দেখে পরিচয় শনাক্ত করা কঠিন।

    লঞ্চে আগুনের ঘটনায় নিহতদের অধিকাংশের বাড়ি বরগুনায় বলে জানা গেছে। গতকাল পর্যন্ত নিহত পাঁচজনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। তারা হলেন

    বরগুনার পাথরঘাটার আব্দুর রাজ্জাক মাস্টার (৬২), বেতাগী উপজেলার রিয়াজ হাওলাদার (৩৫), বামনার স্বপ্নিল চন্দ্র (১৪), মোছা. জাহানারা (৪৫) ও সদর উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের মুদি দোকানি হাবিব খান (৪৫)।  

    লঞ্চে আগুন লেগে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া বর্তমানে মালদ্বীপ সফররত শেখ হাসিনা অগ্নিকাণ্ডে আহতদের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে এবং নিহতদের স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তরের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

    লঞ্চে আগুন লাগার কারণ উদঘাটনে আলাদা তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নৌ-পারিবহন মন্ত্রণালয়, ঝালকাঠির জেলা প্রশাসন এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভেল ডিফেন্স।

    ঢাকার সদরঘাটে কর্মরত বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্র্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তারা জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে প্রায় চারশ যাত্রী নিয়ে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটি সদরঘাট ছেড়ে যায়। চাঁদপুর ও বরিশাল টার্মিনালে লঞ্চটি থামে এবং যাত্রী ওঠা-নামা করে। তবে লঞ্চটির বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা বলেছেন, তিন তলা ওই লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের সময় হাজারখানেক যাত্রী ছিলেন। ঝালকাঠির গাবখানের কাছাকাছি সুগন্ধা নদীতে থাকা অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে লঞ্চে আগুন ধরে যায়। পরে ঝালকাঠি সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের দিয়াকুল গ্রামে নদীর তীরে লঞ্চটি ভেড়ানো হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে জ্বলতে থাকা ওই লঞ্চ থেকে প্রাণ বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন যাত্রীদের অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে ঝাঁপিয়ে পড়া যাত্রীদের বাঁচাতে নদীতীরে ভিড় করেন দিয়াকুল গ্রামের বাসিন্দারা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরাও সেখানে যান। ট্রলার নিয়ে লঞ্চের আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন তারা।

    ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, রাত ৩টা ২৮মিনিটে তাদের কাছে অগ্নিকাণ্ডের খবর আসে। তাদের কর্মীরা ৩টা ৫০ মিনিটে সেখানে পৌঁছে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। এই অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন ফায়ার সার্ভিসের বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া। ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিটের চেষ্টায় ভোর ৫টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। স্থানীয় বাসিন্দা, কোস্ট গার্ড ও পুলিশ সদস্যরাও উদ্ধার অভিযানে সহযোগিতা করেন।

    ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, যেখানে লঞ্চটিতে আগুন লেগেছে, ওই এলাকা ঝালকাঠি লঞ্চঘাট থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে। লঞ্চের ইঞ্জিনরুমের অংশটি বেশি পুড়েছে। সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তারা।

    আগুন লাগা লঞ্চটির বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা জানায়, রাত ৩টার দিকে সুগন্ধা নদীর সরই এলাকায় বিকট বিস্ফোরণে লঞ্চের পেছনের অংশে আগুন লেগে যায়। মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো লঞ্চে। পরে চালক লঞ্চটি দিয়াকুল এলাকায় একটি চর ঘেঁষে থামান। সেখানে অনেক যাত্রী নেমে যেতে পারলেও লঞ্চের মধ্যে দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই ত্রিশজনের মৃত্যু হয়।

    বেঁচে যাওয়া যাত্রী বরগুনার বামনার আবদুল্লাহ বলেন, ‘আগুন দেখে নিচতলার ডেকের যাত্রীরা দোতলায় আশ্রয় নেয়। এ সময় লঞ্চের কর্মচারীরা কেবিনের যাত্রীদের কেবিন থেকে বের হতে নিষেধ করেন।’

    আবদুল্লাহ আরও বলেন, আগুন লাগার পরও লঞ্চটি প্রায় ৩০-৪০ মিনিট চালিয়ে ঝালকাঠির বিষখালী-সুগন্ধা-ধানসিঁড়ি নদীর মোহনায় মোল্লাবাড়ি সরই মাজার এলাকায় থামিয়ে দেয়। সেখান থেকে লঞ্চের কর্মচারীরা ও অধিকাংশ যাত্রী নেমে যেতে সক্ষম হলেও কেবিন ও ডেকের ঘুমন্ত যাত্রীরা আর নামতে পারেননি। পরে ভোর ৫টার দিকে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধারকাজ শুরু করেন।

    বেঁচে যাওয়া যাত্রী রিনা বেগম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে ইঞ্জিনরুমের পাশে ডেকে ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে গেলে দেখি চারদিকেই আগুন। ধোঁয়ায় চারদিক অন্ধকার হয়ে গেলে কোনোভাবে ছেলেকে নিয়ে লঞ্চের কিনারায় আশ্রয় নিই। এ সময় অনেকে নদীতে ঝাঁপ দেয়। কিন্তু অনেক মানুষ আর তীরে উঠতে পারেনি।’

    লঞ্চটির ক্যান্টিনবয় ইয়াসিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লঞ্চের নিচতলার পেছনে ইঞ্জিনরুমের পাশের ক্যান্টিনে বিকট শব্দে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ধরে যায়। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ইঞ্জিনরুমে। সেখানে ১৩ ব্যারেল ডিজেল রাখা ছিল। ডিজেলের কারণেই লঞ্চে মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে।’

    তিনি আরও জানায়, পনের দিন আগে অভিযান-১০ লঞ্চটির ইঞ্জিন ও কাঠামো মেরামত করে যাত্রী পরিবহনের জন্য উপযোগী করে নদীতে নামানো হয়।

    গতকাল সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (বরিশাল) কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, তাদের ৫টি ইউনিটের তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নেভার পর পুড়ে যাওয়া লঞ্চ থেকে ত্রিশজনের এবং সুগন্ধা নদী থেকে নয়জনসহ মোট ৩৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

    ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী জানান, দাফনের আনুষ্ঠানিকতার ব্যয় মেটানোর জন্য নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে প্রাথমিকভাবে পঁচিশ হাজার টাকা করে দেবে জেলা প্রশাসন। তবে পরিচয় নিশ্চিত করে মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

    তিনি আরও জানান, উদ্ধার হওয়া ৩৯ লাশের মধ্যে চারজনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। মরদেহগুলো ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

    লঞ্চে আগুনে দগ্ধ ৭০ জনকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দগ্ধদের মধ্যে গুরুতর ১০ জনকে রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেশ কয়েকজন। তাদের মধ্যে রাতে বার্ন ইনস্টিটিউটে মারা গেছেন তেঁতুলিয়া গ্রামের হাবিব খান। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. এসএম আইয়ুব হোসেন।

    তিনি বলেন, হাবিবের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। হাবিব খানের স্ত্রী সায়েরা বেগম জানান, হাবিব গ্রামে মুদি দোকান করতেন। তিনি জানান, আগুন লাগলে স্বামী-স্ত্রী পানিতে লাফিয়ে পড়েন। তখন হাবিব আহত হন। পরে তাকে বরিশাল মেডিকেলে নিয়ে যায়। রাতেই আনা হয় বার্ন ইনস্টিটিউটে।

    ছেলের মুখ দেখা হলো না রিয়াজের : প্রথম সন্তান জন্ম নেওয়ার ১০ বছর পর দ্বিতীয় সন্তানের বাবা হন বরগুনার বেতাগীর রিয়াজ হাওলাদার। জন্মের পর থেকেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত তার শিশুসন্তানটি বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। অফিস থেকে ছুটি না পাওয়ায় এত দিন সন্তানকে দেখতে যেতে পারেননি তিনি। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা অভিযান-১০ লঞ্চে বরগুনার বেতাগীতে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। কিন্তু ছেলে সিফাতুল্লাহর মুখ দেখার আগেই সুগন্ধার বুকে লঞ্চে আগুন লেগে মৃত্যু হয়েছে তার।

    রিয়াজ বেতাগীর কাজীরাবাদ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হাবিবুর রহমানের ছেলে। দুই ভাই-বোনের মধ্যে ছোট তিনি।

    ছেলের মৃত্যুর খবরে রিয়াজের পাগলপ্রায় মা পিয়ারা বেগম বিলাপ করতে করতে দেশ রূপান্তারকে বলেন, ‘রিয়াজের স্ত্রী মুক্তা ও তার ছেলে সিফাতুল্লাহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ছেলে বাবার জন্য হাসপাতালে অপেক্ষা করছে। আমি এখন আমার ছেলের মরদেহ নিয়ে কীভাবে তাদের সামনে যাব?’

    না ফেরার দেশে মেয়ে, দগ্ধ বাবা : লঞ্চে আগুনের ঘটনায় দগ্ধ বরগুনার তাইফা (৮) নামে এক শিশু মারা গেছে। এ দুর্ঘটনায় তার বাবা বশির দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বশির বরগুনা সদর উপজেলার ৩নং ফুলঝুরি ইউনিয়নের রোডপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার মেয়ে তাইফার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

    লাফিয়ে পড়ে প্রাণে বাঁচেন ইউএনও দম্পতি : লঞ্চে অগ্নিকান্ডে অল্পের জন্য বেঁচে ফিরেছেন বরগুনার পাথরঘাটার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ আল মুজাহিদ। তবে তার স্ত্রী পায়ে ও হাতে আঘাত পেয়েছেন।

    এই দম্পতি লঞ্চের ভিআইপি কেবিনের যাত্রী ছিলেন। আগুন লাগার পর লঞ্চ থেকে লাফিয়ে পড়ার সময় ইউএনও মুজাহিদের স্ত্রী উম্মুল ওয়ারার ডান পা ভেঙে গেছে।

    ইউএনও মুজাহিদ জানান, ঢাকা থেকে সরকারি দাপ্তরিক কাজ সেরে লঞ্চে চড়ে বরগুনা আসছিলেন। রাত ৩টার দিকে লঞ্চের অন্য যাত্রীদের চিৎকারে তার ঘুম ভাঙে। এ সময় লঞ্চটি সুগন্ধা নদীর মাঝখানে অবস্থান করছিল। অনেকেই নদীতে লাফিয়ে পড়ে বাঁচার চেষ্টা করেন। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন লঞ্চ থেকে তারাও লাফ দিলে তৃতীয় তলা থেকে দোতলায় পড়ে যান। তখন তার স্ত্রী উম্মুল ওয়ারার ডান পা ভেঙে যায় এবং হাতেও প্রচণ্ড আঘাত পান।

    নিখোঁজদের খোঁজে দিশেহারা স্বজনরা : সুগন্ধার পাড়ে দিগি¦দিক ছুটছেন সুমন মিয়া। লঞ্চে অগ্নিকা-ের ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন তার স্ত্রী তাসলিমা, কন্যা সুমাইয়া আক্তার মিম, সুমনা আক্তার তানিশা ও ছেলে জুনায়েদ। তাদের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের মোল্লার হোড়া গ্রামে। স্ত্রী-সন্তানের খোঁজে হতবিহ্বল হয়ে বারবার পোড়া লঞ্চ ও এর আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছেন সুমন।

    তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা ঢাকায় থাকত। বেড়াতে বরগুনা আসতেছিল। রাত ৩টা ১০ মিনিটের সময় মোবাইলে জানায়, তাদের লঞ্চে আগুন ধরেছে। তারা সবাই বাঁচার জন্য ছোটাছুটি করছে। কথা বলতে বলতেই মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর একাধিকবার ফোন দিয়েও আর তাদের পাওয়া যায়নি। পরে এখানে ছুটে এসেছি, কিন্তু কোথাও তাদের খুঁজে পাইনি। তারা আদৌ বেঁচে আছে না মরে গেছে তাও বলতে পারছি না।’

    লঞ্চ অগ্নিকা-ে নিজের ছোট সন্তানকে নিয়ে বেঁচে ফিরেছেন সোনিয়া বেগম। ঢাকা থেকে চারজনে মিলে ফিরছিলেন তারা। ছোট ছেলেকে বাঁচাতে পারলে নিখোঁজ রয়েছে তার বড় ছেলে জুনায়েদ ও মা রেবা বেগম। সোনিয়ার বাড়ি বরগুনার তালতলী উপজেলার জাকিরতবক এলাকায়।

    ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী ছিল লঞ্চে, ছিল না অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা : অভিযান-১০ লঞ্চটি ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে বরগুনা রওনা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছে বেঁচে ফিরে আসা যাত্রীরা। একই সঙ্গে লঞ্চের ভেতরে অগ্নিনির্বাপণের ছিল না কোনো ব্যবস্থা। অগ্নিনির্বাপণের জন্য গ্যাস সিলিন্ডার থাকলেও সেগুলো ছিল বিকল। বিআইডব্লিউটিএ থেকে জানানো হয়েছে ৩১০ যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে বরগুনা যাচ্ছিল লঞ্চটি। কিন্তু যাত্রীরা বলছেন, প্রায় এক হাজার যাত্রী ছিল লঞ্চে। লঞ্চ কর্র্তৃপক্ষের দাবি, লঞ্চটির ধারণক্ষমতা ৯০০ জন।

    ঢাকা-বরগুনা রুটে যাত্রী পরিবহনে বছর দুয়েক আগে চালু হয় বিলাসবহুল এমভি অভিযান-১০ লঞ্চ। বরিশালসহ বরগুনার বেতাগী ও কাঁকচিড়া ঘাটে যাত্রী নিতে ভিড়ত এ নৌযানটি। মাত্র দিন পনেরো আগে মেরামতের কাজ হয় জলযানটিতে। এরপর চারটি ট্রিপ সম্পন্ন করে লঞ্চটি।

    বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, ‘এই লঞ্চটি এর আগেও একবার চরে উঠিয়ে দিয়েছিল। আমার মনে হয় লঞ্চ কর্র্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এতগুলো নিরীহ প্রাণ একসঙ্গে গেল।’

    রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর গভীর শোক : লঞ্চে আগুন লেগে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গতকাল এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। রাষ্ট্রপতি দুর্ঘটনায় আহতদের আশু আরোগ্য কামনা করেন।

    লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বর্তমানে মালদ্বীপ সফররত শেখ হাসিনা এক শোকবার্তায় নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা এবং আহতদের আশু আরোগ্য কামনা করেন। শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী নিহতদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

    আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর : লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে আহতদের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে এবং নিহতদের স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তরের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল তার দপ্তর থেকে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় সফরে দেশের বাইরে থাকলেও ঝালকাঠির ঘটনার বিষয়ে প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।

    আগুনের ঘটনাকে রহস্যজনক বললেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী : অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত লঞ্চ পরিদর্শনে গিয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আগুনে পুরো একটি লঞ্চ পুড়ে যাওয়ার পেছনে কোনো রহস্য থাকতে পারে। কারণ, এ ধরনের ঘটনা আগে ঘটেনি। গতকাল বেলা ৩টার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত লঞ্চ পরিদর্শন করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী। এর আগে দুপুর ২টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান তিনি। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেক ব্যক্তির পরিবারকে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সংস্থা থেকে দেড় লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এ ছাড়া নিহত ব্যক্তিদের দাফনকাফনের জন্য জেলা প্রশাসক সব ব্যবস্থা করবেন।

    খালিদ মাহমুদ আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে একজন যুগ্ম সচিবকে প্রধান করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। এ ঘটনায় কারও যদি কোনো গাফিলতি থেকে থাকে তাহলে তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি সরেজমিনে দেখলাম আমারও একটি ধারণা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে বিষয়টি পরিষ্কার করে বলা যাবে।’ আগুন লাগা লঞ্চটির ২০২২ সাল পর্যন্ত ফিটনেসের মেয়াদ ছিল বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

    এর আগে দগ্ধ রোগীদের দেখতে হাসপাতালে যান পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। এ ছাড়া বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এবং বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুসও হাসপাতালে গিয়ে দগ্ধ রোগীদের খোঁজখবর নেন।

    নিজস্ব প্রতিবেদক
    • Website

    নিজস্ব প্রতিবেদক বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করে পাঠকের কাছে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য সংবাদ পৌঁছে দেয়। তারা ঘটনার প্রকৃত তথ্য ও বিশ্লেষণ তুলে ধরে যাতে পাঠক বিস্তৃত ও স্বচ্ছ ধারণা পেতে পারেন। নিজস্ব প্রতিবেদকদের লক্ষ্য হলো দ্রুত এবং নিখুঁত প্রতিবেদনের মাধ্যমে সমাজে তথ্যের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

    Leave A Reply Cancel Reply

    সাম্প্রতিক
    • সুস্থ যৌনজীবনের জন্য জরুরি ১০টি পরামর্শ
    • গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর যত্নের সম্পূর্ণ গাইড
    • ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীর ও মনকে সুস্থ রাখার কৌশল
    • ডিপ্রেশন মোকাবিলায় প্রাকৃতিক সমাধান
    • ওজন কমানোর জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকা
    • শিশুদের সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করার উপায়
    • শীতকালে সুস্থ থাকার ৭টি টিপস
    • গরমে সুস্থ থাকার জন্য করণীয় ও বর্জনীয়
    • শরীরের জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের গুরুত্ব
    • মানসিক চাপ কমিয়ে সুস্থ থাকার কৌশল
    • শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায়
    • চোখের সুস্থতা বজায় রাখার ঘরোয়া টিপস
    • হার্টের যত্নে কোন খাবার বেশি খাবেন
    • উচ্চ রক্তচাপ কমানোর প্রাকৃতিক পদ্ধতি
    • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার সহজ উপায়
    • প্রেমে একে অপরকে সময় দেওয়ার গুরুত্ব
    • দীর্ঘদিনের সম্পর্ককে নতুন করে সাজানোর কৌশল
    • প্রেমে আস্থা নষ্ট হলে কীভাবে ফিরিয়ে আনবেন
    • সোশ্যাল মিডিয়ায় রিলেশনশিপ পরিচালনার টিপস
    • প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে রাগ কমানোর ৫টি পদ্ধতি
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.