ভিক্ষা করলাম আজ। সঙ্গে আমার প্রিয়জনও ছিল।
তার আগে বরং টিকটক নিয়ে কিছু বলা যাক।
পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের টিকটক ভিডিও নাকি ভাইরাল হয়েছে। তার ভিডিও আমি দেখিনি। তবে এই নিয়ে পত্রিকার রিপোর্ট পড়েছি।
যেহেতু আমি নিজে লেখালেখি করি, তাই পত্রিকার খবর গুলো আমি মনোযোগ দিয়ে পড়ি। তিনটা পত্রিকার শিরোনাম পড়েছি এই নিয়ে।
এক পত্রিকার শিরোনাম হচ্ছে
“নারী’সহ পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের টিকটক ভিডিও ভাইরাল!”
আরেক পত্রিকা লিখেছে
“এবার টিকটক ভিডিও বানিয়ে বিতর্কের জন্ম দিলেন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক”
সব শেষ পত্রিকাটি শিরোনাম করেছে
“ফেসবুকে পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকটক ভিডিও নিয়ে বিতর্কের ঝড়!”
তো, আমি ভাবলাম নিশ্চয় এই শিক্ষক ভদ্রলোক ভয়ানক কোন অন্যায় করেছেন। নইলে পত্রিকা গুলো এভাবে লিখছে কেন? এটা ভাবতে ভাবতেই দেখি আমার এক পরিচিত বন্ধু তার ফেসবুকে পোস্ট করেছেএকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক টিকটক বানায়। ছিঃ…
শেষমেশ বাধ্য হলাম ওই তিন সংবাদের পুরোটা পড়তে। ভেতরে লেখা- তিনি বছর তিনেক আগে তার বৌয়ের সঙ্গে বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে একটা টিকটক ভিডিও বানিয়েছিলেন। সে ভিডিওটা’ই নাকি এখন সবাই ভাইরাল করেছে।
আমার টিকটক নেই। আমি টিকটক দেখি না। মাঝে মাঝে ইউটিউবে টিকটক ভিডিও চলে আসলে; সে গুলোও আমি দেখি না।
টিকটক ভালো কি খারাপ; সেই বিতর্কে আমি যেতে চাইছি না। সেটি অন্য আলোচনা। আমার এই লেখা ভিন্ন বিষয়ে।
প্রশ্ন হচ্ছে- দেশে তো টিকটক চালু আছে। এবং যে কারো অধিকার আছে টিকটকে ভিডিও বানানোর। তাহলে পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক টিকটকে ভিডিও বানিয়েছে; এই নিয়ে এত হৈচৈ কেন? জাত গেল, জাত গেল মনে হচ্ছে কেন?
কোথাও কি লেখা আছে- একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক টিকটক ভিডিও বানাতে পারবে না? তাকে সব সময় রাশভারী হয়ে মহাজ্ঞানী সেজে বসে থাকতে হবে?
এই যুগে এসেও হাজারটা সংস্কার আমাদের মাঝে।
ভালো চাকরি করলে; সমাজে প্রতিষ্ঠিত হলে সবার সাথে মেশা যাবে না। বুদ্ধিজীবী হলে খুব ধীর লয়ে, আস্তে আস্তে কথা বলতে হবে!
এটা হলে, ওটা করা যাবে না। ওটা হলে সেটা করা যাবে না! ইত্যাদি আরও কতো কি!
এমনকি বিদেশে এসেও আমাদের এইসব মন মানসিকতা যাচ্ছে না। গত পরশু গিয়েছিলাম আমাদের এখানকার এক বাঙালি পরিবারের বাসায়। সেখানে গিয়ে জানতে পারলাম- এই শহরে নাকি এখন বাংলাদেশিদের মাঝে দুটো ভাগ হয়েছে।
এক ভাগ হচ্ছে- যারা টেবিল-চেয়ারে বসে কর্পোরেট জব করে। অর্থাৎ আমরা যাকে বলি “ভালো চাকরি।” আরেক ভাগ হচ্ছে- যারা হোটেল, রেস্তরাঁয় কাজ করে কিংবা ট্যাক্সি চালায় বা এই রকম কাজ করে।
তো, যারা কর্পোরেট জব করে; তারা নাকি অন্য দলের সাথে মিশে না! অন্যদের ছোট করে দেখে!
সব মিলিয়ে শ’দুয়েক বাংলাদেশি হবে; এর মাঝেও আবার এইসব!
অথচ এদের অনেকেই যখন এই শহরে পড়াশুনা করেছে; তখন হোটেল, রেস্তরাঁয় কাজ করেছে। এমনকি পড়াশুনা শেষ করার পরও অনেক দিন এমন কাজ করেছে। যেই না ভালো একটা চাকরি পেয়েছে; তখন অন্যদের আলাদা দৃষ্টিতে দেখছে!
ঠিক বুঝতে পারি না, ইউরোপে এসেও আমাদের এমন মানসিকতা যাচ্ছে না। নিজেরা একটা সময় যে চাকরি করতো; সে চাকরি করা মানুষদের এখন আর মানুষ মনে করছে না! তাহলে তো ওরা নিজদের পেশাটাকে বোধকরি এতদিন ঘৃণা করেছে!
কে আমাদের শিখিয়েছে- ভালো চাকরি করলে অন্যদের ছোট করে দেখতে হবে? তাদের সাথে মেশা যাবে না? একটা বিশাল ভাব নিয়ে থাকতে হবে?
বন্ধুত্ব কিংবা ব্যক্তিগত সম্পর্ক কি করে এভাবে গড়ে উঠে আমার ঠিক জানা নেই!
কেন আমরা ছোট্ট একটা জীবনে নিজেদের ইচ্ছে মতো যে কিছু করতে পারব না?
কারো কোন ক্ষতি না করে সীমার মাঝে থেকেও তো ছোট খাটো ইচ্ছে গুলো পূরণ করা যায়।
সাধারণ একটা টিকটক ভিডিও যদি কারো বানাতে ইচ্ছে করে; সে বানাক না। শিক্ষক হয়েছে বলে কি এই সাধারণ ইচ্ছে টুকু সে পূরণ করতে পারবে না? টিকটক তো দেশে নিষিদ্ধ হয়নি। কিংবা এই ভিডিও করে তো সে কারো ক্ষতি করছে না।
সব সময় সমাজ কি বলবে; অন্যরা কি বলবে; এইসব ভাবতে ভাবতে আমরা একটা আস্ত জীবনে পার করে দেই। শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ ইচ্ছাই আর পূরণ করতে পারি না।
সাধারণ বন্ধুত্বের সম্পর্কে কিংবা ব্যক্তিগত সম্পর্কে কেন আমাদের এতো কিছু ভাবতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যাকে আমি সব চাইতে কাছের বন্ধু মনে করতাম- তার বাবা ছিল সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার নামকরা সাংসদ। তিনি যে দলের হয়ে নির্বাচন করতেন; আমি সেই দলের রাজনৈতিক দর্শনে মোটেই বিশ্বাস করি না। কিন্তু এটি আমাদের বন্ধুত্বে কখনো প্রভাব ফেলেনি। কারন রাজনৈতিক দর্শন আর বন্ধুত্ব সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। আমার এই বন্ধু এখন আমেরিকায় থাকে। আমি থাকি ইউরোপে। হয়ত নিয়মিত যোগাযোগ হয় না। কিন্তু আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি- আমাদের মাঝে আত্মিক যোগাযোগ আছে। আমাদের বন্ধুত্বটা এতোটাই প্রবল।
আমার ক্লাসমেটদের মাঝে আমি যাকে ভয়ানক পছন্দ করতাম; সে ওই সময়ের ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র শাখার প্রেসিডেন্ট। যেই দলের রাজনৈতিক দর্শনে আমি বিশ্বাস করি না। কিন্তু তাই বলে তো তার প্রতি আমার ভালোবাসা উড়ে যায়নি। আমার তো ধারণা আমি ওকে এখনও ভয়ানক ভালোবাসি।
এই উদাহরণ গুলো দেয়ার কারন হচ্ছে- আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্ক কিংবা বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে কে, কোন পেশায় আছে; কার রাজনৈতিক দর্শন কি; এইসব ভাবার দরকার নেই।
তার সাথে কথা বলতে যদি ভালো লাগে; তার এপ্রোচ যদি আপনার ভালো লাগে কিংবা অন্য যে কোন কিছু; তাহলেই তো চলছে। যার যার দর্শন নিয়ে যে যার মতো থেকেও তো বন্ধুত্ব করা যায়।
যেমনটা বলছিলাম- আমি আজ ভিক্ষা করেছি। ১৭ বছর আগে যখন পড়াশুনা করতে ইউরোপে এসছিলাম- তখন আবিষ্কার করেছি এইসব দেশে মানুষজন গীটার বাজিয়ে, বাঁশি বাজিয়ে, ভায়োলিন বাজিয়ে কিংবা অন্য যে কোন কিছু করে ভিক্ষা করে।
তখন আমার মাঝে একটা প্রশ্ন এসছিল- আমি কি এই দেশে ভিক্ষা করার সামর্থ্য রাখি?
লেখাপড়া ছাড়া তো এই জীবনে আর কিছু শিখিনি। ইচ্ছাটা তখন থেকেই মাথায় ছিল।
আমি গীটার বাজাতে পারতাম আগে থেকেই। কিন্তু তেমন ভালো কিছু না। সেটা ভালো করে শিখেছি। সঙ্গে আরও বেশ কয়েকটা বাদ্যযন্ত্র। বছর দুয়েক আগে প্রথম ভিক্ষা করেছিলাম এখানকার রাস্তায় বসে।
আমি বাংলাদেশ থেকে এসছি। স্বাভাবিক ভাবে সংস্কার গুলো আমার মাঝেও প্রবল। বার বার ভাবছিলাম পরিচিত কেউ যদি দেখে ফেলে- তাহলে কি ভাববে! শিক্ষক হয়ে ভিক্ষা করছে। ছিঃ … এটা আমার স্রেফ একটা ছোট ইচ্ছা। সেটা পূরণ করতেও কতো কি চিন্তা করতে হচ্ছে।
অথচ আমার পিএইচডি থিসিসের সুপারভাইজার ইংরেজ এই ভদ্রমহিলার সঙ্গে মাস দুয়েক আগে কথা হচ্ছিলো; কথা প্রসঙ্গে তিনি আমাকে বলছিলেনআমিনুল, আমার কিছু ভালো লাগছে না। আমি মনে হয় বিষণ্ণতায় ভুগছি। আমার মনে হয় একাডেমীক ব্রেক দরকার।
হাঁ, তুমি কিছু দিনের ছুটি নিতে পারো।
ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটির এই অধ্যাপক এরপর আমাকে বললেন
-আমি ভাবছি ছুটি নিয়ে একটা কুকিং স্কুলে ভর্তি হবো।
আমি প্রশ্ন করলামকুকিং শিখে কি করবে?ভাবছি একটা কুকিং স্কুল দেব কিংবা বেকারি দেব।
আমি এরপর খানিক চুপ থেকে বললামএই কাজ যদি আমি করতাম; আমাদের দেশের কিংবা সমাজের মানুষজনের কথা বাদই দিলাম; আমার পরিবারের লোকজন এবং আত্মীয়স্বজন বলবে- আমার বোধকয় মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে কিংবা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে!
আপনাদের জানিয়ে রাখি ইংল্যান্ডের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক এই মুহূর্তে মনের আনন্দে কুকিং শিখছেন এবং নিয়ম করে নানান সব রান্নার ভিডিও আপলোড করছেন তার ফেসবুকে।
আর আমাদের সমাজের মানুষ গুলো কেবল আমাদের ইচ্ছা গুলোকে টেনে ধরে। ছোট খাটো যে ইচ্ছা গুলো পূরণ করা যায়; সে গুলোও আমরা এক জীবনে পূরণ করতে পারি না স্রেফ মানুষ কি বলবে এই ভেবে!
গতকাল পত্রিকায় পড়লাম এক হিন্দু ভদ্রলোক মারা গিয়েছেন করোনায়। তার শেষকৃত্য করতে কেউ এগিয়ে আসেনি। তার বউ পুরো রাত শ্মশানে মৃত দেহ পাহারা দিয়েছে। এমনকি শ্মশানের মানুষজনও এগিয়ে আসেনি। শেষমেশ কিছু মুসলিম মানুষজন এসে তার শেষকৃত্য করেছে।
কোথায় ছিল তখন সমাজ? এটা তো সেই সমাজ, সেই পরিবার ব্যবস্থা, যা নিয়ে আমরা খুব গর্ব করি।
আজই পড়লাম আফসার উদ্দিন মারা গিয়েছেন। মৃত্যুকালেও পাশে ছিল না কোন স্বজন। অসুস্থ হয়ে চার দিন বাসার বারান্দায় পড়েছিলেন স্বজনহীন রাজশাহীর এই আফসার। আশপাশের প্রতিবেশী কেউ এগিয়ে আসেনি তাকে সাহায্য করতে। করোনার ভয়ে সবাই দূরে থেকেছে। শেষমেশ চারদিন আগে প্রথম আলো পত্রিকায় তাকে নিয়ে সংবাদ করার পর জেলা প্রশাসন এগিয়ে এসছিল। কিন্তু তাকে মরতেই হয়েছে করোনায়। পত্রিকায় সংবাদ না হলে হয়ত ওভাবেই বারান্দায় মরে পড়ে থাকতেন।
কোথায় ছিল তখন সমাজ? এই সমাজ নিয়েই না আমাদের অনেক গর্ব?
আমার ভিক্ষার কথা বলছিলাম।
আজ এখানকার ওল্ড টাউন; যেটা কিনা ইউনেস্কোর হ্যরিটেজ; এখানে পৃথিবীর নানান দেশ থেকে মানুষ আসে ঘুরতে। আজ প্রায় ঘণ্টা খানেক বসে গীটার বাজিয়ে ভিক্ষা করেছি। ভিক্ষার অভিজ্ঞতা নিয়ে পরে এক সময় লিখবো।
চলে আসার সময় পাশের ফুলের দোকান গুলোর সামনে দিয়ে হাঁটছি আমি আর আমার সঙ্গী; হঠাৎ দেখি সাদা চামড়া, সোনালী চুল এবং নীল চোখের একটা মাঝবয়েসী ভদ্রলোক হাতে বেশ বড় একটা ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে লাঠিতে ভর করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। মাত্রই কিনেছে বোধকরি ফুলের তোড়াটা। আমার মাথায় হঠাৎ একটা প্রশ্ন এসে হাজির হয়েছে। এখানে সাধারণত অপরিচত মানুষজনের সাথে কেউ কথা বলে না। এরপরও আমার খুব প্রশ্নটা করতে ইচ্ছে হলো। তাই সামনে গিয়ে ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলামফুল কিনলে বুঝি?
হ্যাঁ।
কার জন্য কিনেছ?
আমার প্রিয়জনের জন্য। আজ আমাদের দুজনের ভালোবাসা দিবস।
কিন্তু তোমার তো হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। অন্য কাউকে দিয়ে কিনিয়ে নিতে। কিংবা অন-লাইনেও তো অর্ডার করতে পারতে।
হ্যাঁ, আমার হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু আমার মনে যে বড্ড আনন্দ হচ্ছে।
তার উত্তর শুনে আমি চকে উঠেছি। পাশে আমার প্রয়োজন ছিল। তাকে বললামএটাই জীবন। এটাই ভালোবাসা। কি চমৎকার অনুভূতি।
আমার প্রিয়জন তার স্বভাবসুলভ ভাবে বলেছেআরে ধ্যাত; এইসব আবার কি! তুমি একটা পাগল মানুষ। গিয়ে জিজ্ঞেস করেছ আরেক পাগলকে।
আপনাদের জানিয়ে রাখি, আমার এবং আমার সঙ্গী প্রিয়জন; আমাদের দুজনের মাঝে কোন কিছুতে মিল নেই। তার রাজনৈতিক দর্শন এবং আমার দর্শন সম্পূর্ণ ভিন্ন। তার জীবন দর্শন এবং আমার দর্শন সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমরা দিনের বেশিরভাগ সময় ঝগড়া করে কাটাই। সেটাও ভয়ানক ঝগড়া। কিন্তু কোথায় যেন একটা মিল আছে আমাদের।
তাই দিন শেষে আমরা নিজেদের এক সাথে আবিষ্কার করি। আমরা আমাদের মনের কথা শুনেছি। শেষমেশ তাকে বললাম
তাই ছোট খাটো ইচ্ছে গুলো পূরণ করুন। সমাজ কি বলবে, মানুষ কি বলবে, এটা ভেবে যদি ছোট খাটো ইচ্ছে গুলো পূরণ না করেন; তাহলে ভুল করছেন।
সমাজ আপনার বিপদে এগিয়ে আসবে না। সমাজের মানুষরা আপনার প্রয়জনের সময় ফিরেও তাকাবে না। আফসার উদ্দিনকে চারিদন বারান্দায় পড়ে থেকে মরতে হয়েছে। কেউ এগিয়ে আসেনি। হিন্দু ওই ভদ্রলোকের শেষকৃত্য করতে এমনকি শ্মশানের মানুষজনও এগিয়ে আসেনি!
তাই কারো ক্ষতি না করে, নিজের যা করতে ইচ্ছে করে; করে বেড়ান। কে কি ভাবলো; এটা ভেবে ভেবে একটা আস্ত জীবন পার করে দেয়ার কোন মানেই হয় না।