যৌতুক না দিতে পারায় স্বামীর বাড়ি যাওয়া হলো না

মেয়েটির অপরাধ তার বাবা গরিব, বিয়ের দিন যৌতুকের টাকা পুরোটাই বুঝিয়ে দিতে পারেননি নাই। ২ লক্ষ টাকা দেওয়ার পরেও অতিরিক্ত আরো ৩ লক্ষ টাকা বরের বাবাকে দিতে পারেনি বলেই বিয়ের দিন বরপক্ষ আসেনি।

গত শুক্রবার থেকে আজ পর্যন্ত অপেক্ষায় আছেন লালমনিরহাটের পাটগ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে হাবিবা আক্তার সুমি (২০)।

সুমির দরিদ্র বাবা চাহিদামতো যৌতুক দিতে পারেননি। তাই স্বামীর বাড়ি যাওয়া হলো না তাঁর। গত শুক্রবার (১১ জুন) এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার কুচলিবাড়ি ইউনিয়নের ললিতারহাটে গ্রামে।

গত ৯ মাস আগে ভালোবেসে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন তাঁরা। দরিদ্র পরিবারের মেয়ে হওয়ায় ধনাঢ্য পরিবারের ছেলেকে ভালোবাসার বিয়ে মেনে নেয়নি ছেলের বাবা- মা। তাই মেয়ের বাড়িতেই দীর্ঘ ৮ মাস ধরে সংসার। চলতি বছরের ২০ মে ছেলে নিজ বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে ওঠে। কিন্তু ছেলের যৌতুক লোভী পিতা ও পরিবারের কথায় স্ত্রীকে ছেড়ে পালিয়ে যায় সে । মারপিট, নির্যাতন করে বের করে দেওয়া হয় তরুণীকে। উপায় না পেয়ে ছেলের বাড়ির বারান্দায় বৃষ্টিতে ভিজে সারাদিন পড়ে থাকে দরিদ্র পরিবারের মেয়ে হাবিবা আক্তার সুমি। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে এলাকাবাসীর সালিস বৈঠকে ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে ছেলের পরিবার। বিয়ের দিন ধার্য হয় ১১ জুন শুক্রবার। মেয়ের সুখের কথা ভেবে বসতভিটার ৭ শতাংশ জমি বিক্রি করে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে ছেলের বাবার হাতে দুই লাখ টাকা তুলে দেন। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে দিতে পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনকে দাওয়াত দেন। শুক্রবার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। কিন্তু ছেলের বাবার দাবি করা পুরো টাকা না পাওয়ায় কনেকে নিতে আসেনি বরপক্ষের কেউ।

জানা গেছে, দরিদ্র পিতা হাবিবুর রহমানের মেয়ে হাবিবা আক্তার সুমির (২০) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেন একই গ্রামের তোবারক হোসেন ওরফে নাড়িয়ার তৃতীয় ছেলে মহাসিন আলী (২৪)। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পালিয়ে বিয়ে করেন তারা। পরে ৫ লাখ টাকা দিলে মেয়েকে মেনে নেওয়ার প্রস্তাব দেয় বরের পরিবার। কনের পরিবার এতো টাকা দিতে সমর্থ না হওয়ায় কনেকে নিয়ে যায়নি বরপক্ষ। বর্তমানে দিশেহারা হয়ে বিভিন্ন জনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন হাবিবুর। এই ঘটনার পর গত শনিবার (১২ জুন) পাটগ্রাম থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন হাবিবুর রহমান।

হাবিবা আক্তার সুমি বলেন, ছেলের পরিবার অনেক টাকা যৌতুক দাবি করে। সালিসি বৈঠকের গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ ২ লাখ টাকা দিতে বলে।আমার বাবা জমি বিক্রি করে টাকা দেয় তাদেরকে (বরপক্ষ)। তারা টাকা নিয়ে আমার বিয়ের জন্য কোনো শাড়ি, চুরি বা একটি নাকফুলও কিনেনি। পরে আরো ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। আমার বাবা দিতে না পারায় বর মহাসিন ও তার পরিবার আমাকে নিতে আসেনি। এ অবস্থায় আমার জীবন নিয়ে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।

মেয়ের বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, কতটা পাপ করেছি আমি যার প্রায়শ্চিত আমার মেয়ের ঘাড়ে পড়ল। আমি গরিব মানুষ, শুধু মেয়ের সুখের কথা ভেবে বাড়িভিটা বিক্রি করে যৌতুক বাবদ বিচারকদের কথায় ছেলের পরিবারকে ২ লক্ষ দিয়েছিলাম। শুক্রবার বিয়ে উঠিয়ে নেওয়ার দিনে আমি আমার আত্মীয়স্বজনদের দাওয়াত করেছিলাম। অনেক মানুষ দাওয়াত খেয়েছে। কিন্তু যাদের জন্য এতকিছু, তারাই আরো অতিরিক্ত ৩ লক্ষ যৌতুকের দাবি তুলে বরযাত্রি আসেনি । এলাকায় আমার মান সম্মান বলতে কিচ্ছু থাকলোনা। খুব টেনশনে আছি, কখন মরবো জানিনা।

কুচলিবাড়ি ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল খালেক বলেন, আমরা খুব চেষ্টা করেছি। কিন্তু তোবারক হোসেন খুব ত্যাড়া লোক। পরবর্তীতে যৌতুকের টাকার জন্য মেয়েটিকে ঘরে তুলেনি।
বরের পিতা তোবারক হোসেন বলেন, ‘মেয়েকে আনতে ৪ জনকে পাঠাইছিলাম। আমি আনতে যাব না। বাড়িতেও উঠাবো না। টাকা পয়সার কোনো ঘটনা নাই।’

পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) হাফিজুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছিল। বরপক্ষ বর্তমানে কনেকে নিবে বলে আমাদেরকে জানিয়েছে।

Leave a Comment