কোরবানির পশু মোটাতাজা ও দোষ-ত্রুটি মুক্ত হওয়া উত্তম। রাসুল (সা.) স্বাস্থ্যবান পশু দিয়ে কোরবানি করতেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) যখন কোরবানি করতে চাইতেন তখন তিনি দুটি বড় মোটাতাজা, শিংওয়ালা, সুন্দর রঙের খাসিকৃত ভেড়া ক্রয় করতেন। (ইবনে মাজাহ ৩১১৩)
কোরবানির পশুর মধ্যে দোষ-ত্রুটি থাকলে কোরবানি দেওয়া যাবে না। নিম্নে তা বর্ণনা করা হলো –
১. দৃষ্টিশক্তি না থাকা। যে পশুর দুই চোখ বা এক চোখ পুরোপুরি অন্ধ, অথবা এক তৃতীয়াংশের বেশি নষ্ট হয়েছে এমন পশু দিয়ে কোরবানি করা যাবে না।
২. শ্রবণশক্তি না থাকা।
৩. অত্যন্ত দুর্বল ও জীর্ণ-শীর্ণ হওয়া। কোরবানির পশুর হাড়ের মগজ শুকিয়ে গেলে তা দিয়ে কোরবানির করা যাবে না। আর হাড়ের মগজ না শুকালে কোরবানি করা যাবে।
৪. এই পরিমাণ লেংড়া যে জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না। যে পশু এমন খোঁড়া যে তিন পায়ের ওপর ভর করে চলাচল করে, চতুর্থ পা মাটি স্পর্শ করে না কিংবা স্পর্শ করলেও তাতে ভর দিতে পারে না এমন পশু দিয়ে কোরবানি করা যাবে না। তবে জবাইয়ের সময় মাটিতে শোয়াতে গিয়ে পশুর পা ভেঙ্গে গেলে ওই পশু দিয়ে কোরবানি করা যাবে।
৫. লেজের বেশির ভাগ অংশ কাটা।
৬. জন্মগতভাবে কান না থাকা।
৭. কানের বেশির ভাগ কাটা। পশুর কানের এক-তৃতীয়াংশের বেশি কাটা থাকলে তা দিয়ে কোরবানি করা যাবে না।
৮. গোড়াসহ শিং উপড়ে যাওয়া।
৯. পাগল হওয়ার কারণে ঘাস-পানি ঠিকমতো না খাওয়া।
১০. বেশির ভাগ দাঁত না থাকা।
১১. রোগের কারণে স্তনের দুধ শুকিয়ে যাওয়া।
১২. ছাগলের দুটি দুধের যেকোনো একটি কাটা।
১৩. গরু বা মহিষের চারটি দুধের যেকোনো দুটি কাটা।
মোট কথা, কোরবানির পশু বড় ধরনের দোষত্রুটি থেকে মুক্ত হবে। হাদিসে এসেছে, জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.)-কে কোরবানির ক্ষেত্রে যেসব পশু পরিহার করা হয় এসব পশু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি বলেছেন, ‘চার ধরনের পশু, যা দিয়ে কোরবানি জায়েজ হবে না। অন্ধ—যার দৃষ্টিহীনতা সুস্পষ্ট, রোগাক্রান্ত—যার রোগের বিষয়টি সুস্পষ্ট, পঙ্গু—যার পঙ্গুত্ব সুস্পষ্ট ও আহত—যার কোনো অঙ্গ ভেঙে গেছে।’ (তিরমিজি, হাদিস নং : ১৪৯৭; নাসায়ি, হাদিস নং : ৪৩৭১)
হুজাইয়াহ বিন আদি (রহ.) বর্ণনা করেছেন, আলি (রা.) বলেছেন, ‘একটি গাভী সাতজনের পক্ষ থেকে কোরবানি করা যায়। আমি জিজ্ঞেস করি, গাভীর বাচ্চার বিধান কী হবে? তিনি বলেছেন, গাভীর সঙ্গে বাচ্চাও জবাই করবে। অতঃপর আমি খোঁড়া পশু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। তিনি বলেছেন, যদি খোঁড়া পশু কোরবানির স্থান পর্যন্ত হেঁটে যায় তাহলে কোরবানি করা যাবে। আমি শিংভাঙা পশু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেছেন, তা দিয়ে করতে কোনো সমস্যা নেই। মহানবী (সা.) আমাদেরকে কোরবানির পশুর চোখ ও কান ভালোভাবে যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। (তিরমিজি, হাদিস নং : ১৫০৩)
আলি (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘নবী করিম (সা.) আমাদেরকে কান কাটা ও শিংভাঙা পশু দিয়ে কোরবানি করতে নিষেধ করেছেন। আমি সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িবকে বিষয়টি বললাম। তিনি বললেন, তা হলো যে পশুর শিং অর্ধেক বা এর বেশি ভেঙে গেছে।’ (তিরমিজি, হাদিস নং : ১৪২৪)
আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন যে, ‘এক-তৃতীয়াংশের কম লেজ কাটা পশু দিয়ে কোরবানি করতে কোনো সমস্যা নেই।’ (বাইহাকি, হাদিস নং : ১৯৬৬৭)
অবশ্য পশুর মধ্যে এমন ত্রুটি আছে যা থাকলেও কোরবানি দেওয়া যাবে। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো –
১. পাগল জন্তু, তবে ঘাস-পানি ঠিকমতো খায়
২. লেজ বা কানের কিছু অংশ কাটা, তবে বেশির ভাগ অংশ আছে
৩. জন্মগতভাবে শিং নেই
৪. শিং আছে, তবে ভাঙা
৫. কান আছে, তবে ছোট
৬. পশুর একটি পা ভাঙা, তবে তিন পা দিয়ে সে চলতে পারে
৭. পশুর গায়ে চর্মরোগ
৮. কিছু দাঁত নেই, তবে বেশির ভাগ আছে। স্বভাবগত এক অণ্ডকোষবিশিষ্ট পশু
৯. পশু বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে বাচ্চা জন্মদানে অক্ষম
১০. পুরুষাঙ্গ কেটে যাওয়ার কারণে সঙ্গমে অক্ষম।
তবে উত্তম হচ্ছে ত্রুটিমুক্ত পশু দিয়ে কোরবানি দেওয়া, ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারা কোরবানি দেওয়া অনুচিত।