যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সময় রক্তপাত ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দায় নিজের কাঁধে নিয়ে তিনি বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে নতুন যুগের সূচনা ঘটবে, যেখানে সামরিক শক্তির ওপর নির্ভরতা কমে আসবে।
গত সোমবার মধ্যরাতে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ সেনারা কাবুল ত্যাগ করেন। এর ২৪ ঘণ্টায় মাথায় হোয়াইট হাউস থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন জো বাইডেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা পরিবর্তনের এটাই সময়। এ সিদ্ধান্ত শুধু আফগানিস্তান নিয়েই নয়, এটা অন্য দেশ পুনর্গঠনে বৃহৎ পরিসরে সামরিক অভিযান চালানোর যুগেরও সমাপ্তি।
আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত যথাযথ ছিল দাবি করে জো বাইডেন বলেন, এক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালেবানের হওয়া চুক্তির আওতায় পাঁচ হাজার তালেবান বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সেখানে তালেবানের শীর্ষস্থানীয় সামরিক কমান্ডাররাও ছিলেন। তাঁরাই আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিতে বড় ভূমিকা রেখেছেন।
ক্ষমতায় আসার পর তাঁর সামনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার তেমন সুযোগ ছিল না জানিয়ে বাইডেন বলেন, ‘হয় সর্বশেষ প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে আফগানিস্তান ছেড়ে আসতে হতো। নতুবা বলতে হতো যে আমরা আফগানিস্তান ছাড়ছি না। সে ক্ষেত্রে আরও লাখো সেনা পাঠানোর কথা বলে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হতো। আমি এ যুদ্ধ আর বাড়াতে চাইনি।’
বাইডেন এ ভাষণ দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই ফাঁস হয় তাঁর সঙ্গে আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির টেলিফোন কথোপকথনের রেকর্ড। দুই নেতার মধ্যে গত ২৩ জুলাই ওই কথোপকথন হয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ওই কথোপকথন থেকে বোঝা যায়, দুই নেতার কেউ টের পাননি যে আফগানিস্তানে সামরিক বিপর্যয় এত কাছে।
টেলিফোন আলাপে আশরাফ গনি আফগানিস্তানের সংকটময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা তুলে ধরতে পারলে তাঁকে সহায়তার প্রস্তাব দেন বাইডেন। সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আশরাফ গনিকে ক্ষমতাবান আফগানদের দলে ভেড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। আফগান বাহিনীর প্রশংসাও করতে শোনা যায় বাইডেনকে। তিনি বলেন, ‘৭০ থেকে ৮০ হাজার তালেবান যোদ্ধার বিপরীতে আপনার তিন লাখ প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী রয়েছে।’
এদিকে কাতারে তালেবানের রাজনৈতিক দপ্তরের উপপ্রধান শের আব্বাস স্ট্যানেকজাই বিবিসি পশতুকে বলেছেন, আগামী দুই দিনের মধ্যেই তালেবান সরকার ঘোষণা হতে পারে। তিনি বলেন, গত দুই দশকে যাঁরা সরকারে ছিলেন, তাঁদের এ সরকারে নেওয়া হবে না। এই তালেবান নেতা বলেন, আফগানিস্তানে সরকারের নিম্ন পর্যায়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা কাজ করতে পারবেন। তবে মন্ত্রিসভা বা শীর্ষস্থানীয় পদে নারীরা না–ও থাকতে পারেন।