যতই সিসি ক্যামেরা লাগানো হোক, সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: জি এম কাদের

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেছেন, যতই সিসি ক্যামেরা লাগানো হোক, সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হবে না। গাইবান্ধা-৫ আসনের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ভোটের বুথে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছিল, কিন্তু সেগুলোর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাপার চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে এক যোগদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জি এম কাদের এসব কথা বলেন। মুন্সিগঞ্জ জেলার কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি আজ আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন।

 

 

জি এম কাদের বলেন, আসলে সুষ্ঠু নির্বাচনে সরকারের সদিচ্ছা নেই। কারণ, সরকার জানে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সরকার পার পাবে না। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আদায় করতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

দেশে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার কোনো পরিবেশ নেই উল্লেখ করে জাপার চেয়ারম্যান আরও বলেন, সরকার–সমর্থকেরা জোর করে ভোটকেন্দ্র দখল করছে, বিরোধী পক্ষ নির্বাচনী এজেন্টদের বের করে দিচ্ছে। জনগণকে সরাসরি নির্বাচনে ভোট দিতে দিচ্ছে না। এটা হলো বাস্তবতা। জি এম কাদের বলেন, বিএনপি যখন নির্বাচন বর্জন করল, তখন শুধু জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে—এমন বাস্তবতায় সরকার–সমর্থকেরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে জাতীয় পার্টি নেতা-কর্মীদের হুমকি ও হয়রানি শুরু করছে। এভাবেই সরকার–সমর্থকেরা জোর করে নির্বাচনে জিতছে।

জি এম কাদের বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ আর করোনার দোহাই দিয়ে অর্থনৈতিক মন্দার কথা বলা হয়। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, গণতন্ত্রহীনতার কারণে দেশে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে একটি শ্রেণি দিন দিন আরও ধনী হচ্ছে। তারা বিদেশে সম্পদের পাহাড় সৃষ্টি করেছে। আর একটি শ্রেণি প্রতিদিন আরও গরিব হচ্ছে। তারা তিন বেলা ঠিকমতো খেতে পারছে না।

বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, ‘রিজার্ভ সংকট হয়েছে, টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। ডলারের দাম বেড়ে গেছে। ডলার যেখানে ৮০ টাকা ছিল, এখন তা–ই ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। ডলারের অভাবের জন্য আমাদের কোনো এলসি বিদেশ নিচ্ছে না। এই ডলার–সংকটের কারণে এখন বিদ্যুৎ দিতে পারছে না। বিদ্যুতের ক্যাপাসিটি তৈরি করেছে ২০ হাজার মেগাওয়াট। আমাদের দরকার মাত্র ১৪ হাজার মেগাওয়াট। এখন উৎপাদন হচ্ছে ৯ হাজারের চেয়েও কম। বিদ্যুতৎ–বিভ্রাটের কারণে কৃষিকাজের জন্য মানুষ সেচ দিতে পারছে না এবং রিজার্ভের অভাবে বিদেশ থেকে সার কিনতে পারছে না। এ কারণে আগামী দিনগুলোয় ভয়াবহ রকমের খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে।’

জি এম কাদের বলেন, ‘একজন শ্রদ্ধেয় উপদেষ্টা কিছুদিন আগে হাসি হাসি মুখে বললেন যে আপনাদের ধৈর্য ধরতে হবে। কারণ, এখন বিদ্যুৎ দিতে পারছি না, তেল কিনতে পারছি না, আমরা গ্যাস কিনতে পারছি না। আমার প্রশ্ন হলো, কেন কিনতে পারছেন না? আপনাদের রিজার্ভের টাকা কোথায় গেল?’

জাপার চেয়ারম্যান বলেন, ‘জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন বলেছে, পৃথিবীতে ৪৪টি দেশ খাদ্যসংকটে পড়বে। এশিয়ার নয়টি এবং দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশ, যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ জন্যই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলছেন, খারাপ দিন আসছে, তাই সবাই খাদ্য উৎপাদন করুন। এ কথা তো সবাই জানে, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এমন পরামর্শ দরকার হয় না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন হচ্ছে, কেন তেল কিনতে পারছে না সরকার? রিজার্ভের টাকা কোথায় গেল?’

আজকের যোগদান অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, আলমগীর সিকদার লোটন, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু বক্তব্য দেন।

 

Leave a Comment

betvisa