মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধী ছিলেন হুইপ সামশুল হক

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যাঁরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সরাসরি বিরোধী ছিলেন জাতীয় সংসদের বর্তমান হুইপ ও চট্টগ্রামের পটিয়ার সংসদ সদস্য সামশুল হক তাঁদেরই একজন। বাংলাদেশকে অস্বীকারকারী সেই সামশুল হকের জাতীয় সংসদের মতো পবিত্র ও মহান জায়গায় প্রতিনিধিত্ব করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ সামশুল হকরা মুক্তিযুদ্ধই বিশ্বাস করেন না।

রবিবার (৬ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পটিয়ার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সামছুদ্দিন আহম্মদকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের উপদেষ্টা ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভাস্কর রাশা এসব কথা বলেন। প্রতিবাদ সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিরুল ইসলাম বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন, আইনবিষয়ক সম্পাদক এ জেড ইউ প্রিন্স ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ। মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে হুইপ সামশুল হককে সংসদ সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি ও গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনটি দাবি উপস্থাপন করা হয়। এগুলো হলো সামছুদ্দিন আহম্মদকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অপরাধে অবিলম্বে হুইপ সামশুল হক চৌধুরীকে দল থেকে বহিষ্কার ও গ্রেপ্তারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলমকে হত্যার হুমকিদাতা হুইপপুত্র শারুন হক চৌধুরীকে গ্রেপ্তার এবং সমগ্র দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ওপর হামলা, নির্যাতন ও হত্যা বন্ধ করার জন্য অবিলম্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন।

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের উপদেষ্টা ভাস্কর রাশা বলেন, ‘আজকে অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় নিয়ে আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি। তা হলো একজন মুক্তিযোদ্ধাকে উলঙ্গ করে

পেটাবেন বলে হুমকি দিয়েছেন পটিয়ার সংসদ সদস্য সামশুল হক। হুইপ সামশুল হককে বলতে চাই, মুক্তিযুদ্ধ না হলে আপনি তো সংসদ সদস্য হতে পারতেন না। মুক্তিযুদ্ধ না হলে আপনি তো পটিয়ায় থেকে ছড়ি ঘোরাতে পারতেন না। অথচ মুক্তিযোদ্ধাকেই আপনি অপমান করছেন। আমার মনে হয়, আপনার সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক থাকতে পারে। নয়তো বারবার কেন আপনি মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাকে প্রতিপক্ষ করছেন?’

ভাস্কর রাশা আরো বলেন, ‘বর্তমান সরকারের ভেতরে অনেক অনুপ্রবেশকারী আছে। আমার দেখা মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধী লোকদের মধ্যে একজন হলেন হুইপ সামশুল হক। আপনাকে বারবার দেখেছি মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ করতে। আপনি বারবার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। এই স্পর্ধা আপনি কোথা থেকে পাচ্ছেন?’

ভাস্কর রাশা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করা মানে পুরো মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করা। আর মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করা মানে হলো বঙ্গবন্ধুকে অপমান করা। মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করা মানে বাংলাদেশকে অস্বীকার করা। বাংলাদেশকে অস্বীকারকারী হুইপ সামশুল হকের তো ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই।’ তিনি হুইপ সামশুল হককে সংসদ সদস্যপদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান। তা না হলে অবিলম্বে ঢাকা থেকে পটিয়ার উদ্দেশে লং মার্চ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সামশুল হককে জানিয়ে রাখা দরকার মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে রাজাকারের ঠাঁই নাই। তাঁকে এটি জানানোর জন্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের বাংলাদেশজুড়ে যত কমিটি আছে, সব কমিটি দিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আমাদের এই আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে। নয়তো তাঁরা লাগামহীনভাবে মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ করবেন।’

আমিরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মধ্যে যেমন সূর্যসন্তানরা রয়েছেন, তেমনি আছে আবর্জনা ও উচ্ছিষ্ট। সামশুল হক চৌধুরী হচ্ছে এই আবর্জনা।’ সামশুল হক ও তাঁর ছেলে শারুন মিলে প্রধানমন্ত্রীর সব অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। আমিরুল ইসলাম বুলবুল আরো বলেন, ‘আমরা সামশুল হক চৌধুরীর কুশপুত্তলিকা ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করেছিলাম। এর মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছি এই সমাজে সামশুল হক চৌধুরীর মতো আবর্জনা থাকতে পারে না। এই আবর্জনাগুলোর স্থান কখনো জাতীয় সংসদে হতে পারে না। আমরা অতীতে তাঁকে প্রতীকীভাবে ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করেছিলাম। কিন্তু আগামীতে আমরা মুক্তিযুদ্ধের মঞ্চের নেতাকর্মীরা সামশুল হককে যেখানেই পাব সরাসরি ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করব।’

আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘হুইপ সামশুল হকের ছেলে নাজমুল করিম শারুন বিভিন্ন সময় সিনিয়র অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকে অপদস্থ করেছেন। কিন্তু তাঁর বিচার হয়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতারা এসব আর বরদাশত করবেন না। সামশুল হক মানবপাচার ও অর্থপাচারে জড়িত। এ ছাড়া বাংলাদেশে এমন কোনো দল নেই, যে দলে তিনি যোগ দেননি।’

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন বলেন, ‘হুইপ সামশুল হক ও তাঁর পরিবারের দুষ্কর্মের বিচার আগে করা হলে তাঁরা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সামছুদ্দিন আহম্মদকে পেটানোর হুমকি দিতে পারতেন না। সামশুল হক চৌধুরী সংসদ সদস্যপদ হারানোর মতো অপরাধ করেছেন। আমি তাঁকে আওয়ামী লীগ থেকেও বহিষ্কারের দাবি জানাই। কারণ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দল।’

আল মামুন আরো বলেন, সবাই জানে হুইপ একসময় জাতীয় পার্টি করতেন। এরপর বিএনপির রাজনীতি করেছেন। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকেন তিনি সেই দলের রাজনীতি করেন। এখন সুবিধা নিতে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। অথচ ভেতরে ভেতরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে তৎপরতা চালাচ্ছেন।

এ জেড ইউ প্রিন্স বলেন, বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতের পরে জিয়া সরকার দ্বারা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সামছুদ্দিন আহম্মদ। তাঁকে পেটানোর হুমকি দিয়েছেন হুইপ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে এমন ঘটনা অবিশ্বাস্য। তিনি আরো বলেন, সামশুল হক চৌধুরী, তাঁর ভাই মোহাম্মদ আলী নবাব এবং পুত্র শারুন পটিয়াসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে এক ধরনের দখলদারি কায়েম করেছেন। একজন ব্যাংক কর্মকর্তা মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে শারুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ করেছেন। একে ফরটিসেভেন অস্ত্র নিয়ে শারুন প্রকাশ্যে রাস্তায় নেমে প্রদর্শন করেছেন। একজন সংসদ সদস্যের পরিবার যেভাবে দস্যুতার সঙ্গে জড়িত, তা দেখে দেশের মানুষ হতভম্ব।

মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলকারীরা প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে নিয়ে হুইপ সামশুলের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে, বাংলার মাটিতে রাজাকার হুইপের ঠাঁই নাই বলে স্লোগান দেয়।

Leave a Comment

betvisa